হাওড়া পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে জন্ডিসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত ৩০০ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পুরসভা এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ধারণা, পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জলের পাইপলাইনের সঙ্গে নর্দমার জল মিশে যাওয়া জল পান করেই ওই ওয়ার্ডে এই রোগ ছড়িয়েছে। কারণ পুরসভার অধিকাংশ জলের পাইপলাইন গিয়েছে নর্দমার মধ্যে দিয়ে, নয়তো পাশ দিয়ে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্বীকার করে হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী কার্যত মেনে নিয়েছেন, পরিকাঠামোর অভাবেই এই রোগের মোকাবিলা করতে পারছে না পুরসভা। তাই রোগটি ওই এলাকায় ‘মহামারি’র আকার নিয়েছে। মেয়র বলেন, “ওই এলাকায় এই রোগের প্রকোপ গত চার মাস ধরেই চলছে। বিগত বাম বোর্ড সব জেনেও কিছু করেনি। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছি। রোগের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। এর মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামো বর্তমানে পুরসভার নেই। এ জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।” মেয়র জানান, পুরসভার পক্ষ থেকে এলাকার বাসিন্দাদের জল ১০ মিনিট ফুটিয়ে খেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে পুরসভার সরবরাহ করা জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। |
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গত অক্টোবর মাস থেকে ওই এলাকার বিভিন্ন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জন্ডিসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। যে সব এলাকায় সম্প্রতি রোগটি ছড়িয়ে পড়ে সেই এলাকাগুলি হল কৌবর্ত্য পাড়া, কামিনী স্কুল লেন, মৌনাক পোড়েল নেল, গজানন বস্তি এবং গোপাল ঘোষ লেন। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ১৫ বছর ধরে এই এলাকায় বহু রাস্তা বর্ষার সময়ে প্রায় চার মাস জলের তলায় থেকেছে। এ ছাড়া পুরসভার অধিকাংশ পাইপলাইন গিয়েছে নর্দমার নিচ দিয়ে বা নর্দমার মধ্য দিয়ে। ফলে মাটির তলায় পুরসভার পাইপ প্রায়ই ফুটো হয়ে জলে সংক্রমণ হত বলে অভিযোগ।
এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ অলিগলি মধ্যে দিয়ে যাওয়া নর্দমা দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার হয়নি। পাঁক ওপচানো নর্দমার মধ্যেই ফেলা হয়েছে জঞ্জাল। আর সেই নর্দমার পাশ দিয়ে গিয়েছে পুরসভার জল সরবরাহের পাইপ। এলাকার বাসিন্দা রাজা সিংহ বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে এই এলাকার পুরসভার জলে পচা গন্ধ বেরোয়। সেই জল অনেকেই পেটের রোগে ভুগছে। কিন্তু এ বার গত তিন-চার মাস ধরে ঘরে ঘরে জন্ডিস হচ্ছে। এখন তা বেড়ে গিয়েছে।”
৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বাণী সিংহরায় বলেন, “আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে মেডিক্যাল ক্যাম্প বসিয়েছি। লোকজনকে জল ফুটিয়ে খেতে বলা হয়েছে। আমাদের ধারণা, পুরসভার পাইপ ফুটো হয়ে গিয়ে এই সংক্রমণ হয়েছে। ওই পাইপ মেরামত করা বা পাল্টানো যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে।”
হাওড়ার মুখ্য জনস্বাস্থ্য আধিকারীক দেবাশিস রায় বলেন, “এ দিন জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার পরে বোঝা যাবে, এটা কী ধরনের জন্ডিস। আক্রান্তদের রক্তের পরীক্ষাও করা হচ্ছে।”
|
সরকার ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে ইনসুলিনের দাম ৬৫ টাকা নির্ধারিত করেছে। সেই মত তিন মাস আগে উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে ওই দরে ইনসুলিন বিক্রির নির্দেশ দেন। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ওষুধ ওই দরে না দেওয়ায় তা মিলছে না বলে অভিযোগ। বাইরে থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাসবিহারী দত্ত বলেন, “ওষুধ কোম্পানি সরকার নির্ধারিত দরে ইনসুলিন সরবরাহ শুরু না করায় রোগীদের বাইরে থেকে তা কিনতে হচ্ছে। সমাধানের চেষ্টা চলছে।” ইনসুলিন ছাড়াও ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে বহু জীবনদায়ী ওষুধ নেই। তবে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী। গত ৯ মার্চ রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল চত্বরে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান চালু হয়। সরকারি তালিকার১৪২টি জীবনদায়ী ওষুধ বাইরের থেকে ৫৩.৩০ শতাংশ কম দামে বিক্রি হবে জানানো হয়। |