ভোজালি নিয়ে আক্রমণ যুবকের,
জখম প্রেমিকা ও তার মা-ঠাকুমা
ভোজালি হাতে আক্রমণ করে প্রেমিকাকে ক্ষত-বিক্ষত করল এক যুবক। মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন তার মা ও ঠাকুমা। জখম হয়েছেন তাঁরাও। পরে ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঘটনাস্থল সেই জগদ্দল থানার শ্যামনগর। কিছু দিন আগেই যেখানে শাঁওলি বিশ্বাস নামে একাদশ শ্রেণির এক কিশোরীকে গলার নলি কেটে খুন করে তার প্রাক্তন প্রেমিক শিশির ঘোষ। পরে জনতা গণধোলাই দেয় তাঁকে। শাঁওলি অন্য যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে, এই অজুহাতেই তার উপরে প্রাণঘাতী হামলা করেছে বলে পুলিশকে জানায় শিশির।
ঘটনাচক্রে, বুধবার রাতে শ্যামনগরের আতপুরের বঙ্কিমনগরের আক্রান্ত কিশোরীও স্থানীয় একটি স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।
ধৃত লিটন।
বার বার একই এলাকায় একই ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁদের কয়েক জন বলেন, “আমাদের মেয়েরাও স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে। সব সময়ে সঙ্গে থাকা সম্ভব হয় না অভিভাবকদের। এই বয়সে ওদের জীবনে সম্পর্কের ভাঙাগড়াও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তার জেরে যে সব কাণ্ড ঘটছে, তাতে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।” প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হলে ইদানীং যুবকেরা যে ভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে, তাতে ছেলের বাড়ির লোকজনও বিস্মিত। কয়েক জনের কথায়, “বড় হয়ে ওঠার পরে ছেলেকে কত আর চোখে চোখে রাখা যায়। এই বয়সে প্রেম ভাঙতেই পারে। নতুন সম্পর্ক শুরুও হয়। কোনও একটি সম্পর্কে ব্যর্থ হয়ে কেন ছেলেরা এ ধরনের পদক্ষেপ করছে বার বার, তা আমাদের বোধগম্য হয় না।”
স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় আগে তো কখনও এ রকম ঘটনা ঘটেনি। এখন অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা অবাধে মেলামেশা করছে। বাধা দিলেও বিপত্তি হয়। কী করে বসে ঠিক নেই। জীবন সম্পর্কে ওদের ধারণা কম বলেই এ ধরনের হঠকারিতা করে।”
কী হয়েছিল বুধবার রাতে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, লিটন দাস নামে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে ওই কিশোরীর সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বাবা বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মী। তিনি ঘটনার সময়ে বাড়িতে ছিলেন না। মেয়েটি জানায়, লিটন হঠাৎই আচমকাই ঘরে ঢুকে গালিগালাজ শুরু করে। সে নেশা করে এসেছিল। মেয়েটি বলে, “লিটন নিজের মাথার উপরে ভোজালিটা কয়েক পাক ঘুরিয়েই আমার ঘাড়ের কাছে কোপ মারল। মা বাধা দিতে গেলে মায়ের হাতের অনেকটা কেটে যায়। ঠাকুমাকেও রেহাই দিল না। ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। ও আমাদের এলোপাথাড়ি কুপিয়ে যাচ্ছিল।” চিৎকার-চেঁচামিচিতে পাড়ার লোকজন ছুটে আসেন। তার আগেই অবশ্য লিটন পালায়। জখম তিন জনকে নিয়ে যাওয়া হয় ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ হয়ে সকলকে পাঠানো হয়েছে কলকাতার হাসপাতালে। মেয়েটির ঠাকুমার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে।
মরচে পড়া এই ভোজালি নিয়েই আক্রমণ শানিয়েছিল সে।
এ দিকে, ঘটনার পরে রক্তমাখা ভোজালি রাস্তার ধারে নর্দমায় ফেলে দিয়েছিল লিটন। পরে সেটি উদ্ধার করে পুলিশ। ভোরের দিকে গ্রেফতার করা হয় ওই যুবককেও। বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে চার দিন পুলিশি হেফাজতের রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
পাড়ায় বখে যাওয়া ছেলে হিসেবেই পরিচিত লিটন। স্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি। কখনও কেটারিংয়ের কাজ করে। শ্যামনগর বাজারে মাংসের দোকানে মুরগি কাটার কাজও করে সে। কিশোরীর বাবা বলেন, ‘‘মেয়েকে বুঝিয়েছিলাম, ছেলেটা নেশা করে। বদ সঙ্গ আছে। ওর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না রাখতে। মেয়ে বুঝতে পেরে যোগাযোগ বন্ধও করে দেয়। তাতেই খেপে ওঠে ছেলেটা। প্রথমে কয়েকবার শাসিয়েছিল। মেয়েকে কখনও-সখনও উত্যক্ত করত স্কুলে যাওয়া-আসার পথে। কিন্তু এত ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবে, ভাবতে পারছি না।’’ লিটনের মা মিনুদেবীও ছেলের সম্পর্কে হতাশ। চার ছেলের মধ্যে ছোট লিটন সম্পর্কে মা বলেন, “এমন অমানুষ ও কী করে হল, বিশ্বাসই করতে পারছি না। ওর সাজা হওয়াই উচিত।’’

বৃহস্পতিবার ছবি দু’টি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.