কারও আক্ষেপ, সারা দিন বেড়ানোর পরে রাত হলেই সুনসান। কিছু করার নেই। তখন খুব একঘেয়ে লাগে। আবার কারও আক্ষেপ, কাছাকাছির মধ্যে যাওয়ার জায়গা বেশি নেই। প্রতিবার তাই একই জায়গায় আসতে একঘেয়ে লাগে। অথচ পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য নতুন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, রাস্তা থেকে হোটেল--পরিকাঠামো ও অন্য সমস্যা বাড়ছে।
মুর্শিদাবাদের লালবাগে হাজারদুয়ারিতে এ বার পর্যটকের সংখ্যা বেশ কম। গত ২৫ ডিসেম্বরেই হাজারদুয়ারিতে ১৪ হাজার পর্যটকের ভিড় হয়েছিল। কিন্তু বর্ষশেষের দিন ভিড় মেরেকেটে পাঁচ হাজার। হাজারদুয়ারি মিউজিয়ামের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরাতত্ত্ববিদ নয়ন চক্রবর্তী বলেন, “এ দিন অবশ্য ৫ হাজারের বেশি ভিড় হয়নি। বছরের শেষ দিনে যতটা ভিড় হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি।” তবে তাঁদের আশা বর্ষ শুরুর দিনটাতে ভিড় বাড়বে। নদিয়ার বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যে এ বার ২৫ ডিসেম্বর প্রায় সতেরোশো পর্যটক এসেছিলেন। বুধবার সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে বলেই মনে করছেন বনকর্মীরা। কৃষ্ণনগরের রেঞ্জ অফিসার অমলেন্দু রায় বলেন, “আমরা দু’টি পর্যায়ে পর্যটকদের ভিতরে ঢোকাচ্ছি। সকাল ন’টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পর্যটকদের ভিতরে ঢুকিয়ে আবার বের করে দেওয়া হচ্ছে। আবার দুপুর দু’টো থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত আর এক দফায় পর্যটকদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।” মায়াপুরে ভিড়ের চাপটা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই শুরু হয়েছিল। ২৫ তারিখ সেটা জনসমুদ্রের চেহারা নেয়। বছরের শেষ দু’দিনেও সেই ভিড় ভাসিয়ে দিল নবদ্বীপ ও মায়াপুরকে।
কিন্তু পর্যটকেরা খুশি নন। লালবাগে বেড়াতে আসা দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা দিশারী ভট্টাচার্য বলেন, “এখানে কোনও মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা নেই। ঘুরে দেখারও কিছু নেই। সন্ধ্যার পরে হোটেলের ঘরে টিভি দেখে কাটানোটা খুব বিরক্তির।” বেথুয়াডহরি বেড়াতে গিয়ে শান্তিপুরের বাসিন্দা কমল ভট্টাচার্যর কথায়, “জেলায় এক মায়াপুর ছাড়া ছুটির দিনে যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। কিন্তু সেখানে মারাত্মক ভিড়। তাই প্রতিবার বছরের এই শেষ দিনে মেয়েকে নিয়ে বেথুয়াডহরিতে আসি। এখানেও ভিড় উপচে পড়ে।”
সব থেকে বেশি অভিযোগ পরিকাঠামো নিয়ে। লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্যই জানান, প্রয়োজনীয় শৌচাগারের অভাব রয়েছে। পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থাও নেই। তাঁর কথায়, “প্রশাসন চেষ্টা করলেও রাজনীতির কচকচানি রয়েছে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে জনপ্রতিনিধিদেরও দায় রয়েছে। কিন্তু তাঁদের ভূমিকাও হতাশজনক।” বহিরাগত কোনও পর্যটক লালবাগ স্টেশন থেকে নেমে হোটেলে যাবেন, তার কোনও ব্যবস্থা নেই। স্টেশন চত্বরে রিকশা বা টাঙ্গা রয়েছে। কিন্তু তারা কেউই সঠিক ভাড়া নেয় না। সেই সঙ্গে এক শ্রেণির হোটেলের গুণগত মানও ভাল নয়। পর্যটন মরসুমে ঘর ভাড়াও বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। লালবাগের হোটেল মালিক আশিস রক্ষিত বলেন, “ঠিক মতো আপ্যায়ন পেলে পর্যটকেরা মুর্শিদাবাদে বেড়াতে আসার যে বাড়তি আগ্রহ দেখাবেন, সেই ভাবনা থেকেই শত যোজন দূরে একশ্রেণির ব্যবসায়ীদের অবস্থান। ওই মানসিকতার বদল দরকার।” |