সোনালি রঙের ফ্রেমটা দেখে বেশ মনে ধরেছিল তাঁর। ছবি বলতে তো একটা নাম না জানা মুখ। শুধু ফ্রেমের জন্যই গ্যাঁটের ৪০০ পাউন্ড খসিয়ে এক সময় চেশায়ারের একটা দুষ্প্রাপ্য পুরনো জিনিসের দোকান থেকে ছবিটা কিনে ফেলেছিলেন ফাদার জেমস ম্যাকলিওড। সম্প্রতি তা খতিয়ে দেখতেই বিশেষজ্ঞদের চক্ষু চড়কগাছ! ছবিটির বয়স প্রায় চারশো। ১৬৩৪ সালের ভ্যান ডাইকের ‘মাস্টারপিস’। মূল্য কম করে ৪ লক্ষ পাউন্ড।
|
ভ্যান ডাইক |
দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের নানা পুরনো জিনিসের প্রদর্শনী নিয়ে একটি টিভি অনুষ্ঠান ব্রিটেনে বেশ জনপ্রিয়। সেই সূত্র ধরেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা ফিওনা ব্রুসের মুখচেনা ফাদারের। এক দিন সাধ করে কেনা ছবিটা তাঁর কাছেই নিয়ে যান ফাদার। ডার্বিশায়ারের গির্জার দেওয়ালে এত দিন ঝুলছিল সেটি। ফাদারই টানিয়ে ছিলেন।
কিন্তু কিছু দিন আগেই ঘটে যায় এক বিপত্তি। দড়ি ছিড়ে হুক থেকে ভেঙে পড়ে ছবিটি। নীচে রাখা ছিল একটি সিডি প্লেয়ার। ছবির ঘায়ে যন্ত্র সে দিনই অকেজো হয়ে পড়ে। আর তার পরই সম্ভবত ছবিটির ‘মূল্যায়ন’ করতে ফিওনার কাছে যান ফাদার ম্যাকলিওড।
সম্প্রতি অ্যান্টনি ভ্যান ডাইকের ছবি নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করেছিলেন ফিওনা। ভ্যান ডাইক মূলত কোর্ট পেন্টিং-এর জন্য খ্যাত। কোর্ট পেন্টিং বলতে বোঝায়, রাজপরিবার বা বিখ্যাত কোনও সংগঠনের সদস্যদের রং-তুলিতে এক ফ্রেমে বন্দি করা। ভ্যান ডাইকের আঁকা ছবির মধ্যে জনপ্রিয় সপরিবার প্রথম চার্লস। ফাদারের আনা ছবিটি দেখে ফিওনার মনে সন্দেহ জাগে, কোনও ভাবে এটি ভ্যান ডাইকের নয় তো! যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। এক বিশেষজ্ঞের কাছে ছুটে যান ফিওনা। আর তার পরই প্রকাশ্যে এল সত্য।
ফিওনার কথায়, “সকলেই স্বপ্ন দেখে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা একটা মাস্টারপিস খুঁজে বার করব। আমার এটা ভেবেই দারুণ আনন্দ হচ্ছে, অনুমানটা কাজে দিয়েছে। ভ্যান ডাইকের আসল ছবি খুঁজে পেয়েছি অসাধারণ অনুভূতি!” ফিওনার হাত ধরে ছবিটি নিয়ে তদন্ত করতে নেমেছিলেন শিল্প বিশেষজ্ঞ ফিলিপ মোল্ড। তিনিই জানান, ছবির শিল্পী ভ্যান ডাইক। তার পর সেটি পাঠানো হয় সংরক্ষণে। খাতায় কলমে ঘোষণাও করা হয় ছবিটি আসল। ১৬৩৪ সালে ব্রাসেলসের কোনও ম্যাজিস্ট্রেটের মুখ এঁকেছিলেন ভ্যান ডাইক। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও বড় ছবির একটি অংশমাত্র ওই মুখটি। মূল ছবিটি ১৬৯৫ সালে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ছবির ওই ছোট অংশটি বেঁচে গিয়েছিল। আর কোনও ভাবে তা চলে আসে চেশায়ারের ন্যান্টউইচের পুরনো জিনিসের দোকানটিতে। যেখানে প্রথম তার দেখা পেয়েছিলেন ফাদার ম্যাকলিওড।
ছবিটি অবশ্য নিজের কাছে আর রাখতে চান না ফাদার। গবেষকদের মতে, ও ছবির মূল্য কম করে ৪ লক্ষ পাউন্ড। ফাদার জানিয়েছেন, বিক্রি করে যে অর্থ মিলবে, তা দিয়ে গির্জার জন্য নতুন ঘণ্টা কিনবেন তিনি। ফিওনা অবশ্য তাঁর আবিষ্কারেই দারুণ উচ্ছ্বসিত। জানালেন, তাঁর অনুষ্ঠানে ছবিটি দেখানো হবে। সে অনুষ্ঠানের ৩৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এত বড় আবিষ্কার। এর আগে পথের ধারে একটি ছোট সেলে এক পাউন্ডে কেনা কাচের ফুলদানি ৩২,৪৫০ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছিল ফিওনার অনুষ্ঠানের সৌজন্যে। জানা গিয়েছিল সেটি ‘আর্ট নুভো’। সেই রেকর্ড ভেঙে তছনছ
করে দিল ভ্যান ডাইকে ছবি। ৪০০ থেকে এক লাফে চারের পরে পাঁচটা শূন্য! |