হাতির মর্জি বোঝা ভার! দলমার ১৩০টি হাতির পাল এক রাতের মধ্যে ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের এলাকা হয়ে কংসাবতী নদী পেরিয়ে সদর ব্লকের চাঁদড়ার দিকে চলে গেল।
বুধবার রাতে হাতিদের তাণ্ডবে ঝাড়গ্রামের সর্ডিহা অঞ্চলের তিলডাঙা গ্রামে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অভিভাবকদের দাবি, হাতিদের তাণ্ডব চলাকালীন বলরাম মুদি (৪) আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ভয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যায় সে। ঝাড়গ্রামের ডিএফও আশিসকুমার সামন্ত বলেন, “সরাসরি হাতির হামলায় শিশুটির মৃত্যু হয়নি। শিশুটি যে বাড়িতে ছিল, হাতির হামলায় ওই বাড়িটির একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুটি আগে থেকেই অসুস্থ ছিল।”
বুধবার রাতে ফেরার পথে ঝাড়গ্রাম ব্লকের সর্ডিহা ও চুবকা অঞ্চলের সাতটি গ্রামে আক্রমণাত্মক ভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে হাতিরা। বন দফতর সূত্রের খবর, হাতির পালের হামলায় ওই সাতটি গ্রামের ৩৫টি মাটির বাড়ি ধূলিসাৎ হয়েছে। গৃহস্থের ঘরে হামলা চালিয়ে গোলায় মজুত ধান-চাল লুঠ করেছে হাতিরা। হাতিদের পায়ের চাপে সব মিলিয়ে ৭০ একর জমির বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন মানিকপাড়ার ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার বিজনকুমার নাথ। ডিএফও আশিসবাবু জানান, রেঞ্জ অফিসার বিজনবাবুর রিপোর্ট অনুযায়ী, যে সব গ্রামবাসীর বাড়ি ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
কয়েক দিন আগে ওই ১৩০টি হাতি নয়াগ্রাম থেকে খড়্গপুর বন বিভাগের কলাইকুণ্ডা রেঞ্জ এলাকার শঙ্করবনির জঙ্গলে চলে আসে। সঙ্গে দু’টি সদ্যোজাত শাবক থাকায় দলমার পালের হাতিরা চটজলদি কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের শঙ্করবনি জঙ্গল ছেড়ে যেতে চাইছিল না। গত দু’দিন হাতিরা সেখানেই ছিল। মঙ্গলবার রাতে সাঁকরাইল ব্লকের ৫টি গ্রামে দফায় দফায় তাণ্ডব চালিয়েছিল হাতিরা। বন দফতর সূত্রের খবর, বুধবার সন্ধে হতেই হাতির পালটি শঙ্করবনি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে চাঁদড়ার ‘রুট’ ধরে। রাত দশটা নাগাদ ঝাড়গ্রামের গুপ্তমণি ও বালিভাসার মাঝে বলদমারার কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক মুম্বই রোড পার হয় হাতিরা। ওই সময় প্রায় পনেরো মিনিট জাতীয় সড়কের দু’দিকে সার-সার পণ্যবাহী লরি ও অন্যান্য যানবাহন দাঁড়িয়ে যায়। উৎসাহী জনতা হাতির পালের পিছু নেয়। হাতিদের তাড়া খেয়ে ছুটে পালানোর সময় বলদমারা গ্রামের যুবক প্রশান্ত মাহাতো পড়ে গিয়ে জখম হন।
এরপর হাতিরা বলদমারা, ঘাগরাশোল, সাতবল্লা, বল্লা, চাড়দা, তিলডাঙা ও চিতলবনি গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে রাত তিনটে নাগাদ গড়মোহানের কাছে কংসাবতী পেরিয়ে মণিদহ ঘাট হয়ে মেদিনীপুর বন বিভাগের চাঁদড়ার দিকে চলে যায়। |