পা পড়ল পঁচিশে
মাটির রঙে
স্বপ্নডিঙায় পঁচিশ বছর! সেই স্বপ্ন, যেখানে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুরা পুতুল নাচাতে শিখবে। দৈনন্দিনের চাদরে ছবি ফুটিয়ে তুলতে শিখবে যে-কেউ। আজ, নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে ঝাড়গ্রাম শহরে শুরু হচ্ছে ‘রঙ-মাটি-মানুষ’ উৎসব। ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যাকাডেমি আয়োজিত উৎসব এ বার ২৫ বছরে পা দিল। সাত দিনে নানা রঙ্রের, নানা মাত্রার অনুষ্ঠান। গুণিজন সংবর্ধনা, চিত্র ও হস্তশিল্প, কারুকলা প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা-আড্ডা তো থাকছেই। বহুমুখী কর্মশালায় হাতে-কলমে নানা ব্যতিক্রমী কারুশিল্প শেখার সুযোগও থাকছে। ৩ জানুয়ারি বেহালার একটি বিশেষ স্কুলের দশ জন মানসিক প্রতিবন্ধী পড়ুয়াকে শেখানো হবে, পাপেট কী ভাবে চালাতে হয়। ওই দশ কিশোর-যুবা পরিবেশন করবে মূকাভিনয়ও।
পরের দিন, সকলের জন্য খোলা কর্মশালায় বিছানার চাদর ও রুমালের মতো রোজকার কাপড়ের উপর প্রাকৃতিক রং দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে গ্রামবাংলার সাবেক আলপনার নকশা। ৫ জানুয়ারি ছোটদের জন্য বেলুন ও ঠোঙা দিয়ে মুখোশ তৈরির কর্মশালা। রোজই সকাল ১১টা থেকে শুরু হবে কর্মশালা। প্রদর্শনী ও বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখার জন্য মেলা খোলা থাকবে দুপুর ৩টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। ভূরিভোজ যেহেতু বঙ্গজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, ৭ জানুয়ারি সমাপ্তি-সন্ধ্যায় তাই থাকছে পঁচিশ রকম পদের ‘ভোজন সমারোহ’।

খেয়ালী পঁচিশ
পঁচিশ বছর আগে বাঁকুড়ায় কর্মরত নানা পেশার কয়েক জন মানুষ শুরু করেছিলেন ‘বাঁকুড়ার খেয়ালী’। খেয়ালের বশেই পত্রিকা করা, তাই ওই নাম। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই নিছক গল্প-কবিতা ছাপা ছেড়ে ‘বাঁকুড়ার খেয়ালী’ হয়ে উঠল আঞ্চলিক ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, নদীকথা আর সামাজিক ইতিহাসের পত্রিকা। বিষ্ণুপুরের অম্বরী তামাক থেকে বাঁকুড়ার ঘুসিং চুন, পুরুলিয়ার পাখি থেকে অম্বিকানগরের ইতিহাস বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ল এই পত্রিকা। নিজের জেলাকে ভালবেসে তার নানা খুঁটিনাটি তথ্য আর হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃতির ইতিহাস খুঁজে বেড়াতে থাকলেন আগ্রহী জন। কিছু কাল আগে প্রকাশিত পত্রিকার একটি সংকলনই বুঝিয়ে দেয় পত্রিকা চালানোটা নিছক খেয়াল নয় বাঁকুড়া-পাগল মানুষগুলির। সে সংকলনে পৌষ-পার্বণে উৎকল ব্রাহ্মণদের বিশেষ পিঠে তৈরি নিয়ে লিখেছেন বিজয় পণ্ডা, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের বাঁকুড়া-ভাবনা নিয়ে লিখেছেন অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায়, বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার পাখি নিয়ে লিখেছেন নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঁচিশ বছরে পরিকল্পনা কী? সম্পাদক গিরীন্দ্রশেখর চক্রবর্তী বললেন, “উৎসব-অনুষ্ঠান করার চেয়েও আমরা মন দিতে চাই নিঃশব্দে কাজটা করে যাওয়ায়। বাঁকুড়ার কৃতী অথচ বিস্মৃত শিল্পী সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রচুর ছবি-সহ একটি সংকলনের পরিকল্পনা করেছি। সেটাই হবে পঁচিশ বছরের উদ্যাপন।”

মিষ্টি উৎসব
কৃষ্ণনগরের সরভাজা, মালদহের ক্ষীরকদম্ব, কাটোয়ার ক্ষীরের পান্তুয়া। রাজ্যের মিষ্টি এসে জড়ো হচ্ছে দুর্গাপুরে। ৪ ও ৫ জানুয়ারি গাঁধী মোড় ময়দানে হবে দুর্গাপুরের প্রথম মিষ্টি উৎসব। বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, মানকরের কদমা। নানা জায়গার বিখ্যাত মিষ্টি শুধু নয়, হারিয়ে যাওয়া বহু গ্রাম্য মিষ্টিরও না কি দেখা মিলবে। সাবেক পিঠে-পুলি তো আছেই। খড়ের ছাউনি দেওয়া কুঁড়ের আদলে গড়া হচ্ছে তিরিশটিরও বেশি স্টল। মিষ্টি-লোভীদের বসতে দেওয়া হবে বাঁশের বাতায়। মিষ্টির পাত হবে বাঁকুড়ার জঙ্গল থেকে আনানো কচি শালপাতায়। খাওয়ার পরে পাতা ফেলার জায়গাও বাঁশের তৈরি। লোক-সংস্কৃতির আসরও বসছে। গোটা ভাবনাটা প্রথম যাঁর মাথায় এসেছিল, দুর্গাপুরের মেয়রের ঘরণী তথা কাউন্সিলর অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় জানান, স্বাদে-গন্ধে সাবেক মাটির মেজাজ ধরে রাখাটাই আসল উদ্দেশ্য।

নাটকের কথা
এক দল নাটক করে, এক দল দেখে। কিন্তু দেখা-শোনার পালা সাঙ্গ হলে বুকের ভিতরে হরেক প্রশ্নের যে বুড়বুড়ি ওঠে, তার জবাব মেলে কই? এই চেনা আক্ষেপে দাঁড়ি টানতেই বীরভূমে রামপুরহাট তৃতীয় নাট্য মেলায় খুলে দেওয়া হয়েছিল সংলাপের পরিসর। নাটক শেষে দর্শকদের প্রশ্ন-মতামত শোনা আর পরিচালকের কৈফিয়ত বা ব্যাখ্যা দেওয়ার পর্ব। বিতর্কও বেধেছে। কলকাতার থিয়েটার প্রসেনিয়াম ‘স্বামীজি’ মঞ্চস্থ করার যেমন দর্শকদের মুখোমুখি হন পরিচালক অম্বর চম্পতি। তুষার মুখোপাধ্যায় নামে এক প্রবীণ দর্শক বলেন, ‘শুনেছি, পরিব্রাজক অবস্থায় স্বামীজি সব জাতির মানুষের থেকে হুঁকো নিয়ে তামাক খেয়েছিলেন। নাটকে শুধু এক মুসলিম মাঝির হুঁকো দেখা গেল কেন?’ অম্বর দাবি করেন, তাঁরা ঠিক তথ্যই পরিবেশন করেছেন। মুসলিম মাঝির এক মেয়েকে বেলুড় মঠে নিয়ে গিয়ে কুমারী পুজো করেছিলেন স্বামীজি। গত ২৭ থেকে ২৯ ডিসেম্বর চারটি অতিথি নাট্য সংস্থা একটি করে নাটক মঞ্চস্থ করে। আয়োজক, রামপুরহাটের প্রবাহ নাট্যম দু’টি নাটক করেছে। তার মধ্যে একটি শিশু-কিশোরদের জন্য ‘জাদু বাঁশি’ (সঙ্গের ছবি)।

মিঠে স্পঞ্জ
মিষ্টি জলেও স্পঞ্জ মেলে। অন্তত উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরে একটি জলাশয়ে সদ্য পাওয়া শ্যাওলার মতো দেখতে এক ধরনের প্রাণিকুলকে ‘স্পঞ্জ’ বলেই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অমলেশ চৌধুরী জানান, রং বা আকার দেখে আপাত ভাবে শ্যাওলা মনে হলেও হালিশহরের অ্যাঞ্জেলিন লেকে পাওয়া ওই বস্তুটি আদপে এক রকম এককোষী প্রাণী। পোশাকি নাম ‘পরিফেরা ডেমোস্পঞ্জিয়া’। এদের সারা গায়ে যে ছিদ্র থাকে তাকে বলে অস্ট্রিয়াম। তা দিয়েই এরা খাবার সংগ্রহ করে। সারা গায়ে পোস্তদানার মতো অজস্র বীজ নিয়ে বেঁচে থাকা এই ‘পরিফেরা’দের বংশবিস্তারের রহস্যও ওই বীজ। অমলেশবাবু জানান, সমুদ্রের গহীনে ছড়িয়ে থাকা প্রায় চার হাজার রকম স্পঞ্জের মধ্যে এটিও একটি। তবে বিজ্ঞানীদের অনুমান, মিঠে জলের এই স্পঞ্জের দুরারোগ্য ব্যাধির উপশম করার ক্ষমতা থাকতে পারে, যা কি না অন্য স্পঞ্জের নেই। সত্যিই তেমন ক্ষমতা আছে কি না, বিজ্ঞানীরা এখন তা জানারই চেষ্টা করছেন।

সেনিয়া সেতার
পেশাদার সাংবাদিক থেকে সেতারিয়া। কিন্তু সেটাই তরুণ শিল্পী সপ্তর্ষি হাজরাকে আর পাঁচ জনের থেকে আলাদা করেনি। বরং তাঁর বিশিষ্টতা জয়পুর-সেনিয়া ঘরানার বাদনে, যে ধারায় খুব কম শিল্পীই রয়েছেন। এই ঘরানার সেতারে ১৭টি পর্দা ব্যবহার করা হয়, আলাপে খুঁজে পাওয়া যায় বীণার ছায়া। সপ্তর্ষি জানান, ছোটবেলায় শ্রীনিতাই বসুর কাছে তালিম নেওয়ার পরে তিনি জয়পুর-সেনিয়া ঘরানার কিংবদন্তী শিল্পী উস্তাদ মুস্তাক আলি খানের কাছে নাড়া বেঁধেছিলেন। এখন শিখছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর কাছে। সম্প্রতি নদিয়ার দেবগ্রামে ‘অমিত্রছন্দম্’-এর সঙ্গীত অনুষ্ঠানে বাগেশ্রী, দেশ ও খম্বাজ রাগ বাজাতে শোনা গেল সপ্তর্ষিকে। তবলায় সঙ্গত করেন কৃষ্ণেন্দু পাল (সঙ্গের ছবিটি ওই অনুষ্ঠানেরই)।

ফোটোওয়ালা
মশাই, চেহারা উঠাইবেন?’ ভারতে ফোটোগ্রাফির ইতিহাসের সেই আদি যুগে এ ভাবেই সম্ভাব্য ক্রেতাকে টানতেন ফোটোওয়ালারা। সেই আদি যুগ থেকে কী ভাবে বদলে গেল ফোটোগ্রাফি, আর সেই বদলের সঙ্গে সঙ্গেই ধরা থাকল ভারতের সমাজ-ইতিহাসের বিবর্তনটাও, সেটাই মালবিকা কার্লেকর-এর ভাবনার বিষয়। সেই ভাবনায় এ বার তিনি দেখলেন রবীন্দ্রনাথের ২২টি আলোকচিত্রকে। রবীন্দ্রনাথের সেই প্রথম আলোকচিত্র থেকে শুরু করে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সঙ্গে তোলা কয়েকটি ছবি কী ভাবে ফোটোগ্রাফির ইতিহাসকেও স্পষ্ট করে তোলে, বললেন মালবিকা। সেন্টার ফর উইমেন্স ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-এর পত্রিকা ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব জেন্ডার স্টাডিজ’-এর সম্পাদক মালবিকা এখন শান্তিনিকেতনে। বিশ্বভারতী রবীন্দ্রভবনের আমন্ত্রণে রবীন্দ্র-প্রবাহ বক্তৃতামালায় এসেছেন আলোকচিত্রে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে বলতে। কয়েক মাস আগেই দৃশ্য-ইতিহাস নিয়ে তাঁর গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে, ‘ভিস্যুয়াল হিস্ট্রিজ: ফোটোগ্রাফি ইন দ্য পপুলার ইম্যাজিনেশন’।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.