সচিবের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি কর্মীর
দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপস না-করার বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার জানাচ্ছেন, প্রশাসনে তিনি স্বচ্ছতা আনতে বদ্ধপরিকর। তাঁরই সরকারের একটি দফতরের খোদ সচিবের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছেন ওই দফতরেরই এক কর্মী।
দফতরটি হল প্রাণিসম্পদ বিকাশ। অনিয়মের জন্য আঙুল উঠেছে তারই সচিব রাজীব কুমারের দিকে। আঙুল তুলেছেন যিনি, দফতরের সেই কর্মী অভিযোগপত্রের সঙ্গে যাবতীয় ‘তথ্য-প্রমাণ’ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেশ করলেও নিজের নাম অবশ্য গোপন রেখেছেন। তাঁর বক্তব্য, নাম জানাজানি হলে তিনি সচিবের কোপে পড়তে পারেন। নিজের দফতরের শীর্ষ আমলার বিরুদ্ধে কী নালিশ এনেছেন তিনি?
মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ওঁর অভিযোগ, সচিব সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত ভাবে সরকারি অর্থে নিজের ও মেয়ের দিল্লি যাতায়াতের খরচ মিটিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, একই যাত্রার জন্য নিজের বিমানভাড়া আদায় করেছেন দু’বার। তথ্য-প্রমাণ দিয়ে চিঠিতে জানানো হয়েছে, সরকারি এক বৈঠকে যোগ দিতে রাজীব কুমার গত ২ অক্টোবর সকন্যা দিল্লি গিয়েছিলেন। ফিরে আসেন ৫ অক্টোবর। কিন্তু সচিবের তো বটেই, তাঁর মেয়ের বিমানভাড়াও চেক মারফত মিটিয়ে দিয়েছে প্রাণিসম্পদ দফতরের অধীন গৃহপালিত পশু উন্নয়ন নিগম, রাজীব কুমার যার কোনও পদেই নেই। ‘তা ছাড়া দফতরের সচিবের বিমানযাত্রার টিকিট যদি নিগম কেটেও দেয়, ওঁর মেয়ের ভাড়া মেটাল কোন যুক্তিতে?’ প্রশ্ন তোলা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
এখানেই শেষ নয়। আরও গুরুতর অভিযোগ তুলে চিঠিতে বলা হয়েছে, সচিব দিল্লি ঘুরে এসে নিজের টিএ (ট্রাভেলিং অ্যালাওয়েন্স) বিলে দিল্লির বিমানভাড়ার উল্লেখ করে ওই টাকা আবার নিজের দফতর থেকে তুলে নিয়েছেন। অর্থাৎ, তিনি নিগমের টাকায় দিল্লি যাতায়াত করলেন। তা-ও আবার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে। পরে সেই টিকিট দেখিয়ে দফতর থেকে ফের নিজের বিমানভাড়ার টাকা আদায় করলেন। ‘এক বার দিল্লি যাতায়াত বাবদ সরকারের কাছ থেকে উনি দু’-দু’বার নিজের ভাড়া, এবং এক বার মেয়ের বিমানের ভাড়া নিলেন। ঘোর অনিয়ম ছাড়া একে কী বলা যায়?’ প্রশ্ন অভিযোগকারীর। তাঁর আক্ষেপ, ‘দফতরের মেরুদণ্ডহীন অফিসারেরা কোনও প্রতিবাদ না-করে সচিবের বেআইনি কাজে সাহায্য করেছেন!’
নবান্ন-সূত্রের খবর, যে ট্র্যাভেল এজেন্টের কাছ থেকে রাজীব কুমারের দিল্লি আসা-যাওয়ার বিমান-টিকিট কাটা হয়েছিল, সেই ‘কন্টিনেন্টাল এক্সপ্রেস’কে চেক মারফত ৪১ হাজার ১৬৬ টাকা মেটানো হয়েছে ১ অক্টোবর। চেকে সই করেছিলেন গৃহপালিত পশু নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়ন্ত চৌধুরী। নিগমের খাতায় খরচটা কোন খাতে দেখানো হবে, জয়ন্তবাবু পরে (৭ অক্টোবর) দফতরের ডিরেক্টরকে চিঠি (মেমো নম্বর: এলডিসি-২৩৮/আরকেভিওয়াই(সি)/১৪৫৯) দিয়ে তা জানতেও চেয়েছেন। বস্তুত নিগমের চেকে সকন্যা সচিবের বিমানভাড়া মেটানো হলে হিসেবে তা কী ভাবে দেখানো হবে, নিগমের অফিসারেরাও তা নিয়ে ধন্দে। ওঁদের একাংশের দাবি, যে ভাবেই দেখানো হোক না কেন, ব্যাপারটা অডিটে ধরা পড়ে যেতে বাধ্য।
কোনও দফতরের সচিব কি এমন কাজ করতে পারেন?
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেনের অভিমত, “কোনও সচিবের পরিবারের কারও টিকিট নিগম কেটে দিতে পারে না। এটা নিয়মবিরুদ্ধ।” সচিবের নিজের ব্যাখ্যা কী?
রাজীব কুমারের দাবি, “আমি মেয়েকে নিয়ে দিল্লি যাতায়াত করেছি। সরাসরি ট্র্যাভেল এজেন্ট-এর কাছ থেকে টিকিট কেটেছিলাম। তবে টাকা তখন দিইনি। ফিরে এসে টিএ বিল করে টিকিটের টাকা হাতে পাওয়ার পরে দু’টো টিকিটের টাকা ট্র্যাভেল এজেন্টকে মিটিয়েছি।” যদিও দফতরের তথ্য তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না। কী রকম?
তথ্য বলছে, সচিব টিএ বিলের টাকা হাতে পেয়েছিলেন ১৬ ডিসেম্বর। সে ক্ষেত্রে তাঁর বয়ান অনুযায়ী, ১৬ ডিসেম্বরের পরেই তিনি ট্রাভেল এজেন্টকে টাকা মিটিয়েছেন। তা হলে ১ অক্টোবর নিগম ট্র্যাভেল এজেন্টকে যে চেক দিল, তা কীসের জন্য?
রাজীব কুমার বা নিগম-কর্তৃপক্ষের তরফে এর কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। “আমি এর বেশি আর কিছু বলব না।” মন্তব্য সচিবের।
আর নিগমের এমডি জয়ন্তবাবুর জবাব, “যা করেছি, দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে। এর বেশি আমি কিছু বলব না।” ট্র্যাভেল এজেন্সিটির মালিক সৌমেন চৌধুরী অবশ্য পরিষ্কার জানিয়েছেন, রাজীব কুমারের বিমান টিকিটের দাম তিনি মেটাননি। “আমাকে টাকা দিয়েছেন তো জয়ন্ত চৌধুরী! সম্ভবত কোনও এক নিগমের চেক দেওয়া হয়েছিল। রাজীব কুমারকে চিনি না।” বলছেন সৌমেনবাবু। দফতরের নথি অনুযায়ী, ১ অক্টোবর তিনি সেই চেক গ্রহণ করেন।
এমতাবস্থায় পুরো বিষয়টি ঘিরে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে প্রশাসনের অন্দরমহলে। কর্তাদের একাংশের মতে, অভিযোগকারী যে ভাবে খাস মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে তথ্য-প্রমাণ পেশ করেছেন, এবং যে ভাবে সরকারি নথিতে সে সবের সমর্থন মিলছে, তাতে অবিলম্বে বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন। প্রশাসনে স্বচ্ছতা এসেছে বলেই কি এক মামুলি কর্মী নিজের বড়কর্তার নামে একেবারে উপরমহলে নালিশ ঠোকার ভরসা পেলেন?
অর্ধেন্দুবাবু বলেন, “সরকার যদি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা দেখতে পায়, তা হলে দোষীকে কড়া শাস্তি দিতে হবে। তখনই বলা যাবে যে, প্রশাসনে স্বচ্ছতা এসেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.