বড়দিনের রাত থেকে পরপর পাঁচ দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৬ জনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বড়দিনের রাতে, হইচইয়ের মধ্যেই শহরে চার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পাঁচ জন। তার রেশ কাটতে না কাটতেই বৃহস্পতিবার রাতে ফের মৃত্যু হয় আর এক কিশোরের। বুধবারের একটি দুর্ঘটনায় আহত এক জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে।
বুধবার, বড়দিনের রাতে একসঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন চার বন্ধু। দু’টি মোটরবাইকে ছিলেন চার জন। বালিঘাট স্টেশনের কাছে আচমকাই কুয়াশা মোড়া অন্ধকার ভেদ করে পিছনের বাইকে থাকা দু’জন দেখতে পান সামনে আগুনের ফুলকি। কানে আসে বিকট আওয়াজ। পঞ্চাশ মিটার দূরে কী ঘটছে, তা ঠাহরই করতে পারছিলেন না তাঁরা। সামনে এগোতেই দেখলেন তাঁদেরই দুই বন্ধু রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে। দুমড়ে-মুচড়ে মোটরসাইকেলটি পড়ে কিছুটা দূরে।
পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম পীযূষ রকি কুজুর (২৩) ও অনীশ পীযূষ কুজুর (২৩)। লিলুয়া ভট্টনগরের এসএমপিসি কমপ্লেক্সের বাসিন্দা রেলকর্মী রেমিশ কুজুরের ছেলে পীযূষ গোয়েন্কা কলেজ অব কমার্স থেকে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক হয়ে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অন্য দিকে, দাশনগর শানপুর রোডের বাসিন্দা পল প্যাট্রিক কুজুরের ছেলে অনীশ ওই কলেজেরই বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র।
বড়দিন উপলক্ষে কমপ্লেক্সেরই এক বন্ধু সতীশরঞ্জন বড়ার বাড়িতে নিমন্ত্রণ ছিল অনীশ ও পীযূষের। বৃহস্পতিবার সকালে বালি থানায় এসে সতীশ জানান, ওই রাতে তাঁর বাড়িতে আসেন অনীশ ও পীযূষ। সঙ্গে ছিলেন সতীশের এক দাদা অমিত। রাতের খাওয়া সেরে ১১টা নাগাদ চার জন দু’টি মোটরসাইকেল নিয়ে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গিয়েছিলেন চা খেতে। সেখান থেকে ১২টা নাগাদ ফেরার পথেই দুর্ঘটনা। |
সতীশ বলেন, “বালি ব্রিজ পেরিয়ে বালি হল্টের রাস্তায় নামতেই দেখলাম পীযূষরা আমাদের মোটরসাইকেল টপকে বেশ জোরে সামনে এগিয়ে গেল। অন্ধকারে কিছু বুঝতে পারছিলাম না। আচমকা দেখি দূরে কিছু একটা থেকে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছে। সঙ্গে বিকট আওয়াজ।” সামনে গিয়েই সতীশ ও অমিত দেখেন, বাঁক নেওয়ার সময়ে বালিঘাট স্টেশনের নীচে পড়ে পীযূষ। হেলমেট ভেঙে গিয়েছে। কোমরের কাছে গভীর ক্ষত। কিছুটা দূরে অনীশ। তাঁর মাথার বাঁ পাশ থেঁতলে গিয়েছে।
খবর পেয়েই পৌঁছয় বালি থানায় পুলিশ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুই যুবককে জায়সবাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁদের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়। পুলিশের অনুমান, অন্ধকার রাস্তায় বাঁক বুঝতে না পেরে স্টেশনের সেতুর রেলিংয়ে খুব জোরে ধাক্কা মেরেছিলেন পীযূষরা।
দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় বাড়িতে ও পাড়ায় নেমে আসে শোকের ছায়া। খবর পাওয়ার পর থেকেই কথা বলার অবস্থায় নেই পীযূষের মা শোভা এবং অনীশের মা মেরি গ্রিস। সারাক্ষণই কেঁদে চলেছেন। পীযূষের বাবা রেমিশ বলেন, “রাত ১১টায় ফোন করেছিলাম, ছেলে বলল কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে। দেড়টার সময় এল দুর্ঘটনার খবর।” অনীশের বাবা পল প্যাট্রিক বলেন, “ছেলে বলেছিল বন্ধুর বাড়িতে পার্টি, তাই বাড়ি ফিরবে না। সত্যিই আর ফিরল না!”
বুধবারই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ উল্টোডাঙার হাডকো মোড়ের কাছে বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধের। পুলিশ জানায়, মাথায় গুরুতর চোট-সহ অজিত মোদক (৭৩) নামে ওই বৃদ্ধকে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। ওই রাতেই সাড়ে ১০টা নাগাদ কড়েয়া থানা এলাকায় একটি গাড়ি এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে ধাক্কা মারে। আহত ওই ব্যক্তিকে মেডিক্যাল কলেজে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বছর চল্লিশের ওই ব্যক্তি ফুটপাথেই থাকতেন।
ওই রাতেই হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালাতে গিয়ে ফের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় আরোহী আরশাদ আনসারির (২২)। পুলিশ জানায়, মানিকতলা থানা এলাকার বাগমারি কবরখানার সামনে আরশাদ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন। পিছনের আসনে ছিলেন মহম্মদ সরফরাজ নামে আর এক যুবক। বাঁ পা ও মাথায় আঘাত নিয়ে আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সরফরাজ। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, দুই যুবকেরই মাথায় হেলমেট ছিল না।
অন্য দিকে, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় যশোহর রোডের নিউ ব্যারাকপুর মোড়ে একটি বেসরকারি বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় মহম্মদ ইসমাইল নামে এক কিশোরের। পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা ওই কিশোর কাজ সেরে সাইকেল চালিয়ে ফেরার পথে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ইসমাইলের। বাসটি আটক হয়েছে। |