|
|
|
|
দেবুর আইটেম নাম্বার |
দেবশঙ্কর হালদার মঞ্চে এ বার নতুন রূপে। গাইছেন ভৌ ভৌ গান! রিহার্সাল দেখে এলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত
|
চন্দ্রকান্ত: ন্যাকাপনা, তোমার ন্যাকাপনা
অনন্ত: একাপনা আমার ঘুচে যাবে
আসছে সে আমার আসছে যে রে
আসছে মনের মানুষ ছিল যে দূরে!!
চন্দ্রকান্ত: আসবে না সে তো আসবে না রে
আসবে না সে ঢপ মারছে রে
অনন্ত: মনের ভেতর উথালপাথাল কেন করে?
চন্দ্রকান্ত: এই রোগেতে আগেও মানুষ মরেছে রে
ন্যাকাপনা আমি ঠেকাব না
অনন্ত: একাপনা এ বার ঘুচে যাবে! |
না, এটা কোনও সিনেমা বা নাটকের সংলাপ নয়।
আর চন্দ্রকান্ত কোনও মানুষের নামও নয় কিন্তু।
সে এক পোষ্যের নাম।
নতুন বছরে বাংলার মঞ্চের নতুন চমক এই চন্দ্রকান্ত।
দেখতে সে মন্দ নয়। পুঁচকে একটা কুকুর।
কিন্তু মঞ্চে এলে সে নিজের গলায় গান ধরে।
থিয়েটারের গান নতুন নয়।
তবে এই প্রথম এক অভিনেতাকে শোনা যাবে একটা পোষ্যের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাইতে।
না, সত্যিকারের কুকুরের ভৌ ভৌ গান নয়।
রীতিমতো ভেন্ট্রিলোকুইস্টের কাছে শিখে পড়ে ‘ডগি’-র গলায় গান।
চমক এখানেই শেষ নয়।
এই দুই কণ্ঠে গান গাইছেন দেবশঙ্কর হালদার।
নাটকের নাম ‘রমকম’। অর্থাৎ রোম্যান্টিক কমেডি।
পরিচালনায় ফাল্গুনি চট্টোপাধ্যায়।
নাটকটি লিখেছেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। আর এই গানটির কথা ও সুর করার দায়িত্বে আছেন পিলু ভট্টাচার্য।
ফাল্গুনির মতে এটাই নাকি বাংলা থিয়েটারের প্রথম আইটেম নাম্বার! “প্রায় চার থেকে পাঁচ মিনিট এই গানটা ব্যবহার করব মঞ্চে। আইটেম নাম্বার মানে শুধু একজন মহিলাই লাস্যময়ী রূপে নাচবেন, তা তো নয়। এই গানটা খানিকটা প্রক্ষিপ্ত রয়েছে, আবার চিত্রনাট্যের সঙ্গে মিশেও যাচ্ছে। তার ওপর কথাগুলো পিলু এমন ভাবে লিখেছে যেখানে এক মহিলাকে পাওয়া না পাওয়ার গল্পটাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে!”
একই মত সঙ্গীত পরিচালকেরও। “আইটেম সং মানে তো সেক্সি সং নয়। অ্যাট্রাকটিভ গান হলে সেটাকে আইটেম সং বলাই যায়। আমরা তো রেডিয়োতেও গানটা বাজাব। টেলিভিশনের জন্য আলাদা ভাবে মিউজিক ভিডিয়োও তৈরি হচ্ছে।”
আধুনিক, রবীন্দ্রসঙ্গীত, বাংলা ব্যান্ড— সব গানই রেডিয়োতে শোনা হয়। এক সময় তো তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে নাটকের গানের রেকর্ড তৈরি হয়েছিল। নাটকের নাম ছিল ‘নরক গুলজার’। ২০১৪-তে এসে যদি নাটকের গান রেডিয়োতে নিয়মিত শোনানো হয়, তা হলে সেটাও একটা নতুন পাওনা! |
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল। |
কী এমন আছে এই ‘মধুর রসের’ নাটকে যার জন্য এই রকম একটা গান গাইতে রাজি হলেন দেবশঙ্করের মতো অভিনেতা?
“‘কাল্লুমামা’-তে অভিনয় করার সময় আমি ম্যাজিক শিখেছিলাম। এই নাটকে দ্বৈতকণ্ঠে গান গাইছি। কলকাতার এক ভেন্ট্রিলোকুইস্টের সঙ্গেও দেখা করব। তাঁর নাম প্রবীর কুমার দাস। তাঁর মাইকেল নামের কথা বলা পুতুলটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। রেডিয়োতে এই গানটা বেশ অনেকক্ষণ ধরে বাজানো হলে তো সেটা নিশ্চয়ই একটা নতুন ব্যাপার হবে নাটকের ক্ষেত্রে। নাটকের গানের সিডি অনেক সময় বেরিয়েছে। কিন্তু নাটকের গানের মিউজিক ভিডিয়ো বেরিয়েছে বলে আমার জানা নেই,” বলছেন দেবশঙ্কর।
অনন্তর চরিত্রটাই বেশ মজার। সে নীল রংয়ের ফ্যান। বালিশের ওয়ার থেকে টুথব্রাশ, চশমার ফ্রেম থেকে শার্ট— সবই তার নীল রঙের। মাথায় চুলটা অনেকটা হবে আইনস্টাইনের মতো!
এমনটাই জানাচ্ছেন পরিচালক। আরও বলছেন, “এই নাটকে দর্শক দেবশঙ্করকে একদম এক নতুন রূপে দেখতে পাবে। এটা একটা রোম্যান্টিক কমেডি। এক লেখককে নিয়ে। নাম অনন্ত দাশগুপ্ত। যার নানা ধরনের অদ্ভুত সব অভ্যেস রয়েছে। সপ্তাহের এক একটা দিনে এক এক রঙের চটি পরে সে। শুধু তাই নয়, বাড়ির কাজের লোকটিকেও সেই একই নিয়ম মেনে চলতে হয়!”
আরও জানান যে নাটকের মূল গল্পটা হলিউডের অস্কারবিজয়ী সিনেমা ‘অ্যাজ গুড অ্যাজ ইট গেটস’ দ্বারা অনুপ্রাণিত। যেখানে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন জ্যাক নিকলসন। সিনেমাতে তিনি ছিলেন এক সাহিত্যিকের ভূমিকায়, যিনি ‘অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার’-য়ে ভুগতেন। কারও সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন না। ব্যতিক্রম ছিলেন এক রেস্তোরাঁর ওয়েট্রেস।
তবে ‘রমকম’-য়ের গল্পের সঙ্গে ‘অ্যাজ গুড অ্যাজ ইট গেটস’-এর মিল শুধুমাত্র এইটুকুই। কোনও কপিরাইটের সমস্যা নেই সেখানে, দাবি করছেন ফাল্গুনি। নাট্যকার উজ্জ্বল জানাচ্ছেন, “এটা আমাদের দেশের গল্প। আমাদের দেশের মোড়কে পরিবেশটা তৈরি করতে চেয়েছি। একজন বয়স্ক মানুষ যদি আরেকজন বয়স্ক মানুষকে ভালবেসে ফেলে এবং তার ভালবাসার প্রকাশটা যদি খুব বিচিত্র হয়, তা হলে আমাদের সমাজে তা নিয়ে কী রকম নাটক হয়? ওই সিনেমাতে জ্যাক নিকলসন প্লাস্টিকের ডিজপোজেবল কাপ-প্লেট নিয়ে যেতেন রেস্তোরাঁতে। এখানে কিন্তু আমরা তা করছি না। বরং দেখাচ্ছি যে অনন্ত যখন ওই মেয়েটির সংস্পর্শে আসে, তখন ওর পিটপিটে ভাবটা কমে যায়। সেটাই ভালবাসার এফেক্ট। আর এই মেয়েটির লড়াইয়ের কাহিনিও যোগ করেছি আমি।”
সিনেমাতে অবশ্য ব্যবহার করা হয়েছিল একটা আস্ত কুকুরকেও। স্টেজের ভাষাটা আলাদা। তার ওপর বাংলার মঞ্চে একটা জ্যান্ত কুকুরকে দিয়ে অভিনয় করানোর ঝামেলা নেওয়াটাও নিষ্প্রয়োজন। তাই স্পিৎজ বা ডালমেশিয়ান নয়, চন্দ্রকান্ত এখানে একটা সফ্ট টয়। অনন্ত নিজের মনের কথাগুলো এই চন্দ্রকান্তকে দিয়ে বলায়। আপাতত অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ের খেলার পুতুল দিয়েই ‘রমকম’-য়ের মহড়া চলছে। “আমার নাতনি, মানে আবিরের মেয়ে ওটা অন্নপ্রাশনে পেয়েছিল। ওটাই এখন রিহার্সালে ব্যবহার করছি। তবে নাতনির বয়স মাত্র এগারো মাস। তাই ও এ সব কিছু বোঝে না। নাটকটা নামলে অবশ্য আমরা নতুন একটা কিছু কথাবলা পুতুল বানিয়ে নেব,” বলছেন ফাল্গুনি।
এই নাটকের ক্লাইম্যাক্সে আবার একটা ছোট ক্লিপ দেখানো হবে। নাটক আর কল্পনাকে মিশিয়ে একটা ছোট দৃশ্য শু্যট করা হবে রেড রোডে। নাটকের শেষে এই দৃশ্যটা পর্দায় দেখানো হবে।
অপেক্ষা এখন ২২ জানুয়ারি মধুসূদন মঞ্চে নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার। ‘খোকাবাবু যায় লাল জুতো পায়ে’ তো পুরোনো হিট। ২০১৪-র মঞ্চের নতুন ক্যাচলাইন হল ‘দেবশঙ্কর যায় নীল জুতো পায়ে’। |
|
|
|
|
|