আমিরি থেকেও নেই
তই তিন দিনে রেকর্ড ব্যবসা করুক। যতই শিকাগোর রাস্তায় পুলিশকে বোকা বানাক। যতই শাহরুখ খানের ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’কে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাক ‘ধুম থ্রি’। প্রশ্নটা কিন্তু চার দিক থেকে উঠছে।
আমির খানের হলটা কী?
সে কেন সলমন খানের মতো ক্যাটরিনাকে নিয়ে নাচবে? সে কেন লুঙ্গি ডান্সের কম্পিটিশনে ট্যাপ ডান্স করবে? সে তো আমির খান। কমার্শিয়াল বলিউডের একমাত্র ‘দূষণমুক্ত’ সুপার সুপারস্টার।
এমনিতে আমির খানের ‘ধুম থ্রি’ নিয়ে তোলপাড় বলিউড। বক্স অফিসের দিক থেকে হয়তো বড় হিট হতে চলেছে কিন্তু আমির খান ভক্তদের কাছে অভিনেতা আমিরের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা যশরাজ-য়ের এই ছবিটি।
হাজার হোক, এই লোকটাই তো ‘লগান’য়ের ভুবন, যাকে দেখে গোটা দেশ অনুপ্রাণিত হয়েছিল। এই তো ছিল র‌্যাঞ্চো যে হাসতে হাসতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। কোথায় গেল সেই মানুষটা, যে ‘সত্যমেব জয়তে’তে এমন ইস্যু নিয়ে অনুষ্ঠান করত, যে দেশের সরকারও নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হত?
এখানেই উঠছে প্রশ্ন, তা হলে কি দু’টো আমির খান রয়েছেন? একটা যিনি ‘তারে জমিন পর’য়ের মতো ছবির পরিচালনা করেন (অবশ্য, কে পরিচালনা করেছিলেন তা নিয়ে বিস্তর গণ্ডগোল হয়েছিল), ‘ধোবি ঘাট’য়ের মতো ছবির প্রযোজনা করেন।
‘ধুম থ্রি’
আর এক দিকে অন্য আমির খান যিনি ‘ধুম থ্রি’র মতো ছবিতে চোরের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ‘তলাশ’য়ের মতো ছবিতে যাঁকে পুলিশ অফিসারের রোলে দেখা যায়।
মহেশ ভট্টের সঙ্গে এক সময় খুব দহরম মহরম ছিল আমিরের। আমিরের চরিত্রের যে দু’টো দিক আছে সেটা মেনে নিচ্ছেন মহেশ-ও।
“দেখুন, আমিরের চরিত্রের সব সময়ই দু’টো দিক রয়েছে। না হলে যে লোকটা ‘ধুম থ্রি’র মতো মাইন্ডলেস ছবি করে, সেই লোকটাই কী করে অণ্ণা হজারের সঙ্গে দেখা কর তে যায়? তবে এটাও বলব, যেহেতু আমির অসম্ভব বুদ্ধিমান তাই, এই দু’টো আমিরকে নিয়ে ও দিব্যি চলতে পেরেছিল এতগুলো বছর। কিন্তু আজকে মানুষের কাছে ট্যুইটার, ফেসবুক রয়েছে। তারা তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেছে। আর এই মানুষগুলোর মনে সেন্সিবল আমির খানের ইমেজটাই বেশি জোরালো। সেটার সঙ্গে ‘ধুম থ্রি’ খাপ খায় না। তাই লোকে ‘ধুম থ্রি’র আমিরের সঙ্গে রিলেট করতে পারেনি,” স্পষ্ট বলছেন মহেশ।
মহেশ আরও মনে করছেন, ‘ধুম থ্রি’ আমিরের জন্য মোটেও চলেনি। “কে বলল, ‘ধুম থ্রি’ আমিরের জন্য চলেছে? ওটা চলেছে ধুম ফ্র‌্যাঞ্চাইজির জন্য। ওখানে অন্য যে কোনও অভিনেতা অভিনয় করলেই চলত। আর আমিরের অভিনয় নিয়ে লোকে যে এত কথা বলে, আমার তো মনে হয়, ‘দিল হ্যায় কি মানতা নহি’র পর অভিনেতা হিসেবে কোনও গ্রোথই হয়নি ওর। বুদ্ধিমান বলে পারমুটেশন-কম্বিনেশন করে এত দিন চলছিল,” বেশ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বলেন মহেশ।
এবং এখানেই আশঙ্কিত অনেকে। তাদের ভয়, ‘র‌্যাঞ্চো’ নয়, গত দু’এক বছর বেশি দেখা যাচ্ছে ‘ধুম’য়ের আমিরকেই।
এমনকী আমিরের ঘনিষ্ট বন্ধু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও দুঃখই পেয়েছেন আমিরকে ‘ধুম থ্রি’তে দেখে।
“আমির কেন এ রকম করবে বলুন?” বেশ দুঃখের সঙ্গে জিজ্ঞেস করেন প্রসেনজিৎ।
প্রসঙ্গত, আঞ্চলিক স্তরে একসময় প্রসেনজিতের দু’টো সত্ত্বা ছিল। একজন ‘পোসেনজিৎ’, অন্যজন প্রসেনজিৎ। কিন্তু ২০১০-য়ের পর থেকে প্রসেনজিতের একটাই সত্ত্বা।
অনেকেই মনে করছেন যদি প্রসেনজিৎ আঞ্চলিক স্তরে নিজেকে এই ভাবে পাল্টে ফেলতে পারেন, তা হলে আমির-ই বা কেন তাঁর ‘ধুম থ্রি’ সত্ত্বাকে সম্পূর্ণ বর্জন করবেন না?
মুম্বইতে আমিরের বহু দিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অজয় ব্রহ্মতাজ। তাঁর কথায় আমিরের অবশ্য ‘ধুম থ্রি’ করা নিয়ে কোনও খেদ নেই।
“আমির খানের কোনও খেদ নেই কিন্তু। ওর মাথাটা দারুণ পরিষ্কার। ও জানে ‘ধুম থ্রি’ শুধু মানুষকে এন্টারটেন করার জন্যই করেছে। ক্রিটিকদের বাহবা পেতে নয়। যারা আজকে বলছে আমির ফেল করেছে, তারাই দেখবেন এক বছরের মধ্যেই মত বদলেছে,” বলেন অজয়।
নিন্দুকেরা অবশ্য এটাও বলেছেন যে আমিরের ‘ধুম থ্রি’ করাটা নিতান্তই চেন্নাই এক্সপ্রেস-য়ের বক্স অফিস রেকর্ড ভাঙার জন্য।
‘থ্রি ইডিয়েটস্’ ‘তারে জমিন পর’
“মুম্বই আর দিল্লিতে ‘ধুম থ্রি’য়ের টিকিটের দাম করা হয়েছিল ৯০০ টাকা এবং ১৪০০ টাকা। এটা কেন? এর একমাত্র কারণ ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’য়ের বক্স অফিসের রেকর্ড ভাঙা। আমিরের কাছ থেকে এ রকম র‌্যাট রেস-য়ে নামাটা আমরা কেউ আশা করিনি,” বলছিলেন আমিরের ঘনিষ্ঠ এক পরিচালক।
সব মিলিয়ে যা অবস্থা ‘ধুম থ্রি’ কোটি কোটি টাকা কামালেও ব্র‌্যান্ড আমির খানের ব্যর্থতা হিসেবেই রেকর্ড বইতে তোলা থাকবে।
“জানি ছবিটা চলছে। কিন্তু আমিরের কাছ থেকে মানুষের প্রত্যাশাটা বেশি। কিন্তু আজকাল তো আমির কথা শোনে না। ও স্পিচ আর প্রবচন দিতেই বেশি পছন্দ করে। তাই ও নিজেকে শুধরোবে কি না জানি না। তবে না শুধরোলে সাঙ্ঘাতিক ক্ষতি হবে। হিন্দি সিনেমার ক্ষেত্রে সেটা খুব খারাপ খবর,” বলছেন মহেশ ভট্ট।
গোটা বলিউডের যা মুড তাতে একটা ব্যাপার পরিষ্কার।
যতই বহুতল বাড়ির দেওয়াল ধরে দৌড়ান আমির খান, দর্শকের কিন্তু পছন্দ ভাইরাস সহস্রবুদ্ধের সেই বেয়াড়া ছাত্র র‌্যাঞ্চোকে। এমন মানুষ যিনি নিয়ম অনুসরণ করেন না। নিয়ম তৈরি করেন। আমির ওয়ান। আমির কেন এই রোলটা করবে?
আমির আমার ভীষণ ভাল বন্ধু। কিন্তু আমির কেন ‘ধুম থ্রি’ করল, এটা দেখে আমিও একটু অবাকই হয়েছি।
জানি, ছবিটা সুপারডুপার হিট। যাকে বলে ব্লকবাস্টার। কিন্তু যে আমির খানকে আমি এত ভালবাসি, সে সেই রোলটা কেন করবে, যেটা আগে জন আব্রাহাম বা হৃতিক রোশন করেছে?
ও এ দেশের অন্যতম সেরা অভিনেতা। আমিরের এই রোল করাটা আমি মন থেকে মেনে নিতে পারিনি।
তবে এখানে এটাও বলব, কোন ফিল্মটা করবে, কোনটা করবে না, সেটা সম্পূর্ণ ভাবেই আমিরের ডিসিশন। কিন্তু আজ বলিউডের সবাই যেন ‘নাম্বার গেমস’-য়ের দিকে ঝুঁকছে। কেউ বাদ যাচ্ছে না! এটা টালিগঞ্জেও হচ্ছে।
আমার মনে আছে, আজ থেকে দশ-বারো বছর আগে আমি ১২-টা কমার্শিয়াল ছবি করলে, ৮-টা সিলভার জুবিলি হত। কিন্তু আজ আমি সেই ‘নাম্বার গেম’ থেকে নিজেকে একেবারেই সরিয়ে নিয়েছি। বন্ধু হিসেবে আমিরের কাছ থেকেও আমার একই এক্সপেক্টেশন। সেটা এ ক্ষেত্রে হয়নি বলেই আমার একটু খারাপ লেগেছে।
আর তা ছাড়া কী জানেন, সব অভিনেতারই এ রকম কমার্শিয়াল ছবি করার ইচ্ছে থাকে। এই ছবিগুলো ম্যাক্সিমাম মানুষের কাছে পৌঁছয়। কিন্তু একটা স্টেজ-য়ের পর জুনিয়র অ্যাক্টরদের এটা ছেড়ে দেওয়া উচিত। যেটা আমি কনসাশলি করেছি। আজ রণবীর ‘ধুম থ্রি’ করলে কেউ আপত্তি করত না। আমির করেছে বলেই খারাপ লেগেছে।
এবং শেষে জানিয়ে রাখি, পাশাপাশি দু’টো হলে যদি ‘ধুম থ্রি’ আর ‘তারে জমিন পর’ চলে, আমি কিন্তু যে কোনও দিন ‘তারে জমিন পর’-ই দেখতে যাব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.