পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রায় ছ’মাস পরে শপথ গ্রহণ করলেন তৃণমূলের কেতুগ্রাম ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মহম্মদ শাহিদুল্লা (উজ্বল)। সোমবার কাটোয়া মহকুমাশাসকের দফতরে শপথ গ্রহণের সময় মহম্মদ শাহিদুল্লা ছাড়াও হাজির ছিলেন তৃণমূলের ওই ব্লকের সভাপতি রত্নাকর দে, কেতুগ্রামের আই সি আব্দুর গফ্ফর ও অন্যান্য তৃণমূলের নেতারা। শপথগ্রহণের পরে ওই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের হাতে শংসাপত্র তুলে দেন কেতুগ্রাম ১-এর বিডিও বিনয় বিশ্বাস।
তৃণমূলের টিকিটে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির ৫ নম্বর আসন থেকে এ বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন মহম্মদ শাহিদুল্লা। বাকি আসনও পায় তৃণমূল। তা সত্ত্বেও মহম্মদ শাহিদুল্লাকে শপথ নিতে মহকুমাশাসক দফতরে আসতে হল কেন আর কেনই বা শপথ নিতে এত দেরি হল, এ নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূলের এক সূত্রের খবর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই শাহিদুল্লা কেতুগ্রাম ১ ব্লক অফিস কান্দরাতে গিয়ে শপথ নেওয়ার মতো সাহস পাননি। ফলে নির্বাচিত সদস্য হওয়া সত্ত্বেও জয়ের শংসাপত্র হাতে পাননি মহম্মদ শাহিদুল্লা। এ দিন তিনি বলেন, “আমি কেষ্টদার (বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল) সঙ্গে আছি বলে আমাকে নানা ভাবে হুমকি দিয়ে কান্দরায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। কান্দরা গেলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হত, তাই দলের নির্দেশ মেনে মহকুমাশাসকের কাছে শপথ নিলাম।” জাহের শেখ সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, “উনি শপথ নেওয়ায় আমরা খুশি। আরও আগে ব্লকে এসে শপথ নিলে ভাল হত। ওই এলাকায় আমরা উন্নয়নের কাজ শুরু করে দিতে পারতাম। তবে উনি কেন নিরাপত্তার অভাব বোধের কথা বললেন বুঝতে পারছি না।”
তৃণমূল সূত্রে খবর, অনুব্রতবাবুর অনুগামী ও কেতুগ্রামের বিধায়ক তথা নানুরের বাসিন্দা সাহানেওয়াজ শেখের অনুগামীদের মধ্যে মতান্তর রয়েছে। কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখ বিধায়কের ঘনিষ্ঠ বলে দলে পরিচিত। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, মূলত তাঁর সঙ্গেই দ্বন্দ্ব শাহিদুল্লার। অথচ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভাল ছিল। শাহিদুল্লা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লকের টিকিটে জিতে বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে জাহেরদের মদতে প্রধানও হয়ে যান। তা হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে ওই দুই নেতার মধ্যে সম্পর্কে অবনতির কারণ কী? দল সূত্রে খবর, কেতুগ্রাম ১ ব্লকে একমাত্র বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হয়। বিধায়ক গোষ্ঠীর ধারণা হয়, নির্দল প্রার্থীদের পিছনে শাহিদুল্লার মদত ছিল। নিজের প্রভাব বজায় রাখতে দলীয় প্রার্থীদের মানতে চাননি শাহিদুল্লা, বরং নির্দল প্রার্থীদের জিতিয়ে পরোক্ষে বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত চালাতে চেয়েছিলেন তিনি। এই অনুমান থেকেই ওই দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়।
আবার শাহিদ্দুলা গোষ্ঠীর অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটের পরে বেশ কয়েক সপ্তাহ বাড়ি থেকে বেরোতে পারেননি শাহিদুল্লা। এখনও কাটোয়া যেতে গেলে তাঁকে ঘুর পথ ধরতে হয়। এর আগে শপথ নেওয়ার জন্য ব্লক থেকে দু’বার চিঠি পাঠানো হয়েছিল মহম্মদ শাহিদুল্লাকে। বিডিও বিনয়কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “চিঠির কোনও উত্তর দেননি উনি। তবে কয়েক দিন আগে মহকুমাশাসকের (কাটোয়া) কাছে চিঠি দিয়ে শপথ গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।” মহকুমাশাসক দফতর সূত্রে জানা যায়, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শপথ না নিলে আইনি জটিলতা দেখা দিত। তাই শাহিদুল্লার চিঠি পাওয়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যে নিজের অফিসঘরেই শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করেন এসডিও আর অর্জুন। |