চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে মৃত্যুতে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল আরও সক্রিয় হোক, এমনই দাবি রোগীদের পরিবারের সংগঠন পিপল ফর বেটার ট্রিটমেন্ট (পিবিটি)-র। স্বজনহারা কয়েক জন চিকিৎসকও আছেন সংগঠনে। সম্প্রতি অনুরাধা সাহা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে শাস্তির যে কথা বলা হয়েছে, তাতে আরও সতর্ক হতে হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকদেরই একাংশ।
সোমবার কলকাতায় চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত রোগীর আত্মীয়দের সম্মেলনে ভুক্তভোগী চিকিৎসকরাও তাঁদের অভিজ্ঞতা জানান। অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ গৈরিক ঘোষ বলেন, “আমার মামা সুজিত দাসও চিকিৎসক ছিলেন। ২০১১ সালে আঘাত পেয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। নার্সিংহোমে ভর্তির পরে তা জানা গেলেও প্রায় ন’ঘণ্টা ফেলে রাখা হয় তাঁকে। কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা যান।” গৈরিকবাবু বলেন, “জাতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিলে (এমসিআই) ও এমসিআই রাজ্য শাখাকে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়। এমসিআইয়ে এক বার শুনানি হলেও রাজ্য শাখায় কিছুই হয়নি।” কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অ্যানাস্থেসিস্ট শেফালি লাহিড়ি বলেন, “আমার মেয়ে চিকিৎসায় গাফিলতিতে ২০১০ সালে নামী নার্সিংহোমে মারা যায়। ওর জরায়ুর অস্ত্রোপচারের পরে রক্তপাত শুরু হয়। কেন, তা বোঝা যায়নি। ঠিক সময় যত্ন নিলে হয়তো এই ঘটনা এড়ানো যেত।” |
সেলিমপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধা বেলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। তাঁর কথায়, “আমার দাদার কী অসুখ হয়েছিল, এক বছরেও জানতে পারিনি। হাসপাতালে থাকাকালীন কোনও ডাক্তারও কিছু বলেননি।” বেলাদেবী মেডিক্যাল কাউন্সিলে জানালেও লাভ হয়নি। এমন অনেকেই এমসিআইয়ের রাজ্য শাখার দিকে আঙুল তোলেন।
কেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয় না তারা? সংস্থার নির্বাচিত সদস্য এবং আইএমএ-র রাজ্য শাখার সম্পাদক শান্তনু সেন বলেন, “বাম আমলে এখানে কিছু হত না। আমরা ক্ষমতায় এসে কমিটি গড়েছি। কমিটি অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে নিষ্পত্তি করছে। কিন্তু জমে থাকা ফাইলের সংখ্যা বেশি বলে সময় লাগছে।”
বাম আমলের রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সদস্য তথা আইএমএ-র রাজ্য শাখার প্রাক্তন সভাপতি সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় শান্তনুর সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ছিল। কিছু ক্ষেত্রে শুনানির সময়ে অভিযোগকারীরাই আসেননি। কোথাও হাসপাতাল বা নার্সিংহোম প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়নি।”
এই প্রসঙ্গে অনুরাধার স্বামী প্রবাসী চিকিৎসক কুণাল সাহা বলেন, “১৫ বছর অভিযুক্ত চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট ন্যায় বিচার দিয়েছে।” তাই বিচার পাওয়া যাবে না বলে হতাশার কিছু নেই। |