সম্পাদকীয় ...
গোপন কথাটি
সুইডেনে এক যন্ত্র আবিষ্কৃত হইল, যাহার সাহায্যে কুকুরের মনের কথা বুঝা যাইবে। কুকুরটির মাথায় একটি হেডফোন জাতীয় বস্তু পরাইয়া দেওয়া হইবে, ইহার সহিত একটি স্পিকার যুক্ত থাকিবে। কুকুরটির চিন্তা ইংরাজিতে অনূদিত হইয়া সেই স্পিকারটিতে ধ্বনিত হইবে। পোষ্য সারা দিন কী ভাবিতেছে, তাহা নিশ্চিত বুঝিতে পারিলে পুলকের অন্ত থাকিবে না, ‘আমার প্রভু শ্রেষ্ঠ’ মর্মে মুহুর্মুহু ঘোষণা শুনিয়া মনুষ্যের অহমিকা তৃপ্ত হইবে নিঃসন্দেহে, কিন্তু জটিলতাও বাড়িবে বিলক্ষণ। সর্ব ক্ষণ পাশাপাশি থাকিবার দৌলতে কুকুর সমগ্র দিন মানুষের কার্যাবলি লক্ষ করিতেছে, আর মানুষ তাহার সম্মুখে আদৌ সতর্ক থাকিবার প্রয়োজন বোধ না-করিবার ফলে সে অধিক তথ্য সংগ্রহ করিতেছে। সহসা পুরুষ-মনিব যদি শুনিতে পান কুকুর ভাবিতেছে, ‘এই আকাট কি জানে, তাহার স্ত্রী প্রতি দ্বিপ্রহরেই কাহাকে লইয়া শয়নকক্ষের দ্বার বন্ধ করিতেছে?’ হুলস্থুল পড়িবার সম্ভাবনা প্রবল। হইতে পারে, কুকুর লাফাইয়া-ঝাঁপাইয়া যতই উল্লাস প্রকাশ করুক, সে হয়তো অন্তরে প্রভুটিকে তীব্র ঘৃণা করে, বন্দিত্ব হইতে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা তাহাকে কুরিয়া খায়। সহসা স্পিকারে যখন প্রিয় টমি-র ‘হতচ্ছাড়া মরে না কেন’ প্রভুর গোচর হইবে, যখন মানুষ বুঝিবে, নেড়ি কুকুর দেখিয়া পোষা কুকুরটি বাহ্যত হম্বিতম্বি করিতেছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বলিতেছে, ‘ও স্বাধীন ভ্রাতা, আমার দাসত্ব দেখিয়া তোমাদিগের কৃপা জন্মে না? এই শয়তানটিকে সদলে ছিঁড়িয়া খাইয়া আমাকে মুক্ত করিতে সাধ যায় না? ধিক তোমাদিগের স্বাশ্রয়, যদি না তাহা অন্যের পরাধীনতা মোচনের তাড়না প্রসব করে!’ তখন মানুষ হয়তো বাহুবলে অন্যকে নিজ অধীন করিয়া তত্‌পরে তাহার প্রতি আদিখ্যেতা বর্ষাইবার উদ্ভট অভ্যাস লইয়া ভাবিতে বসিবে।
অন্যের মন পড়িবার আকাঙ্ক্ষা মানুষের প্রবল। কিন্তু ফ্যান্টাসিটি আসলে হইল: ইস, আমি যদি অন্যের মন পড়িতে পারতাম, আর অন্য কেহ তাহা না পারিত! কারণ সকলে সকলের মন পড়িতে পারিলে, সমাজ তত্‌ক্ষণাত্‌ উঠিয়া যাইবে। কোনও মনুষ্য-সম্পর্কই তিনি মিনিটের অধিক স্থায়ী হইবে না, কারণ স্ত্রী স্বামীকে হৃদয়হীন পশু বলিতেছেন, মাতা সন্তানের মুণ্ড ছাইগাদায় ঘষিয়া দিতে চাহিতেছেন, সন্তান পিতাকে আড়ং ধোলাই দিবার কামনায় মরিতেছে, এইগুলি অহোরাত্র উচ্চারিত হইলে, সংসার ছারখার হইতে বাধ্য। রাস্তায় দেখা হইবামাত্র প্রতিবেশীদ্বয়ের লাঠালাঠি লাগিয়া যাইবে। রামবাবু ভাবিয়াছেন, ‘ইহার দাঁতগুলি কী কুত্‌সিত!’, শ্যামবাবু ভাবিয়াছেন, ‘কলহপ্রবণ মর্কটটি অন্যত্র বাড়ি ভাড়া পায় না?’ এমনকী কেহ যদি কারও প্রতি প্রবল মুগ্ধও হইয়া পড়ে, সেই মোহের প্রকৃত রূপ হজম করা আদৃত ব্যক্তির পক্ষে কিছু কঠিন হইবে। ‘নারীটির দেহসৌষ্ঠব অতুলনীয়, উহার অধিকার অর্জন করিতে ইচ্ছা করিতেছে’ শুনিয়া, প্রেম স্বীকার করা কিঞ্চিত্‌ দুরূহ। এই সমাজকে ধরিয়া রাখিয়াছে মিথ্যার প্রতি আমাদের বিশ্বাস ও ভালবাসা। আমরা বহু সত্য জানিয়াও ভুলিয়া থাকি, বা বিশ্বাস করি না, তাই সভ্যতা গড়গড়াইতেছে। ভানভিত্তিক এই চরাচরে সত্য যদি নিজেকে সমূলে প্রতিষ্ঠিত করে, সভ্যতা বিলুপ্ত হইবে। হয়তো তাহার পর ক্ষুদ্র সমাজ গঠিত হইবে, যেখানে হৃদয়পঠন-যন্ত্র নিষিদ্ধ। পুরাণকথায় সেই মানবকে আরাধনা করা হইবে, থট-রিডিং যন্ত্রেও যাঁহার মনের কোনও মালিন্য ধরা পড়ে নাই। অথবা কোনও কর্কশ রাষ্ট্র এই যন্ত্রটিকে কেবল প্রশাসকদের কুক্ষিগত করিয়া রাখিবে, যাহাতে সাধারণ মানুষ ইহার সহিত বসবাস না করিতে পারে, কিন্তু পুলিশ ইহার সাহায্যে কোনও বিদ্রোহের চিন্তা অঙ্কুরিত হওয়ামাত্র তাহাকে বিনাশ করিতে পারে। সেই রাষ্ট্রে তখন সাধনা শুরু হইবে শাসকযন্ত্রের সম্মুখে নিজ হৃদয় চিন্তাশূন্য করিবার, বা মিথ্যা চিন্তা অনুসরণের। যাহাই ঘটুক, ব্যাপক গণ্ডগোল এড়াইয়া সেই পৃথিবীতে কাহারও সারমেয় পুষিবার সাধ জাগিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.