তল্লাশিতে গিয়ে অত্যাচারে অভিযুক্ত পুলিশ
বালির ট্রাক্টর আটক করায় ভূমি সংস্কার দফতরের দুই আধিকারিক ও পুলিশ কর্মীদের মারধরের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আরও একজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এই নিয়ে ওই অভিযোগে মোট তিন জনকে গ্রেফতার করা হল। যদিও ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত উপ-প্রধান-সহ দুই নেতাকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নাগালে পায়নি পুলিশ। তার মধ্যেই পুলিশের বিরুদ্ধে তল্লাশির নামে মহিলা ও পুরুষদের অত্যাচার করার অভিযোগ তুলে পাত্রসায়রের বিডিও-র কাছে বৃহস্পতিবার গণস্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র জমা দেন এলাকায় প্রায় এক হাজার বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বও রয়েছেন। যদিও স্থানীয় পুলিশ কর্মীরা অভিযোগ মানতে চাননি। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্য তদন্ত করে দেখা হবে।”
সোমবার পাত্রসায়রের দত্তবাড়ি গ্রামের কাছে বাঁকুড়া-বর্ধমান রাস্তায় বালিভর্তি একটি ট্রাক্টর আটকাতে গিয়ে আক্রান্ত হন ভূমি সংস্কার দফতরের দুই আধিকারিক ও দুই পুলিশকর্মী। ওই ঘটনায় স্থানীয় বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের বকুল মিদ্যা ও স্থানীয় কৃষি সমবায়ের চেয়ারম্যান ডালিম মিদ্যা-সহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ঘটনার দিনই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ওই দুই নেতা জড়িত নয় বলেই দাবি করেছিলেন। পুলিশ দাবি করছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই দুই নেতার খোঁজ মেলেনি।
এ দিকে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ওই এলাকা থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করে। বুধবার রাতে কাঁটাদিঘি গ্রাম থেকে নজরুল হক মিদ্যা নামে একজনকে ওই ঘটনায় ধরা হয়েছে। এ দিন ধৃতকে বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে ১৩ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পুলিশের কাছে কেস ডায়েরি তলব করে আগামী ৩০ ডিসেম্বর টিআই প্যারেডের নির্দেশ দেন বিচারক। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত তিন জনকে ধরা হয়েছে। সব অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা চলছে।”
কিন্তু ঘটনার পর থেকেই প্রতি রাতে পুলিশ বাহিনী ফকিরডাঙা, খয়েরবুনি, বরকতচক, কাঁটাদিঘি, ইদিলচক, সেকেন্দারচক-সহ আশেপাশের গ্রামে তল্লাশি চালাতে গিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীদের মারধর করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। কাঁটাদিঘি গ্রামের শেখ শাহজাহান, শেখ ইব্রাহিমদের অভিযোগ, “আমরা ওই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবে জড়িত নই। তা সত্ত্বেও বুধবার গভীর রাতে পুলিশ আমাদের বাড়িতে ঢুকে ঘুম থেকে তুলে বেধড়ক মারধর করে। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা করাতে হয়েছে।”
ওই অভিযোগকে সমর্থন করে গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এলাকার বাসিন্দা তথা পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের জুলফিকার ভুট্টো, হাসান মিদ্যার অভিযোগ, “মঙ্গলবার ও বুধবার রাতে এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) পরাগ ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশ গ্রামে-গ্রামে তল্লাশি চালাতে গিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীদের মারধর করেছে। কাঁটাদিঘি গ্রামে ঝুমা বেগম, জ্যোৎস্না খাতুন নামে দুই মহিলাকেও তারা মারধর করেছে। শাহ সুলেমান নামে এক প্রৌঢ় মঙ্গলবার রাতে পুলিশের মারধরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করতে হয়েছে।” তাঁদের দাবি, পুলিশের অত্যাচারে রাতে বাড়িতে থাকা দায় হয়ে উঠেছে গ্রামের মানুষের। পাত্রসায়রের বিডিও অপূর্বকুমার বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁরা এ দিন সন্ধ্যায় দেখা করে অভিযোগ জানান। তবে পুলিশের এক আধিকারিক দাবি করেছেন, সুলেমানকে মদ খেয়ে এলাকায় ঘোরাঘুরি করার অভিযোগে ধরা হয়েছিল। থানায় নিয়ে আসার পরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। মারধর করা হয়নি। যদিও তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “পুলিশ কয়েকটি গ্রামের নিরীহদের বাড়িতে ঢুকে অযথা রাতে হেনস্থা করছে বলে অনেকের কাছেই মৌখিক ভাবে অভিযোগ পেয়েছি। এমনটা না করে পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক এটাই আমরা চাইছি। একই সঙ্গে এলাকার মানুষকেও সংযত হতে বলছি।”
এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, “অভিযুক্তদের ধরার জন্য বাড়িতে তল্লাশি চালানো হলেও কাউকে মারধর করা হয়নি। পুরোটাই অপপ্রচার।” তবে পুলিশের উপর চাপ বজার রাখতে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব এই ভাবে তল্লাশি চললে তারা আন্দোলন শুরু করবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন। পাত্রসায়রের বিডিও অপূর্বকুমার বিশ্বাস বলেন, “ওঁদের অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.