বাবা ও ছেলের যুগলবন্দি।
বাবার তোলা উঁচু বল ছেলের মাথা ছুঁয়ে যখন গোলে ঢুকে যায়, তখন মাঠের দর্শক চিৎকার করে বলে, “বাপ কা বেটা।” আবার যদি কখনও ছেলে গোলের সুযোগ নষ্ট করে তাহলে সেই দর্শকরাই চিৎকার করে, “তোকে দিয়ে হবে না, বলটা তোর বাবাকে পাস কর।”
এই মরসুমে কালনা মহকুমা ফুটবল লিগে শ্যামগঞ্জ জুনিয়র দলের রক্ষণ ভাগে নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন পাঁচুগোপাল ঘোষ ও সুদীপ্ত ঘোষ। সম্পর্কে বাবা ও ছেলে। বছর আটচল্লিশের পাঁচুগোপালবাবু মহকুমা লিগে খেলছেন প্রায় ৩৬ বছর ধরে। অপর দিকে ছেলে সুদীপ্তের এটাই প্রথম বছর।
কালনা মহকুমা ফুটবল লিগ প্রায় ৫০ বছরের পুরনো। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচুগোপালবাবুর মতো একটানা লিগ খেলে যাওয়ায় রেকর্ড মহকুমায় আর কারও নেই। পেটানো চেহারার পাঁচুগোপালকে এলাকার ফুটবলপ্রেমীরা একডাকে চেনে। এ বছর শ্যামগঞ্জ এলাকা থেকে মহকুমা লিগে দু’টি দল দেওয়া হয়েছিল। জুনিয়র দলটি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় পাঁচুগোপালবাবুকে। ছেলে ও ছেলের বয়সি ফুটবলারদের নিয়মিত তালিম দেন তিনি। এ বারের মহকুমা লিগে সুপার ফোরে উঠতে না পারলেও দলটি বেশ কয়েকটি ম্যাচে ভাল ফুটবল উপহার দেয় দর্শকদের।
পাঁচুবাবু জানান, ১৯৭৭ সালে শহরের অঙ্কুর ক্লাবের হয়ে মহকুমা লিগে প্রথম বল পায়ে নামেন তিনি। এর পর বালক সমিতি, উদয়ন ক্লাব, পিনাকী ক্লাব, রঙপাড়া স্পোটিংয়ের মতো বেশ কিছু ক্লাবে খেলেন তিনি। খেলার কারণে পড়াশোনা বেশি দূর করতে পারেননি। সংসার চালানোর জন্য দোকানে দোকানে মুদিখানার মালপত্র ফেরি করেন। কালনা শহরের বাসিন্দা তথা প্রাক্তন ফুটবলার অশোক রায় বলেন, “পাঁচুর খেলার প্রতি নিষ্ঠা নতুন প্রজন্মের ফুটবলারদের কাছে আদর্শ হতে পারে।” |
মাঠের মধ্যে অবশ্য ছেলের জন্য কোনও বিশেষ সহানুভূতি ছিল না তাঁর। প্রতিআক্রমণে উঠে সুদীপ্ত গোল করলে পাঁচুগোপালবাবু যেমন খুশি হয়ে ছেলের পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন তেমনই ছেলে কোনও ভুল ট্যাকল করলে তাঁকে মাঠের মধ্যেই বকেছেন।
এই বয়সে মাঠে নেমে খেলতে অসুবিধা হয় না? তিনি বলেন, “দমে টান পড়লে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাই।” শুধু মহকুমা লিগ নয়, জেলা লিগেও এক সময় নিয়মিত খেলেছেন তিনি। বছর পনেরো আগে জেলা স্তরের সিনিয়র ফুটবল লিগে তাঁর জোড়া গোলে বর্ধমানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কালনা। শুধু ফুটবলার হিসেবেই নয়, জেলার মাঠে তিনি রেফারি হিসেবেও বহু বার মাঠে নেমেছেন। এখনও প্রতি দিন সকালে মহকুমা শাসকের বাংলো লাগোয়া মাঠে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেন ফুটবলারদের। আরও দু’বছর নিয়মিত খেলার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। কালনা মহকুুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “ভাল ফুটবল খেলতে গেলে খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতার তুঙ্গে উঠতে হয়। এই বয়সেই পাঁচু নিজের শরীরটাকে তৈরি রাখতে পেরেছে। এটাই দৃষ্টান্ত।”
পরের মরসুমেও বাবা-ছেলের জুটি দেখতে চাইছেন কালনার ফুটবলপ্রেমীরা। |