মুর্শিদাবাদ জেলার অর্ধেক যক্ষ্মা রোগীরই বাস বিড়ি শিল্পাঞ্চল জঙ্গিপুরে। সারাক্ষণ তামাক নিয়ে কারবার করা বিড়ি শ্রমিকরা সহজেই যক্ষ্মা আক্রান্ত হন। কিন্তু এই মহকুমার কোনও হাসপাতালেই যক্ষ্মা রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই।
চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত জেলায় নতুন করে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭০৯ জন। তার মধ্যে জঙ্গিপুরেই সংখ্যাটা ১৫২০। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় প্রকাশ, মহকুমার বিড়ি শ্রমিকদের মধ্যে ৫৩.৮৭ শতাংশই তামাকের কারণে শ্বাসকষ্ট ও যক্ষ্মা রোগে ভুগছেন। এদের মধ্যে ২১ শতাংশের অবস্থা উদ্বেগজনক।
মহকুমায় ৭টি ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়াও রয়েছে একটি মহকুমা হাসপাতাল। ধুলিয়ানে আছে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের বিড়ি শ্রমিক কল্যাণ হাসপাতালও। কিন্তু কোথাও যক্ষ্মা রোগ বিশেষজ্ঞ নেই। ফলে আতান্তরে পড়েছেন যক্ষ্মা রোগীরা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শ্রমিকদের বিড়ি বাঁধতে হয়। থাকা-খাওয়া-বিড়ি বাঁধা একই ঘরে। ফলে রোগ ছড়ায় বেশি।
জঙ্গিপুর মহকুমা আইএনটিইউসির বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক বাদশার আলি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় শ্রমিক হাসপাতাল ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের হাসপাতালে যক্ষ্মা রোগের কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। আন্দোলন করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই দিনকে দিন যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।” সিটুর জেলা সভাপতি আবুল হাসনাত খানের ক্ষোভ, “বিড়ি শ্রমিক অধ্যুষিত ধুলিয়ানে কেন্দ্র হাসপাতাল গড়লেও সেখানে শ্রমিকরা তেমন চিকিৎসা পান না। জনা ছয়েক চিকিৎসক আছেন। বেশির ভাগই চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত। প্রতি বছর জঙ্গিপুরের বিড়ি শিল্প থেকে ১৫০ কোটি টাকা রাজস্ব পায় কেন্দ্র সরকার। কিন্তু শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উদাসীন কেন্দ্র।’’
জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল বলেন, ‘‘বিড়ি শ্রমিক মহল্লায় যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি। তামাক থেকে শ্বাসকষ্ট-সহ যাবতীয় বুকের অসুখ দেখা দিচ্ছে। তা থেকে পরে যক্ষা হচ্ছে। ডট্স চিকিৎসার মাধ্যমে যক্ষার চিকিৎসা হলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া রোগ নির্ণয় সব সময় সম্ভব হয় না। মহকুমা হাসপাতালে আট বছর ধরে কোনও যক্ষ্মা রোগ বিশেষজ্ঞ নেই। স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয় চক্রবর্তী বলেন, “গোটা জেলা জুড়েই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্কট রয়েছে। জঙ্গিপুরের পরিস্থিতির কথা জানি। সেখানকার সমস্যার কথা স্বাস্থ্য দফতরকেও জানিয়েছি। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না এলে আমি কী করব?” |