পুরুলিয়ায় ছৌ উৎসব
পুরাণ থেকে ম্যাকবেথ
বার ছৌ-এ রবীন্দ্রনাথের কালমৃগয়া, ছৌ-এ শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ। পুরাণ কথার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সাফল্য পেতে শুরু করেছে পুরুলিয়ার ছৌ। এত দিন যে ছৌ বলতেই ছিল মহিষাসুরমর্দ্দিনী, পরশুরামের গুরুদর্শন বা লক্ষ্মণের শক্তিশেল, সেই ধারাটা পাল্টে যাচ্ছে। গত এক বছরে শুধু দেশে নয়, নতুন ধরনের পালা নিয়ে বিদেশেও ঘুরে এসেছে একাধিক ছৌ-দল। পরিচালক জগন্নাথ চৌধুরীর দল যেমন মহারাষ্ট্রে বাবাসাহেব অম্বেডকর বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্চস্থ করেছে ম্যাকবেথ। একই পালা অভিনীত হয়েছে লন্ডন এবং টোকিও-সহ জাপানের ১৭টি জায়গায়। বীণাধর কুমারের দল আবার শান্তিনিকেতনে গিয়ে করেছে কালমৃগয়া
প্রবাদপ্রতিম শিল্পী, প্রয়াত গম্ভীর সিংহ মুড়ার হাত ধরে ছৌ অবশ্য অনেক আগেই চলে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। ২০১০ সালে মানবসভ্যতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় ছৌ-কে অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউনেস্কো। কিন্তু মাঝারি-ছোট যে সব দল তত বরাত পায় না, তাদের অস্তিত্বের সঙ্কট ঘোচেনি। পুরনো খোলস ভেঙে না বেরোলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার ধরা যাবে না বলেও অনেকে মনে করছেন। সাবেক ধারার সঙ্গে এই নতুন আঙ্গিকের আদানপ্রদান এবং আরও দলকে নতুন চিন্তায় অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে ঝালদার বামনিয়ায় চলছে ছৌ উৎসব। পুরুলিয়ার ৩০টি ছোট-মাঝারি দলকে নিয়ে ২০ ডিসেম্বর থেকে এই উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলা নাটক ডট কম এবং বামনিয়া ছৌ-ঝুমুর সঙ্ঘ। উদ্যোক্তাদের তরফে সুমন দাস বলেন, “পরম্পরা মেনে নাচ একই ধারায় আটকে রয়েছে। একঘেয়েমি আসতে বাধ্য। তার সঙ্গে অন্য ধারার মিশ্রণ ঘটলে তা দর্শকের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে।” উৎসবের শেষ আজ, বড়দিনে।

মোগল-মুদ্রা
খনন চলছে মোগলমারিতে। একটু দূরেই তাম্রলিপ্ত বন্দর। সেখানে যাওয়া আসার পথে কখনও আশ্রয় নিতেন বণিকেরা। তাঁরা দান করতেন। আসত রাজার দানও। সাধারণ মানুষ কখনও উৎসর্গ করত। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের কাছে মোগলমারির প্রত্নস্থলটি তাই ধনাঢ্য বৌদ্ধ উপাসনালয় ছিল বলেই মনে করছেন পুরাতত্ত্ববিদেরা। সম্প্রতি মোগলমারি থেকে পাওয়া গিয়েছে রাজা সমাচার দেবের একটি মিশ্র ধাতুর মুদ্রা। তাঁর নামে মুদ্রা এই এলাকায় বিরল। সম্প্রতি মিলেছে একটি ভাঙা বুদ্ধমূর্তিও, যার নীচে ষষ্ঠ-সপ্তম শতকের ব্রাহ্মীতে চন্দ্র নামে এক ব্যক্তির নাম লেখা। প্রত্নস্থলটির বিরাট একটি দেওয়ালও উদ্ধার হয়েছে, যার গায়ে লাগা কিছু ঘরও ছিল। তেমনই কোনও ঘরে কোনও দিন ফা হিয়েন এবং হিউয়েন সাং বা জুয়ান জ্যাং-ও আশ্রয় নিয়েছিলেন কি না, তা হয়তো আর জানা যাবে না। তবে দুই চিনা পরিব্রাজকই তাম্রলিপ্তের কাছাকাছি যে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ বিহারের উল্লেখ করেছেন, এই প্রত্নস্থলটি সেগুলিরই অন্যতম বলে মনে করেন পুরাতাত্ত্বিকেরা। সেখানে এখন নতুন করে খনন শুরু করছে রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতর।

ভ্রমণ আড্ডা
পায়ের তলার সর্ষের মধ্যেই থাকে জীবনভর তাড়িয়ে বেড়ানো ভূত। সে জিভে মোচড় দিয়ে গল্পও বলায়। স্মরণীয় ভ্রামণিকেরা রবীন্দ্রনাথ থেকে উমাপ্রসাদ, বিভূতিভূষণ থেকে নবনীতা, পথের মোড়ক খুলে বার করে এনেছেন সরস কাহিনি। গল্প-বলা ভ্রামণিক আর উন্মুখ শ্রোতাদের এক দিন এক ছাদের নীচে জড়ো করার চেষ্টা হাল্কা চালেই হাতে নিয়েছিলেন ভদ্রেশ্বরের কিছু ভ্রমণমনস্ক মানুষ। দেখতে-দেখতে এ বার তার বয়স ষোলো হল। প্রতি ডিসেম্বরে তৃতীয় রবিবার বসে ‘ভ্রমণ আড্ডা’। গত ১৫ তারিখ আড্ডায় এসেছিলেন সাড়ে চারশোরও বেশি মানুষ। তার মধ্যে বেলুড়ের বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ, নদী গবেষক কল্যাণ রুদ্র, সাহিত্যিক কমল চক্রবর্তী যেমন ছিলেন, ছিলেন বহু অনামা মানুষ যাঁরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় অনন্য। এ বারের ‘মুসাফির’ সম্মান স্মারক পান জীবনভর মন্দির স্থাপত্য নিয়ে গবেষণা করে যাওয়া, বিরানব্বই বছরের শম্ভুনাথ মিত্র। ‘ভ্রমণ সম্মান’ পান রামকৃষ্ণ দাস। গত এক বছরে প্রকাশিত ভ্রমণ কাহিনির সুবাদে ‘কলম সম্মান’ পান রবীন চক্রবর্তী।

হুগলির ইতিহাস
‘সমগ্র ভারতের হৃদয়ভূমি বঙ্গদেশ, বাংলার হৃদয়স্পন্দন ধ্বনিত হয় হুগলী জেলায়।’ শ্রীঅরবিন্দের কথাটা মনে রেখেই যেন বিজ্ঞানের ছাত্র সুধীরকুমার মিত্র নেমেছিলেন হুগলির ইতিহাস সন্ধানে। প্রথাগত অর্থে ইতিহাসের ছাত্র নন, তবু ইতিহাসের মুক্তি খুঁজেছিলেন তিনি। দলিল-দস্তাবেজ আর রাজ-নথির সীমায় আটকে না থেকে সমাজজীবন আর সাংস্কৃতিক পরিচয়ে হুগলি জেলাকে দেখতে চেয়ে প্রায় সাত দশক আগে তৈরি করেছিলেন দু’খণ্ডে ঐতিহাসিক একটি বই, হুগলী জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ। সুধীরকুমারের জন্মশতবর্ষে বহু ছবি ও টীকা-সহ সেই বইটির পুনঃপ্রকাশ ঘটল দে’জ পাবলিশিং থেকে। সম্পাদনা করেছেন সৌমিত্রশংকর সেনগুপ্ত ও পল্লব মিত্র।

খেতুরীর সন্ধানে
বাংলার কীর্তনে খেতুরী যেন এক কৃতজ্ঞ দোহার। নরোত্তম দাসের পরিকল্পিত খেতুরী মহোৎসব আজ অনেকের কাছেই হারিয়ে যাওয়া এক উৎসব বলে মনে হয়। মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জের গাম্ভীলা শ্রীপাট আর ভগবানগোলার বুধরী শ্রীপাটে সে মেলা আজও ফি বছর হয়। তারই হালহকিকত আর ইতিহাসের সন্ধান নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হল জিয়াগঞ্জ কলেজের বাংলার অধ্যাপক শ্যামল রায়ের বই খেতুরী মেহাত্সব ও মেলা (ধ্রুবপদ প্রকাশনী)। মূল খেতুরী উৎসবের সন্ধানে বাংলাদেশের খেতুরী গ্রামেও গিয়েছেন শ্যামলবাবু। খোল, কর্তাল আর হারমোনিয়ামের মোটিফ দিয়ে বইটি সাজিয়েছেন বহরমপুরের শিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত।

বত্রিশ বছর
পাইড অ্যাভোসেট। পাকিস্তান সীমান্তে কচ্ছের রণে মাঝে মধ্যে দেখা মেলে এই পরিযায়ীদের। কচ্ছের বিস্তীর্ণ রণে ঘর বাঁধে তারা। তারপর প্রাক-গ্রীষ্মে ফের তারা উড়ে যায় মধ্য এশিয়া কিংবা আরও দূরে ইউরোপের প্রান্তে। সত্তরের দশকের শেষ দিকে বাংলার জলা-জঙ্গলেও বার কয়েক দেখা মিলেছিল দুধ সাদা ডানার এই পাখিদের। তবে ক্রমেই বাংলা-বিমুখ হয়ে গিয়েছিল তারা। সল্টলেকের নলবনে বত্রিশ বছর আগে শেষ বার শীতের অতিথি হয়ে এসেছিল এক জোড়া অ্যাভোসেট। তার পরে তারা আর এ-মুখো হয়নি। হারানো সেই অতিথিদের ফের দেখা মিলেছে সুন্দরবনের সাগর দ্বীপের কাছে একটি চরে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার’-এর হয়ে সুন্দরবন এলাকায় ম্যানগ্রোভের উপরে গবেষণা চালানোর সময়ে কলকাতার ‘নেচার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ সোসাইটি’র গবেষকদের গত ২৫ নভেম্বর হঠাৎই নজরে পড়ে এক জোড়া পাইড অ্যাভোসেট। ওই সংগঠনের পক্ষে বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী জানান, দিন সাতেকের অনুসন্ধানের পরে হলদিয়া থেকে সাগর, বিভিন্ন চরে তাঁরা অন্তত ১১টি অ্যাভোসেটের দর্শন পেয়েছেন। ‘বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি’র পক্ষে জানানো হয়েছে এ এক অতি বিরল অভিজ্ঞতা। সঙ্গের ছবিটি বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা।

বাল্যবন্ধু
বলার বিষয় ছিল ‘প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে নৈর্ব্যক্তিকতা’। বক্তা অমর্ত্য সেন। ‘দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি বক্তৃতা ২০১৩’ এই বিষয়ে বলতে গিয়ে বিজ্ঞানী দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় কেবল একটি নাম হয়েই থাকবেন তা কি হয়! তিনি যে ছিলেন অমর্ত্য সেনের বাল্যবন্ধু। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়েছিলেন অমর্ত্যর সঙ্গে। বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার ঠিক আগের বছর, ১৯৫১-য় ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় দীপঙ্কর হয়েছিলেন দ্বিতীয়, অমর্ত্য প্রথম। তখনও বিশ্বভারতী-র পরীক্ষা হত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। শহর থেকে দূরের দুই বন্ধুর এই ফল সাড়া ফেলে দিয়েছিল কলকাতায়। তার পরে দুই বন্ধু চলে যান কলকাতায়, প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। “দীপঙ্কর গোড়া থেকেই নিশ্চিত ছিল পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়বে। আমি দোলাচলে ছিলাম, পদার্থবিদ্যা না অর্থনীতি,” বলছিলেন অমর্ত্য। বিশ্বভারতী পাঠচক্র-এর আয়োজনে ওই বক্তৃতায় বলতে এসে বার বার অমর্ত্য বলছিলেন প্রিয় বন্ধুর স্মৃতি, শান্তিনিকেতন আশ্রমের ভিতরের বাড়িতে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনার কথা। বলছিলেন, কী ভাবে সমাজবিজ্ঞানের ‘এথিকস’-এর কথা বলতেন দীপঙ্কর, সেই দৃষ্টিভঙ্গি কী ভাবে গভীরে চারিয়ে গিয়েছিল অমর্ত্য-র মধ্যে, দুর্ভিক্ষ নিয়ে কাজ করার সময়। প্রাণ-অপ্রাণের সীমান্ত থেকে এ ভাবেই যেন তর্কমুখর হয়ে উঠল দুই বন্ধুর ভাবনা ২১ ডিসেম্বর, শান্তিনিকেতনের লিপিকা সভাঘরে।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.