শ্বাসরোধ করে দিদিকে খুন করে আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালানোর অভিযোগে ভাইকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবার সারারাত পাড়া থানার তেঁতুলহেটি গ্রামে বাড়ির মধ্যেই গলায় দড়ির ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছিল রীনা মাহাতোর (১৯) দেহ। মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় অসঙ্গতি পেয়ে পুলিশ সেখান থেকেই রীনার পনেরো বছরের ভাইকে আটক করে। পরে রীনার মামার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “ধৃত কিশোর জেরায় পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে শ্বাসরোধ করে সে প্রথমে তার দিদিকে খুন করে। তারপরে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে দিদিকে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করে। অন্য এক যুবকের সঙ্গে দিদির ঘনিষ্ঠতা মানতে না পেরেই সে খুন করে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।” মৃত্যুর কারণ জানার জন্য দেহটি ময়নাতদন্তে পুলিশ পাঠিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তেঁতুলহেটি গ্রামের বাসিন্দা পেশায় নির্মাণ শ্রমিক সন্তোষ মাহাতোর দুই সন্তান। রীনা বড় সন্তান। সে স্থানীয় উদয়পুর হাইস্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। ছেলেটি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে স্কুল ছেড়ে দেয়। বাড়িতেই সে থাকত। বাবা ওড়িশায় কাজ করতেন। তেঁতুলহেটি গ্রামের বাড়িতে দুই সন্তানকে নিয়ে সন্তোষবাবুর স্ত্রী থাকতেন। তবে সোমবার রাতে বাড়িতে ওই বধূ ছিলেন না। তিনি গ্রামের এক পড়শির বাড়িতে গিয়েছিলেন। বাড়িতে ছিলেন ওই কিশোরী ও তার ভাই। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল রীনার। মোবাইলে দু’জনে প্রায়শই কথা বলতেন তাঁরা। এই সর্ম্পক মানতে পারেনি ওই কিশোরীর ভাই। একাধিক বার ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলতে সে দিদিকে বারণও করেছিল। এসডিপিও জানান, প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে তাদের দিদি ও ভাইয়ের মধ্যে ওই বিষয়ে বচসা হয়েছিল। তখন রীনার মা বাড়িতে ছিলেন না। সেই সময়ে শ্বাসরোধ করে দিদিকে খুন করেছিল ওই কিশোর। পড়শিরা জানান, রাতে মা বাড়িতে এসে মেয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। তখন ওই কিশোর তাঁকেও দিদি আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছিল।
পুলিশের দাবি, দেহটি যে ভাবে ঝুলছিল, তা দেখে আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে হয়নি। বরং খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়েছিল। ওই ঘটনা সর্ম্পকে মৃতার ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করার পরে পুলিশের তার প্রতি সন্দেহ বাড়ে। তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পরে দুপুরে রীনার মামা রসরাজ মাহাতো ভাগ্নের বিরুদ্ধে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
মেয়ের দেহ নিয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য এসেছিলেন বাবা সন্তোষ মাহাতো। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, “কর্মসূত্রে বাইরে থাকি। মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে এসেছিলাম। পরে শুনছি ছেলেই খুন করেছে মেয়েকে। কী করে এই ঘটনা ঘটল, কেনই বা ছেলেটা দিদিকে খুন করল কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।” |