গ্রামীণ হাসপাতালে পরিকাঠামো না থাকায় বিনা অস্ত্রোপচারে প্রসব সম্ভব নয় বলে চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মীকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে কাতর এক বধূকে রেফার করেন চিকিৎসক। হাসপাতাল চত্বর পেরোনোর আগেই ওই প্রসূতির অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে স্বাভাবিক সুস্থ পুত্রের জন্ম দেন তিনি। চিকিৎসকের গাফিলতির অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার সকালে শোরগোল পড়ে যায় ধূপগুড়ি হাসপাতালে। ওই প্রসূতির আত্মীয়দের সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে বচসা ও পরে ধস্তাধস্তির ঘটনায় চিকিসক ও প্রসূতির স্বামী ধূপগুড়ি থানায় পরস্পরের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন। |
থানার আই সি যুগল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। বি এম ও এইচ তা দেখছেন বলে জানিয়েছেন।” ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের বি এম ও এইচ সাধন সরকার বলেন, “আমি সে সময় হাসপাতালে ছিলাম না। তবে বাচ্চা ঘুরে গেলে অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন। যার ব্যবস্থা এ হাসপাতালে নেই। তবে কোনও কর্মী নয়, চিকিৎসক প্রসূতিকে পরীক্ষা করে বলে জানতে পেরেছি। আমি বাইরে রয়েছি। ধূপগুড়ি ফিরে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করব।” তবে ওই ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ মামলা রজু করেনি।
ধূপগুড়ি পুর এলাকার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দা পেশায় আলু ব্যবসায়ী যোগেশচন্দ্র বর্মনের তিন বছর বয়সী মেয়ে রয়েছে। এ দিন সকালে তার স্ত্রী গীতা দেবীর প্রসবযন্ত্রণা শুরু হয়। তড়িঘড়ি বাড়ির লোক গীতা দেবীকে ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান। তার পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, সে সময় হাসপাতালের অন্তর্বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিসক রাজীব বিশাল প্রসূতির অবস্থা দেখার জন্য এক জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীকে নির্দেশ দেন। ওই কর্মী হাত দিয়ে পরীক্ষার পরে জানিয়ে দেন, বাচ্চা উল্টো দিকে রয়েছে। চিকিৎসক ওই কর্মীর কথা শোনার পর গীতাদেবীর সন্তান এই হাসপাতালে প্রসব করানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। বার বার অনুরোধ করা হলেও চিকিৎসক প্রসূতিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে তাকে জলপাইগুড়িতে রেফার করে দেন বলে অভিযোগ। প্রসূতির বাড়ির লোকজন অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে জলপাইগুড়ির দিকে রওনা হওয়ার সময় গাড়িতেই প্রসব শুরু হয়। গীতাদেবীর স্বামী যোগেশবাবুর কথায়, “ভাগ্যিস হাসপাতাল চত্বরে প্রসব শুরু হয়। মাঝ পথে হলে আমার স্ত্রী ও সন্তানের প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ত। যা হয়েছে তা চিকিৎসকের চরম উদাসীনতায়। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলেও তার গায়ে কেউ হাত দেয়নি। ওই চিকিসক সহ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর নামে থানায় ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেছি।” হাসপাতালের ওই চিকিৎসক রাজীব বিশালের কথায়, “যখন দেখা গেল বাচ্চা উল্টো দিকে রয়েছে সে সময় রেফার করা হয় ওই প্রসূতিকে। তা জানানো হলে রোগীর বাড়ির লোক আমাকে মারধর করে।” বর্তমানে ওই বধূ সহ তার পুত্র সন্তান সুস্থ রয়েছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে দেখভাল করছেন চিকিৎসকরা তবে শিশু অবস্থান যদি উল্টোই হয়ে গিয়ে থাকে তা হলে স্বাভাবিক প্রসব কী ভাবে হল তা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসক মহলেই।
|