|
|
|
|
তমলুক জেলে বন্দিদের হাতে প্রহৃত দুই কারারক্ষী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
সংশোধনাগারে বন্দিদের হাতে মার খেলেন খোদ মুখ্য কারারক্ষী -সহ দু’জন। বৃহস্পতিবার সকালে তমলুক উপ -সংশোধানাগারে এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়।
আহত দিবস সানকি ও শুকদেব জানাকে উদ্ধার করে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে মুখ্য -কারারক্ষী দিবস সানকিকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। ঘটনার তদন্তে এদিনই তমলুক সংশোধানাগারে আসেন কারা দফতরের এআইজি কল্যাণকুমার প্রামাণিক ও ডিআইজি শোভন কুমার দিন। তাঁদের কাছে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ জানান কারারক্ষীরা। বঙ্গীয় কারারক্ষী সমিতির সার্কেল সম্পাদক কার্তিক সাহু বলেন, “বিভিন্ন সংশোধানাগারের মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যক কারারক্ষী না থাকার কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। সংশোধানাগারের মধ্যে বিভিন্ন ঘটনা ঠেকাতে ও নিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে শূন্য পদে কারারক্ষী নিয়োগ করতে হবে। আর এদিনের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।”
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এদিনই তমলুক থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন কারা -কর্তৃপক্ষ। উপ -সংশোধানাগারের সুপার তথা তমলুকের মহকুমাশাসক প্রশান্ত অধিকারী বলেন, “কারারক্ষীকে মারধরের ঘটনা জানতে পেরেছি। সংশোধানাগারের আধিকারিকের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি।”
তমলুক উপ -সংশোধানাগারে এখন প্রায় ১০৮ জন বন্দি রয়েছেন। দু’দিন আগে ওই সংশোধানাগারে দেওয়া খাবারের তরকারিতে আলু কম অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বেশ কিছু বন্দি। এমনকী সেদিন সন্ধ্যায় বন্দিরা সেলের ভিতরে ঢুকতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ। মুখ্য -কারারক্ষীর হস্তক্ষেপে বন্দিরা সেলের ভিতরে গেলেও ক্ষোভটা চাপা ছিলই। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ সংশোধানাগারের বন্দিদের প্রাতরাশ দেওয়ার জন্য সেলের বাইরে আনা হলে মারধরের ঘটনাটি ঘটে। |
|
তমলুক হাসপাতালে মুখ্য কারারক্ষী দিবস সানকি। |
এদিন সংশোধানাগারের আধিকারিক ছুটিতে থাকায় দ্বায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন মুখ্য -কারারক্ষী দিবস সানকি। তিনি ছাড়াও ছিলেন আর এক কারারক্ষী শুকদেব জানা। বেশ কয়েকজন বন্দি আচমকা দল বেঁধে ওই দুই কারারক্ষীর উপর চড়াও হয়ে মারধর শুরু করে। বিশেষ করে মুখ্য -কারারক্ষী দিবাকর সানকিকে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে বন্দিরা। খবর পেয়ে তমলুক থানার পুলিশ বাহিনী আসে। পুলিশ ও সংশোধানাগারের কর্মীরা আহত দু’জনকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সংশোধানাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, মারধরের ঘটনার মূল পান্ডা ছিল মুকুন্দ বেরা ওরফে দীপু, মুন্না, অমিত সিংহ নামে তিন বন্দি। হলদিয়ার বাসিন্দা দীপু জাতীয় সড়কে মালবোঝাই লরি ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত, মুন্না ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত, অমিত সিংহ ডাকাতি ও গাঁজা পাচারের ঘটনায় অভিযুক্ত। এর মধ্যে দীপুর নেতৃত্বেই জনা কুড়ি বন্দি মুখ্য -কারারক্ষীকে মারধর করে। দাগী দুষ্কৃতী দীপুর বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকবার ঝামেলা পাকানোর অভিযোগ উঠেছিল। রক্ষীদের একাংশ জানিয়েছে, সংশোধানাগারে প্রায় এক বছর ধরে থাকা দীপু রীতিমতো দাদাগিরি করত। অন্য বন্দিদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ তুলে মাঝেমাঝেই ঝামেলা বাধাত। সংশোধানাগারের মুখ্য -কারারক্ষী দিবস সানকি কড়া ভাবে বন্দিদের সামলাতেন বলে দীপুর রাগ ছিল। জেলা হাসপাতালে ভর্তি মুখ্য -কারারক্ষী অবশ্য মনে করছেন দু’দিন আগের খাবার নিয়ে ক্ষোভ -বিক্ষোভের জেরে এই হামলা।
আর কারারক্ষীদের বক্তব্য, কারণ যা -ই হোক না কেন, সংশোধানাগারে প্রয়োজনের তুলনায় কারারক্ষী কম থাকায় বন্দিরা মারধর করার সাহস পেয়েছে। সবার আগে তাই কারারক্ষীর সংখ্যা বাড়তে হবে। সংশোধানাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন জন মুখ্য -কারারক্ষী ও ১৬ জন রক্ষী মিলিয়ে মোট ১৯ জন থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে এখানে মুখ্য -কারারক্ষী রয়েছেন মাত্র একজন, রক্ষী ১১ জন। অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ রক্ষীপদ শূন্য। ফলে সংশোধানাগারের ভিতরে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত প্রায় একশোর বেশি বন্দিকে সামালানো মুশকিল হয়ে উঠেছে দ্বায়িত্বে থাকা কারারক্ষীদের। বৃহস্পতিবারের ঘটনা সংশোধানাগারের নিরস্ত্র কারারক্ষীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি ফের সামনে আনল। |
|
|
|
|
|