|
|
|
|
|
|
কুবের উবাচ |
শতরূপা দাস (৩১) • স্বামী সুমন (৩৭) • শ্বশুর (৭৯)
গৃহবধূ • গৃহশিক্ষকতা করেন • স্বামী বেসরকারি সংস্থার কর্মী • একতলা বাড়ি, দোতলা করার ইচ্ছে
• ছোট গাড়ি
কিনতে চান • এক বছরের মধ্যেই সন্তানের পরিকল্পনা রয়েছে • লক্ষ্য, সচ্ছল ভবিষ্যৎ |
|
মাসে নিট আয় |
• শতরূপা
২,০০০ |
• সুমন
২৫,০০০ |
|
সম্পদ |
• সেভিংস অ্যাকাউন্ট
১৫,০০০ |
খরচ (মাসে) |
• সংসার চালাতে
১৮,০০০ |
• স্বাস্থ্য বিমা
৭৫০ (স্বামী-স্ত্রী, বিমা মূল্য
৬ লক্ষ) |
|
সঞ্চয় (মাসে) |
• পিএফ
১,০৩০ |
• এলআইসি মানি ব্যাক
৬৪৯ (২০২৪ পর্যন্ত) |
• সেভিংস অ্যাকাউন্ট
(সুমন)
১০,০০০
|
• সেভিংস অ্যাকাউন্ট
(শতরূপা) ২০,০০০. |
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
শুরুতেই
আমাদের সমস্ত পাঠককে নতুন বছরের অভিনন্দন জানাই। দেখতে দেখতে আরও একটা বছর কাটিয়ে দিলাম আমরা। এই এক বছরে সঞ্চয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। বিভিন্ন পেশার এবং আয়ের মানুষের প্রোফাইল নিয়ে কথা বলেছি। দেখিয়েছি পরিকল্পনা করে এগোলে লক্ষ্যে পৌঁছতে সমস্যা হয় না। কিন্তু আজ এমন এক জন গৃহবধূর প্রোফাইল নিয়ে আলোচনা করব, যিনি বাড়িতে থেকেই সংসারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। আবার পরিবারের জন্য লগ্নির কথাও ভাবেন।
সংসারের সব দিক সুষ্ঠু ভাবে চালাতে বাড়িতে স্ত্রী বা মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সঞ্চয়ের কথা উঠলে আলাদা করে তাঁদের কথা মনে রাখি না আমরা। অথচ দরকারের মুহূর্তে লক্ষ্মীর ঝাঁপি থেকে কী ভাবে যে তাঁরা টাকা বার করে দেন, তা মাথায় ঢোকে না। শতরূপা সে রকমই এক জন গৃহবধূ। নিজের সংসার সামলে বাড়িতে টিউশন দেন। কিন্তু তা থেকে তাঁর আয় খুবই সামান্য। বেশির ভাগটাই স্বামীর রোজগারের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু তা-ও আগামী দিনে সমস্যা হলে তা যাতে সামলানো যায়, সে জন্য তিনি পরিবারের আর্থিক পরিকল্পনা করতে চান, তা দেখে ভাল লাগল। আসুন চোখ রাখি তাঁর প্রোফাইলে। |
স্বল্প সঞ্চয় |
গৃহশিক্ষকতা থেকে শতরূপার মাসে ২,০০০ টাকা রোজগার হয়। পাশাপাশি, একটি স্থায়ী আমানত থেকে তিনি ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন, যা তাঁর সেভিংস অ্যাকাউন্টে রয়েছে।
আমার মতে, আপনি স্থায়ী আমানতের টাকা ফের সেখানেই রেখে দিন। পাশাপাশি, এখন থেকে যে-টাকা আপনি রোজগার করবেন, তার মধ্যে ১,০০০ টাকা রেকারিং ডিপজিটে রাখুন। বাকি ১,০০০ টাকা ডাইভারসিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে লগ্নি করুন সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি) পদ্ধতিতে। এতে যেমন আপনার মূলধন বাড়বে, তেমনই আগামী দিনে আপৎকালে সংসার খরচের দিকটাও সামলাতে পারবেন। তবে, এসআইপি করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নিজের প্রকল্প ঠিক করুন। |
লক্ষ্য ১: সন্তানের শিক্ষা ও বিয়ে |
আর এক বছর পর সন্তানের কথা ভাবছেন শতরূপা ও সুমন। সে ক্ষেত্রে তার পড়াশোনার বড় খরচ আসবে সন্তানের বয়স ১৮ হলে। অর্থাৎ এ জন্য টাকা জমাতে ১৯ বছর সময়ে পাচ্ছেন তাঁরা। ওই সময়ে সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁদের প্রয়োজন হবে ৩০.২৫ লক্ষ টাকা (৬% মূল্যবৃদ্ধি ধরে)।
অন্য দিকে, যদি ধরি ২৭ বছরে সন্তানের বিয়ের পরিকল্পনা করবেন, সে ক্ষেত্রে হাতে সময় থাকছে ২৮ বছর। এ জন্য তখন তাঁদের লাগবে ২৫.৫৫ লক্ষ টাকা (৬% মূল্যবৃদ্ধি ধরে)।
অর্থাৎ এই দুই ক্ষেত্রে মোট প্রয়োজন ৫৫.৮০ লক্ষ টাকা। টাকার অঙ্ক বড় মনে হলেও, আসুন দেখে নিই কী ভাবে তার কাছাকাছি যাওয়া যায়।
সুমনের সঞ্চয়ের বেশির ভাগটাই থাকে সেভিংস অ্যকাউন্টে। সবে মাত্র নিজেদের বাড়ি তৈরি শেষ করেছেন তাঁরা। ফলে আপাতত সেখানে বেশি টাকা নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকেই তাঁকে বিভিন্ন ডাইভারসিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে এসআইপি-র মাধ্যমে লগ্নি করতে হবে (পাশের তালিকা দেখুন)।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, এ ভাবে তাঁরা নিজেদের লক্ষ্যের প্রায় কাছে পৌঁছতে পারবেন। যা কম পড়বে, তার জন্য আগামী দিনে বেতন বাড়লে লগ্নির অঙ্কও বাড়াতে হবে। |
লক্ষ্য ২: বয়স বাড়লে ভাবনা |
• শতরূপা জানিয়েছেন, এলআইসি-র মানি ব্যাক পলিসির টাকা ফের বিমার প্রিমিয়াম দিতেই চলে যায়। এখন তা করলেও, মেয়াদ শেষে যে-টাকা হাতে আসবে, তা কিন্তু ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানতে রাখতে হবে অবসর জীবনের জন্য।
• পিএফ-এর টাকাও আবসরের সময়ে কাজে লাগবে।
• শতরূপাদের এখনই একটা পিপিএফ অ্যাকাউন্ট চালু করা উচিত। সেখানে মাসে কমপক্ষে ১,০০০-১,২০০ টাকা করে রাখতে হবে।
বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই খাতে সঞ্চয়ও বাড়াতে হবে। সুমনের অবসরের ঠিক আগে এই পুরো লগ্নির টাকা তুলে নিয়ে একটি ভাল অ্যানুইটি প্রকল্পে রাখতে হবে। যা থেকে প্রতি মাসে পেনশন মিলবে। |
লক্ষ্য ৩: স্বাস্থ্য ও জীবনবিমা |
• শতরূপা ও সুমনের চিকিৎসা বিমার অঙ্ক যথেষ্টই ভাল। সন্তান হওয়ার পর তাকেও এই বিমার আওতায় আনতে হবে। তবে আগামী দিনে চিকিৎসার খরচ বাড়বে ধরে নিয়ে সেই কভারেজ বাড়ানোর কথা ভাবতে পারেন। আপাতত তার প্রয়োজন নেই।
•জীবন বিমার ক্ষেত্রে কিন্তু সুমনের একটা টার্ম পলিসি করিয়ে রাখলে ভাল করবেন। কারণ তাঁর জীবন বিমার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৪ সালে। যখন সুমনের বয়স হবে ৪৮। অর্থাৎ তার পরেও অনেকটা জীবন পড়ে থাকছে। সে জন্যই এখন থেকে একটা টার্ম পলিসি করিয়ে রাখা উচিত। |
লক্ষ্য ৪: বাড়ি ও গাড়ি |
শতরূপাদের সবেমাত্র এক তলা বাড়ি তৈরি হয়েছে। যার ঋণ এখনও তাঁর শ্বশুর শোধ করছেন। আপাতত তাঁদের হাতে বাড়িটি দোতলা করা অথবা গাড়ি কেনার মতো টাকা নেই। যে-কারণে এখন এই দুই কাজে হাত দিতে আমি বারণই করব। তবে ভবিষ্যতে সুমনের বেতন বাড়বে। পাশাপাশি, এখনকার ঋণ শোধ হয়ে যাওয়ার পরেও সংসারে টাকা জমবে। তখন গাড়ি কেনার কথা ভেবে দেখতে পারেন।
বেশির ভাগ সময়েই দেখা যায়, সংসার খরচের হিসাব রাখলেও, সাধারণ ভাবে সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করায় গুরুত্ব পান না অনেক গৃহবধূ। স্ত্রী চাকরি করলেও, এর খুব একটা ব্যতিক্রম দেখা যায় না। অর্থাৎ পরিবারের লগ্নি পরিকল্পনায় মহিলারা কিছুটা ব্রাত্য হয়েই থাকেন।
কিন্তু আমি বলব সংসার সামলালেও, নিজের পরিবারের লগ্নি পরিকল্পনা এবং সঞ্চয়ের কাজে তাঁদের নিজে থেকেই অংশ নেওয়া উচিত। এতে বিভিন্ন সময়ে তাঁদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। পাশাপাশি, নিজের উপর আত্মবিশ্বাসও তৈরি হবে। শতরূপাও এখন থেকেই এই পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী। সেই উৎসাহ আগামী দিনে বজায় থাকবে বলেই আমার আশা। |
সন্তানের জন্য সঞ্চয় |
এসআইপি (টাকা) |
মেয়াদ (বছর) |
প্রাপ্য টাকা |
৩,০০০ |
১৯ |
২৬,২৫,৯৭৬ |
১,০০০ |
২৮ |
২৭,৫৮,৫৮৪ |
মোট |
|
৫৩,৮৪,৫৬০* |
*১২% রিটার্ন ধরে |
|
(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত) |
|
|
|
|
|