উত্তরবঙ্গের নাটকের শহর বালুরঘাটে নাটকের সূত্রেই মিলল দক্ষিণ ভারতের যক্ষ গান এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের খন গান। গিরীশ কারনাডের হয়বদন নাটকটি স্থানীয় ছেলেমেয়েদের দিয়েই করাতে গিয়ে নির্দেশক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় ও নাট্য ব্যক্তিত্ত্ব অর্পিতা ঘোষ এক নতুন পথই খুলে দিলেন।
দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডিতে খন গানের মতো ও হালুয়া-হালুয়ানির মতো লোকগানকেও ব্যবহার করেছেন তাঁরা। পরীক্ষামূলক ভাবে স্থানীয় ছেলেমেয়েদের নিয়ে নাটকটি তৈরি হয়েছে গত দু’মাসের চেষ্টায়। নাটকটি নাট্যমেলায় ৩ জানুয়ারি কলকাতার রবীন্দ্রসদনে প্রথম মঞ্চস্থ হতে চলেছে। নির্দেশক দেবেশবাবু বলেন, “জেলায় এই ধরনের কাজ প্রথম। নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা দুরন্ত অভিনয় করেছেন। নাটকটিতে দিনাজপুরের নিজস্ব সম্পদ খন গানকে ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি মঞ্চসজ্জায় ব্যবহার হয়েছে কুশমন্ডির মহিষবাথানের বাঁশের কাজ ও মোখাশিল্পকেও।”
যক্ষ হল দক্ষিণ ভারতের লোকগানের একটি ধরন। দক্ষিণ দিনাজপুরের খন গানও লোকনাট্যের একটি ধারা। যক্ষ গানের যেমন আঙ্গিক রয়েছে, খনের তেমনি নির্দিষ্ট পালা আছে। লোকনাট্য হয়। গানভিত্তিক গিরীশ কারনাডের লেখা হয়বদন, অর্থাত ঘোড়ামুখো নাটকের অনুকরণে দেবেশ চট্টোপাধ্যায় যক্ষগানের ন্যায় খন গান ব্যবহার করেছেন। মানুষের দেহ মুখটা ঘোড়ার মত গলার স্বর মানুষের এইরকম একটি চরিত্রের খাতিরে কুশমন্ডির বাঁশের তৈরি মোখাশিল্পকে ব্যবহার করেছেন দেবেশ। অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতা প্রাপ্তির গল্প হয়বদন। |
হয়বদনের বাংলা অনুবাদ করেছেন শঙ্খ ঘোষ। নাটকটি একটি ত্রিকোণ প্রেমের গল্প। অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার গল্প।
দেবেশবাবু জানান, গিরীশ কারনাডের নাটকে যক্ষ গান ব্যবহার হয়েছে, যা কি না অনেকটা দক্ষিণ দিনাজপুরের খন গানের সঙ্গে মিলে যায়। তাই রাজ্যের অন্য জেলার বদলে কেন দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডিতে এসে তাঁরা বাঁধা পড়লেন, তার প্রেক্ষাপট জানা গেল। দেবেশবাবু অন্তত পাঁচ বার কুশমণ্ডিতে এসে নাটকের চূড়ান্ত রূপ দিয়েছেন। তাঁকে স্থানীয় ভাবে সাহায্য করেছেন সুনির্মলজ্যোতি বিশ্বাস। সুনির্মলজ্যোতিবাবু বলেন, “এটি জেলার নাটকের গৌরবময় ঐতিহ্যকে ফিরে দেখার প্রয়াস। ভবিষ্যতেও এই প্রয়াস জারি থাকবে। নির্দেশক দেবেশবাবুর কথায়, “দিনাজপুরের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। সেটা নিয়েই স্থানীয় শিল্পীরা কাজ করে নজির তৈরি করতে পারবেন।”
দক্ষিণ দিনাজপুর এবং উত্তর দিনাজপুরের ৩৮ জন কলাকুশলীকে বেছে নিয়ে আবাসিক তালিম হয়েছে কুশমন্ডি কমিউনিটি হলে। হয়েছে স্টেজ রিহার্সালও। প্রত্যেককে মাসে সাম্মানিক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। দেবেশবাবু বলেন, “শুধু নাটক নয়, অভিনয়ের মাধ্যমে রুজিরুটির ব্যবস্থার লক্ষে আমরা এগিয়েছি।”
নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এই নাটকে সুযোগ দিয়েছেন দেবেশবাবু। নায়কের ভূমিকায় কুশমন্ডির যুবক সৌমেন পাল কিংবা পুতুল চরিত্রে শৌর্যশেখর ঘোষ, গায়েনের চরিত্রে অম্বরীশ সরকারদের অভিজ্ঞতা এককথায় দারুন। তাঁরা জানান, খন ফর্মাট মিলিয়ে নাটকটি একেবারে নতুন ধরনের। দেবেশবাবুর আগে এমন করে আর কেউ ভাবেননি। ওঁর নির্দেশনায় দারুণ কাজ হয়েছে। মনেই হয়নি এই প্রথম নাটকে অভিনয় করছি।
কুশমন্ডির নাট্যপ্রেমী সৌরভ রায় বলেন, “এই নাটকে ৩৮ জন অভিনেতার মধ্যে দু’জন বাদে সকলেই নতুন ছেলেমেয়ে। দিনাজপুরের নিজস্ব লোকগান ব্যবহার করে নাটকের এই নতুনভাবে পথচলা হয়তো শুরু হয়ে গেল।” |