হিতেনের দফতরে এ বার বিনয়, দুই ছবি কোচবিহারে
কই এলাকা থেকে নবান্নের ঘরে দফতরের দায়িত্ব নিয়ে একজন ঢুকলেন। অন্যজন বেরিয়ে গেলেন। রাজ্য মন্ত্রিসভার রদবদলে কোচবিহারের মাথাভাঙার বাসিন্দা, তৃণমূলের দুই বিধায়কের মন্ত্রিসভায় প্রবেশ ও প্রস্থান ঘিরে তাঁদের অনুগামীদের মধ্যে আনন্দ-হতাশার দুই চিত্র দেখল কোচবিহার।
বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার রদবদলে নতুন মুখ হিসাবে জায়গা পেয়েছেন মাথাভাঙার বিধায়ক বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। তাঁকে দেওয়া হয়েছে বন দফতরের দায়িত্ব। ওই দফতরের সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী হিতেন বর্মন, মাথাভাঙা মহকুমার শীতলখুচি কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতার পালাবদল পর্বে মন্ত্রিসভায় জায়গা পান। তবে তিন বছরের মাথায় হিতেনবাবুকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে আসন্ন ভোটে আমরা বড় ব্যবধানে জিততে চাই। সেইজন্য রাজ্য নেতৃত্ব হিতেনবাবুকে সংগঠনের কাজে লাগাতে চাইছেন।”
নয়া বনমন্ত্রীর বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন পরিজনেরা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
জেলা নেতারা যাই বলুন, মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘিরে কয়েকদিন থেকেই জেলা তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা ছিল। গত বুধবার রাতে অবশ্য ওই রদবদলের খবরে কোচবিহারের চিত্রনাট্যের আন্দাজ মেলে। ফলে আনন্দ ও হতাশার চাপা রেশ ছিল দলীয় স্তরে। বৃহস্পতিবার টিভিতে একই জেলার বাসিন্দা হিতেন বর্মনের দায়িত্ব বদলে বিনয়বাবুকে বনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণার পর দুই শিবিরের ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যায়।
নয়া বনমন্ত্রী বিনয়বাবুর খাসতালুক মাথাভাঙা মহকুমার রুইডাঙা, ঘোকসাডাঙা, নিউ চ্যাংরাবান্ধা, প্রেমেরডাঙা, লতাপোতা, নিশিগঞ্জ এলাকায় রীতিমতো বাজি ফাটিয়ে উল্লাসে মাতেন দলের কর্মী সমর্থকরা। বিনয়বাবুর বাড়িতে পরিবারের লোকেরা তো বটেই মাথাভাঙার বিভিন্ন দলীয় দফতরে তাঁর অনুগামীরা রসগোল্লা বিলি করেন। কিছু এলাকায় অতি উৎসাহী বিনয়-অনুগামীরা আবির খেলে হুল্লোড় করেন। নয়া বনমন্ত্রী বিনয়বাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর আস্থার মর্যাদা রাখার চেষ্টা করব। জঙ্গল ধ্বংস বন্ধে সচেতনতা বাড়ানোই হবে আমার প্রথম কাজ।”
এ দিন অকাল হোলিতে মাতেন মাথাভাঙা ২ ব্লকের তৃণমূল যুব কংগ্রেস নেতা রাজীব দত্ত। তিনি বলেন, “বিনয়কাকু বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন দেখে আমরা দারুণ খুশি। মিষ্টি বিলি, বাজি থেকে আবির খেলা সবই হয়েছে।” নিশিগঞ্জের বাসিন্দা তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি মোজ্জাফর রহমান বলেন, “এলাকার বিধায়ক মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন বলে দারুণ আনন্দ হচ্ছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। বিনয়বাবু ফিরলে কী ভাবে ওঁকে বরণ করা হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা ঠিক করতে এ দিন বৈঠক হয়েছে।” তৃণমূল কৃষক সংগঠনের শীতলখুচি ব্লক সভাপতি সায়ের আলি মিঁয়া বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে আমরা অত্যন্ত খুশি।”
উল্টো ছবি হিতেন অনুগামী শিবিরে। মাথাভাঙায় তাঁর অনুদামীদের শ্রমিক সংগঠনের অফিসে কার্যত চুপচাপই ছিল। সংগঠনের মহকুমা কমিটির নেতা আলিজার রহমান বলেছেন, “দলনেত্রীর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। আমাদের কাছে সবসময়ই তা শিরোধার্য।” দলের শীতলখুচি ব্লক সভাপতি আবেদ আলি মিঁয়া বলেন, “আগের মন্ত্রী কাছের লোক ছিলেন, নতুন মন্ত্রীও তো আমাদেরই লোক। সমস্যা হবে না।’’
দলীয় সূত্রের খবর, এ দিন দিনভর বাড়িতেই ছিলেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ছাড়া কারও সঙ্গে দেখা করেননি। বিতর্ক এড়াতে হিতেনবাবু শুধু বলেছেন, “দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এখন কোনও মন্তব্য করব না।” হিতেনবাবু মুখে কিছু না বললেও তাঁর অনুগামীদের একাংশের দাবি, উনি প্রাক্তন সাংসদ। সামনে লোকসভা ভোট। জেলার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে ওঁর নাম রয়েছে বলেই মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, হিতেনবাবু মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর মাথাভাঙায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব জোরালভাবে মাথাচাড়া দেয়। অন্যদিকে বন দফতরের কাজ নিয়েও খোদ মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি ‘রিভিউ মিটিংয়ে’ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সময় পরিষ্কার হয়ে যায় যে কোনও সময়ই তাঁকে সরানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে দলের দায়িত্ব বা লোকসভার টিকিট হিতেনবাবুকে দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

খুশির হাওয়া বালুরঘাটেও
স্থানীয় বিধায়ক তথা সমবায় মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী পূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার খবরেই বালুরঘাটের তৃণমূল শিবিরে খুশির হাওয়া। বৃহস্পতিবার পূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার খবর পৌঁছতে শহরেj একাংশ তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়। বালুরঘাটের কংগ্রেস পাড়ায় মন্ত্রীর বাড়িতে দলের কর্মীরা ভিড় করেন। বিকালে মন্ত্রী কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে শঙ্করবাবু বলেন, “সবে দায়িত্ব পেয়েছি। সব কিছু বুঝে নি। তার পরে বক্তব্য জানাব।” বালুরঘাটের বিধায়ক শঙ্কর চক্রবর্তীকে প্রথমে কারা এবং অচিরাচরিত শক্তি মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বছর না ঘুরতে অচিরাচরিত শক্তি দফতরের দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গতবছর কারা দফতর থেকে সরিয়ে তাঁকে সমবায় মন্ত্রী করা হয়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “শঙ্করদা পূর্ত দফতরের দায়িত্ব পাওয়ায় জেলার উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.