ভূতের রাজার দেওয়া জুতোয় পা গলিয়ে গুপী আর বাঘা যেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন, সেই পাহাড়তলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ টলিউড অভিনেত্রী শুভশ্রী। ‘হীরক রাজার দেশ’-র আউটডোর পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী পাহাড়ে এসে শুভশ্রী স্বীকার করলেন, “এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ।”
শনিবার তাঁর হাত দিয়েই শুরু হল পাঁচ দিনের জয়চণ্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসব। মেলা চত্বরের পাশেই আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে জয়চণ্ডী পাহাড়। খাড়া ঢাল। আশপাশে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট টিলায় গজিয়ে উঠছে ছোট ছোট কটেজ, যুব আবাস, মোটেল। পর্যটকদের টেনে আনতে এ ভাবেই সাজানো হচ্ছে জয়চণ্ডী পাহাড়কে। ছোট টিলায় পর্যটন দফতর থেকে তৈরি করা হচ্ছে একাধিক কটেজ। পাশের জমিতেই যুব আবাস তৈরি করছে যুব কল্যাণ দফতর। জানুয়ারি মাস থেকে মোটেলের কাজে নামছে পূর্ত দফতর। রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্নচন্দ্র বাউরির কথায়, “জয়চণ্ডী পাহাড়কে ঘিরে সুসংহত পর্যটনকেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। তাই একাধিক দফতর এখানে পর্যটকদের থাকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নেমে পড়েছে।” তিনি জানান, জয়চণ্ডী পাহাড়কে জেলা তথা রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রের প্রথম সারিতে নিয়ে আসাই তাঁদের লক্ষ্য। |
রঘুনাথপুর শহরের অদূরে রয়েছে জয়চণ্ডী পাহাড়। বরাবরই এই পাহাড় প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয়। পাহাড়ের খাড়া গা ট্রেকারদের কাছেও আকর্ষণীয়। কিন্তু পাহাড়ের কোলে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা না গড়ে না ওঠায় পুরোদস্তুর পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠেনি। হীরক রাজার দেশে-র মাধ্যমে এই পাহাড়ের ছবি বিশ্বের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে। এ বার আন্তজার্তিক পর্যটকদের টেনে আনতে সেই পাহাড়কে ঘিরে পর্যটনের নিবিড় পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। আর পর্যটন উৎসবে এসে পাহাড়কে ঘিরে আতিথেয়তায় এই আয়োজন দেখে খুশি পর্যটকেরা। পর্যটনের উপর নির্ভরশীল স্থানীয় বাসিন্দারাও আর্থ-সামাজিক বিকাশের আশায় এই উদ্যোগকে ঘিরে উৎসাহীত হয়ে পড়েছেন। সব মিলিয়ে এ বারের পর্যটন উৎসবের মেজাজটাই বদলে দিয়েছে এই উদ্যোগ।
পাহাড়ের পাশেই টিলার উপরে জোরকদমে চলছে কটেজ নির্মাণের কাজ। রাজ্য পর্যটন দফতরের বরাদ্দ করা ৭৬ লক্ষ টাকায় কটেজ নির্মাণের কাজ চলছে। রঘুনাথপুর ১ বিডিও সুনীতিকুমার গুছাইত বলেন, “ডর্মিটরি-সহ পাঁচটি আধুনীক মানের কটেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। জুলাই মাস থেকে জোরকদমে কাজ শুরু হয়েছে। কটেজগুলি নির্মাণের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে।” তাঁর প্রত্যাশা, আগামী মার্চ মাসেই পর্যটকদের জন্য কটেজগুলি খুলে দেওয়া যাবে।
কটেজের পাশেই যুব কল্যাণ দফতর ৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করে যুব আবাস তৈরি করছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়েই এই যুব আবাসের অনুমোদন মিলেছিল। চার তলার যুব আবাসে ১৬০টি শয্যা থাকবে। বিডিও জানান, যুব আবাস নির্মাণ করবে পূর্ত দফতর। রঘুনাথপুরের পূর্ত দফতরের আধিকারিক অজয় ভট্টাচার্য বলেন, “প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ার পরে যুব আবাস নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” যুব আবাসের পাশেই হচ্ছে মোটেল। এ ক্ষেত্রে অর্থ দিচ্ছে পূর্ত দফতর। অজয়বাবু জানান, মোটেলের জন্য প্রয়োজনীয় জমি চিহ্নিতকরণ হয়ে গিয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকে নির্মাণ কাজ শুরু করতে চাইছি আমরা।” সব মিলিয়ে একাধিক দফতর উদ্যোগী হওয়ায় পর্যটনদের নজর টানবে বলেই আশাবাদী এলাকার মানুষজন। |
জয়চণ্ডী পাহাড়ে তৈরি হচ্ছে পর্যটক আবাস। |
বস্তুত ওই লক্ষ্য নিয়েই আট বছর আগে পাহাড়ের কোলে শুরু হয়েছিল পর্যটন উৎসব। নির্বিচারে গাছ কাটার জন্য পাহাড়ে সবুজের প্রলেপ মুছে দেখা দিয়েছিল রুক্ষতা। উৎসব কমিটির সম্পাদক সুকুমার মণ্ডল বলেন, “পাহাড়তে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আমরা দাবি জানিয়েছিলাম। সেই সঙ্গে পাহাড়ে ফের সবুজ ফিরিয়ে আনার জন্য স্থানীয় দু’টি পঞ্চায়েতের কাছে বনসৃজনের আর্জি জানিয়েছিলাম।” একশো দিনের প্রকল্পে ছ’হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। প্রশাসনের কাছে তাঁরা এলাকায় একটি শিশু উদ্যান, জলাশয়ে বোটিং শুরু করানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। পাহাড়ের রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর। বিডিও জানান, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের কাছে রাস্তা নির্মাণের জন্য ২৫ লক্ষ টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে শিশু উদ্যানের পরিকল্পনাও রয়েছে প্রশাসনের। সুকুমারবাবুর কথায়, “উৎসবের মধ্যে দিয়েই আমরা জয়চণ্ডী পাহাড়কে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে চাইছি। রাজ্য সরকার পর্যটনকেন্দ্র গড়তে এগিয়ে আসায় এ বার উৎসব ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।” |
শনিবার ছবি দু’টি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো। |