পাড়া-পড়শি তাঁর স্বভাব চরিত্রের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। ঠান্ডা, শান্ত স্বভাব। পারতপক্ষে কারও সঙ্গে জোরে কথাও বলতে শোনেনি কেউ। নিজের ঘরের চৌহদ্দির বাইরে বিশেষ দেখাও যেত না তাকে। বছরখানেক ধরে বছর ত্রিশের সেই রুদ্র দেবকে এ ভাবেই চিনতেন শ্রীহট্ট গ্রামের বাসিন্দারা।
সোমবার সকালে সেই যুবকই আচমকা ক্ষেপে উঠে কুপিয়ে বসলেন ন’বছরের এক বালক ও তার দিদিকে। হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানেই মারা যায় হাঁসুয়ার কোপে ক্ষত বিক্ষত শঙ্খ বাগদি (৯)। গুরুতর জখম তাঁর দিদি শ্যামলীও। চিকিৎসকেরা জানান তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
পুলিশ রুদ্রকে গ্রেফতার করেছে। থানার লক-আপে বসে রুদ্র অবশ্য এখন আফশোস যাচ্ছে না। পুলিশ কর্মীরা তার কাছে গেলেই তাকে বলতে শোনা গিয়েছে, “হঠাৎ কী যে হল...কেন এমন করলাম বলুন তো...শঙ্খ ভাল আছে তো, বাচ্চা ছেলে তো অত জোরে মারা ঠিক হয়নি।” কান্দির এসডিপিও সন্দীপ সেন বলেন, “প্রাথমিক বাবে ওই যুবক মানসিক অসুস্থই মনে হচ্ছে। তাকে জেরা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” |
মানসিক ভারসাম্যহীন রুদ্রর এলোপাথারি হাঁসুয়ার কোপে শঙ্খ অবশ্য হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা গিয়েছিল। তাঁকে বাঁচাতে ছুটে আসা বছর কুড়ির শ্যামলীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তকে জেরা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সাড়া বিশেষ মিলছে না।
আশপাশের বাসিন্দারা জানান, এ দিন সকালে রুদ্রদের পাশের বাড়ি বাসুদেব বাগদির উঠোনে তাঁর ছেলে শঙ্খর সঙ্গেই খেলা করছিল রুদ্রর মেয়ে। শঙ্খের বাবা বাসুদেববাবু ও তাঁর স্ত্রী কর্মসূত্রে মুম্বইয়ে থাকেন। সেই সময়ে বাড়িতে অন্য কেউও ছিলেন না। আচমকা সেখানে উপস্থিত হয়ে শঙ্খকে কোলে তুলে নেয় রুদ্র। পাঁজকোলা করে তাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলে হাত-পা। তারপর খাটের নীচ থেকে হাঁসুয়া বের করে কোপাতে থাকে। চিৎকারে পাশের বাড়ি থেকে ছুটে আসে ওই বালকের জ্যাড়তুতো দিদি শ্যামলী। বাধা দিতে গেলে এ বার তাঁকেও কোপাতে থাকে রুদ্র। তারপর এক সময় বেরিয়ে আসে বাইরে। রাস্তায় এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে বলতে তাকে, “কেউ আমার ধারে কাছে এস না, খুন করে ফেলব।” পথচারীরা বুঝতে পারেন কোথাও কাণ্ড ঘটিয়ে এসেছে সে। এরপরে তাঁরাই এক সময়ে ধরে ফেলেন রুদ্রকে।
পড়শিরা শঙ্খ আর শ্যামলীকে নিয়ে ছোটেন বড়ঞা গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানেই কিছুক্ষণ পরে মারা যায় ওই বালক। শ্যামলীকে পাঠানো হয় বহরমপুর হাসপাতালে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক ধরে মানসিক অসুস্থতা দেখা দেয় রুদ্রর। তবে চিকিৎসায় এ যাবৎ সুস্থই ছিল সে। বাড়িতেও অবশ্য একা একাই সময় কাটাত সে। কখনও তাকে উত্তেজিত হতেও দেকা যায়নি। তাহলে এমন কাণ্ড ঘটালো কী করে? কারও কাছেই স্পষ্ট কোনও উত্তর নেই। |