চড়ুইভাতি করতে চান? পকেটে রেস্ত থাকলেই মুশকিল আসান!
বাজার করা থেকে জিনিসপত্র জোগাড়ের ঝক্কি নেই! শুধু গাড়ি করে ‘পিকনিক গ্রামে’ পৌঁছে গেলেই হল। চাল, ডাল, আনাজ থেকে চিকেন বা মটনসব পাবেন টাকা দিলেই। খরচ বেশি করলে মধুরেন সমাপয়েত! শেষ পাতে মিলবে চাটনি, মিষ্টিও।
তবে এ সবই কেবল একটি দিনের জন্য। প্রতি বছর ১ জানুয়ারি ২৪ ঘণ্টার জন্য সেজে ওঠে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের গুড়ইল গ্রাম। যাকে সবাই চেনে পিকনিক গ্রাম বলে। নতুন বছরের সকালে ভোর থেকেই চড়ুইভাতির যাবতীয় রসদ নিয়ে গুড়ইলে সামিল হন আশপাশের শ্যামপুর, পটহরি, বোকসা, বড়ডাঙা গ্রামের বাসিন্দারা। পিকনিক পার্টিরা পৌঁছে গিয়ে জানিয়ে দেন পছন্দ। গ্যাস ওভেন না খড়ির আগুন, সরু সুগন্ধি চালের ভাত, না মোটা মিস্টি চালের ভাতের সঙ্গে দেশি মুরগির ঝোল। আলুভাজার সঙ্গে ফুলকপির ডালনা নাকি বেগুনভাজা, মটরসুটি দিয়ে বাঁধাকপির তরকারি। শেষপাতে টম্যাটোর চাটনি নাকি মিষ্টিটাকা দিলে সব পাবেন। রান্না চাপিয়ে দল বেঁধে হুল্লোড়ে মেতে উঠতে কোনও বাধা নেই। |
বালুরঘাট থেকে চকভৃগুর রাস্তা ধরে তপনের লস্করহাট থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়কের রাস্তা ধরে পশ্চিমদিকে ওই পিকনিক গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। ১লা জানুয়ারি সকাল থেকেই এলাকায় কার্যত মেলা বসে যায়। এলাকা জুড়ে অস্থায়ী দোকান। মুরগি, ছাগল, চাল ডাল তেল নুনের দোকান সাজিয়ে বসেন বাসিন্দারা। মিঠে রোদ গায়ে মেখে মুখ চালাতে তেলেভাজা, মুড়ি চানাচূর, গরম ভাপা পিঠে সবই পাওয়া যায় হাতের নাগালে। উনুন খোঁড়া থেকে জল আনা, বাটনাবাটার সহায়তাও হাজির স্থানীয় লোকেরা। রান্নার লোকও চাইলেই পাওয়া যায়।
এলাকার বাসিন্দা সুষেন সরকার, বীনাস মুর্মু, সুনীল টুডু, বলাই রায়েরা জানান, গত কয়েক বছর থেকে এখানে বালুরঘাট-সহ দূরদূরান্ত থেকে পিকনিক করতে দল ভিড় করেন। সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় ১ জানুয়ারি। তাঁদের কথায়, “সবাইকে পিকনিকের মজা উপহার দিতে সিদ্ধান্ত হয় ১লা জানুয়ারি পিকনিকের রসদ জোগান দেওয়া হবে। জেলার মানুষ ধীরে ধীরে আমাদের উদ্যোগের খবর পেয়েছেন।”
বাড়ি থেকে ব্যাগ বোঝাই করে জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার কোনও হাঙ্গামা নেই। তাই খালি হাতেই মোটরবাইক নিয়ে এ বছরও বালুরঘাট শহরের চকভবানী পাড়ার অভিজিৎ চক্রবর্তী, রাজু বিশ্বাস, গৌরাঙ্গ হালদারেরা ওই পিকনিক গ্রামে গিয়ে বনভোজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। সরকারী কর্মী অভিজিতের কথায়, “নো টেনশন, নো ঝঞ্জাট। মাথাপিছু খরচের হিসাব করে শুধু পৌঁছে যাওয়ার পালা। কলাপাতা থেকে হাড়ি কড়াই, বাসনকোসন, বসার মাদুর সব ভাড়া পাবেন। পিকনিক পার্টিদের সাহায্যে ওই একটি দিন যেন সেজে ওঠে এলাকা।”
স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের সদস্য নীরোদ দাস বলেন, “গুড়ইলের চারপাশে প্রায় দেড় দু’কিলোমিটার জুড়ে জঙ্গল। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে পুর্নভবা নদীর খাঁড়ি। শাল, সেগুন, আকাশমণি, কদম, ইউক্যালিপ্টাসের জঙ্গলে ঘেরা মনোরম পরিবেশ পিকনিক স্পটটির আকর্ষণ বাড়িয়েছে। মিলছে যাবতীয় রসদও।”
আজ, বুধবারও তাই ফের হুল্লোড়ে মাতবে বালুরঘাটের পিকনিক গ্রাম। |