|
|
|
|
উৎসবের ডারবান, বিষাদের ডারবান |
|
অতি আগ্রাসন দেখাতে গিয়ে
বিদেশে আবার ডুবল ধোনিরা
দীপ দাশগুপ্ত |
|
টেস্ট সিরিজটা শুরুর আগে থেকে একটা কথা বলে আসছিলাম। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারত জিতল না হারল, বড় কথা নয়। আসল হচ্ছে, তুমি এই সিরিজে নানা রকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে। যেগুলো তোমাকে ভবিষ্যতের ক্রিকেটীয় যুদ্ধের জন্য তৈরি করে দেবে। দেখার ছিল, সচিনোত্তর যুগের প্রথম টেস্ট সিরিজে ভারতীয় দলটা ওই পরিস্থিতিগুলো কী ভাবে সামলায়। কী মানসিকতা নিয়ে নামে। বলতেই হচ্ছে, ধোনির টেস্ট টিমের এখনও অনেক রগড়ানি দরকার।
অনেকে বলতে পারেন, টেস্ট সিরিজে আমরা পূজারা-কোহলির দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরি পেয়েছি। মুরলী বিজয় ডারবানে ৯৭ করে গিয়েছে। আজও রাহানে ৯৬ করল। কিন্তু এগুলো হচ্ছে ব্যক্তিগত স্কিলের ঝলক। সব সময় রান নয়, দুর্দান্ত স্ট্রোক প্লে নয়, কখনও কখনও উইকেটে পড়ে থাকার মানসিকতারও দরকার। প্রয়োজন হয় দেখনদারি ছেঁটে গায়ে-মাথায় বল খাওয়ার মানসিকতার। যেটা দেখাতে পারল না বলে ডারবানে ভারত হারল। যেটা দেখাতে পারল না বলে, বিদেশে শেষ দশটা টেস্টের মধ্যে ন’টাই হেরে ধোনির ভারতকে দেশে ফিরতে হচ্ছে।
ভারত কেন ডারবান টেস্টটা বাঁচাতে পারল না? তিনটে ব্যাপার তুলে আনব। |
সতীর্থদের কাঁধে ‘কিং কালিস’। |
গ্যালারিতে কালিস-বন্দনা। |
|
এক, হাতে আট উইকেট। গোটা দিন পড়ে থেকে টেস্ট বাঁচাতে হবে এমন অবস্থায় ছোট ছোট সেশনে গোটা দিনটাকে ভাঙতে হয়। সেটা আধ ঘণ্টার সেশনও হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট বাঁচানোর অভিজ্ঞতা আমার আছে। সেটা থেকে জানি যে, ওরা প্রথম এক ঘণ্টা তেড়েফুঁড়ে বল করতে থাকে। ওই সময়টা সামলে দিতে পারলে তার পর ওদের পেসাররা সামান্য হলেও ঢিলে হয়ে পড়ে। ধোনিরা এ দিন গোটা দিনকে ছোট-ছোট সেশনে ভাঙার কথা ভাবেনি। চেয়েছিল, দ্রুত রান তুলে ম্যাচটাকে আগেভাগে ড্র-এর দিকে নিয়ে যেতে। অতএবভুগতে হয়েছে।
দুই, কোনও ভাল স্পেল চললে তখন উচিত সেই স্পেলটাকে শেষ হতে দেওয়া। আরে, ওরা তো বিশ্বের এক নম্বর টিম। ওদের পেস অ্যাটাক যে বিশ্বসেরা, সেটা মাথায় থাকবে না? যদি কারও স্পেল খেলতে অসুবিধে হয়, তখন তো পার্টনারকে গিয়ে বলতে হবে যে, ওটা তুমি সামলাও। আমি পড়ে থাকছি। ভারতকে উল্টে দেখলাম, স্টেইন আর ফিলান্ডার, দু’জনের দু’টো ভাল স্পেল চলার সময় পরপর উইকেট দিয়ে যেতে। |
বিদায়ী বিয়ারে চুমুক কালিসের, দর্শক ডোনাল্ডরা। |
তিন, স্বাভাবিক খেলা বাদ দিয়ে সিচুয়েশন বুঝে ব্যাট করা। রোহিত, জাডেজাদের বুঝতে হবে যে, ওরা স্ট্রোকপ্লেয়ার বলেই খুশি মতো সব জায়গায় স্ট্রোক খেলা যাবে না। বলতে পারেন, রোহিতের ও ভাবে আউট হওয়ার যুক্তি কী? ফিলান্ডারের বল রিভার্স করছে দেখেও আগে থেকে পা বাড়িয়ে দিল। আর জাডেজার ব্যাটিংয়ের কথা যত কম বলা যায়, তত ভাল। যে বলটায় আউট হল, ছেড়েই দিলাম। গোটা ওভারটা ও যে ভাবে খেলল, দেখে মনে হয়নি টেস্ট ক্রিকেট খেলছে। মনে হয়েছে, জাডেজা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছে। ছ’বলে ছ’টা ছক্কা মারবে! এক ওভারে ছত্রিশ নেবে!
স্টেইন-ফিলান্ডার খুব ভাল বল করেছে, মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ভারতের এই অতি আগ্রাসন দেখাতে গিয়ে নিজেরাই নিজেদের ডুবিয়ে দেওয়া, তার কোনও ব্যাখ্যা আছে? টেস্ট কী ভাবে খেলতে হয়, রাহানে তো দেখিয়ে গেল। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই ও প্রথম বিদেশের মাটিতে টেস্ট খেলতে নামল। সত্যি কথা বলতে, টেস্ট ভারত আজ হারেনি। প্রথম ইনিংসে ১৮০-১ অবস্থা থেকে সাড়ে চারশোর কমে যখন অলআউট হয়ে গিয়েছিল, তখনই ম্যাচটা নব্বই শতাংশ হেরে গিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও ড্র-টা করে দেওয়া যেত যদি রাহানের মতো ব্যাটিংটা বাকিরা করত। |
|
|
পূজারা বোল্ড। |
ব্যর্থ কোহলিও। |
|
কোহলির আউট নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। পূজারা বোল্ড হয়েছে স্টেইনের অবিশ্বাস্য একটা বলে। কিন্তু বাকিরা? রাহানেকে দেখছিলাম, ডিফেন্স ছাড়া সব মাথা থেকে বার করে দিয়েছে। শুধু শট খেলার বল পেলে শট খেলেছে। কিন্তু ওর পার্টনারদের দেখছিলাম, সেশনে একশো তুলতে হবে, যেন এমন টার্গেট নিয়ে ব্যাট করছে। ডিটারমিনেশন বলে যে একটা কথা আছে, সেটাই অনেকে ভুলে গেল।
এ ভাবে টেস্ট জেতা কেন, ড্র-টাও হয় না। যা হওয়ার, তাই-ই হয়েছে।
|
|
ছবি: এএফপি ও এপি। |
পুরনো খবর: স্বাভাবিক ব্যাটিং করেই পরীক্ষায় উতরোতে হবে
|
শীর্ষে দখল বাড়ল দক্ষিণ আফ্রিকার
নিজস্ব প্রতিবেদন |
|
ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার ১০ উইকেটে জয় গ্রেম স্মিথদের টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল। ১-০ সিরিজ জিতে দুই রেটিং পয়েন্ট এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মোট পয়েন্ট এখন ১৩৩। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতের দুই রেটিং পয়েন্ট হারিয়ে ১১৭। সিরিজ হারায় দু’দলের রেটিং পয়েন্টে পার্থক্য ১২ থেকে বেড়ে হল ১৬। অস্ট্রেলিয়া চলতি অ্যাসেজে ৫-০ জিতলে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে তাদের তিন নম্বরে উঠে আসার সুযোগ আছে। পাঁচ নম্বরে অ্যাসেজ শুরু করলেও ৪-০ এগিয়ে যাওয়ায় মাইকেল ক্লার্করা চতুর্থ স্থানে উঠে আসা ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করে ফেলেছেন। ইংল্যান্ডকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করতে পারলে ক্লার্কদের পয়েন্ট হবে ১১১ আর ইংল্যান্ডের ১০৭। তবে অ্যাসেজের শেষ টেস্ট (সিডনি) জিতলে ইংল্যান্ড তিনেই থাকবে। সেক্ষেত্রে অ্যালিস্টার কুকদের রেটিং পয়েন্ট হবে ১০৯ আর ক্লাকর্রা শেষ করবেন ১০৮-এ। সিডনি টেস্ট ড্র হলেও অস্ট্রেলিয়া উঠে আসবে তিনে। |
|
|
|
|
|