জমি-জটে পশ্চিমবঙ্গে থমকে থাকা বেশ কিছু রেল প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারের কোর্টেই বল ঠেললেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তাঁর মন্ত্রকের আর্থিক সঙ্কটের কথা মেনে নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে আনলেন অসহযোগিতার অভিযোগ। যা উড়িয়ে দিয়েছে শাসক দল।
মঙ্গলবার বাসন্তীতে এক অনুষ্ঠানে রেল প্রতিমন্ত্রী বলেন, “রেল ২৬ হাজার কোটি টাকা লোকসানে চলছে। সব ক্ষেত্রে টাকার সংস্থান সম্ভব নয়। প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছে জমি ও অর্থ সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। যৌথ ভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। ইতিমধ্যে ১০টি রাজ্য সাড়া দিয়েছে।” তবে ‘সাড়া মেলা’ সেই রাজ্যের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ নেই বলেই অধীরের দাবি। তিনি জানান, ওই সব রাজ্যে ইতিমধ্যেই ‘যৌথ ভাবে’ ৩৮ হাজার কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের নাম না করে তাঁর কটাক্ষ, “আগে রেল মন্ত্রকে যাঁরা ছিলেন, তারা পরিকল্পনাহীন ভাবে প্রকল্প ঘোষণা করে গিয়েছেন। রূপায়ণে কী সমস্যা হতে পারে এক বার ভেবেও দেখেননি।”
অধীরের বক্তব্যের পাল্টা সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তিনি বলেন, “মমতাদি প্রায় আড়াই বছর রেলমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর পরে আমরাও মন্ত্রী হিসাবে কিছু দিন কাজ করেছি। যা পরিকল্পনা করেছিলাম তা রূপায়িত করেছি।’’ |
এ প্রসঙ্গে অধীরের নাম না করে মুকুলের পাল্টা কটাক্ষ, “আসলে কোনও প্রকল্প রূপায়িত করতে প্রয়োজন সদিচ্ছা, মনের জোর আর রাজ্যের প্রতি ভালবাসা। তিনটের একটাও না থাকলে প্রকল্প রূপায়িত হবে কী করে? শুধু কথা বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু কাজ করা যায় না।”
বাসন্তীতে একটি সমাজসেবী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘সুন্দরবন কৃষ্টি ও লোক উৎসব মেলা’য় এ দিন আমন্ত্রিত ছিলেন অধীর। সেখানে যাওয়ার আগে তিনি রেল প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বাসন্তী ও ক্যানিংয়ের মধ্যে মাতলা নদীর উপরে নির্মীয়মাণ রেল সেতুর কাজ পরিদর্শন করেন। সঙ্গে ছিলেন রেলের পদস্থ কর্তারা। মেলায় গিয়ে অনুষ্ঠান-মঞ্চে সুন্দরবনের রেল প্রকল্প নিয়ে বলতে গিয়েই রাজ্যে সরকারের সমালোচনা করেন রেল প্রতিমন্ত্রী।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবন এলাকায় ক্যানিং-ভাঙনখালি, ভাঙনখালি-সোনাখালি এবং সোনাখালি-ঝড়খালির মধ্যে রেলপথ নির্মাণ-সহ ১৩টি প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে অধীর বলেন, “জমি না মেলায় ওই সব প্রকল্প থমকে রয়েছে। ওই প্রকল্পগুলির জন্য খরচ হবে ২৩২২ কোটি টাকা। এখানকার লোকেরা (পড়ুন তৃণমূল) যখন ক্যাবিনেটে ছিলেন, তখন বলেছিলেন রেলের প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র সরকার জমি অধিগ্রহণ করবে। কিন্তু মন্ত্রক ছাড়ার পরেই ঘোষণা করলেন, রাজ্য জমি অধিগ্রহণ করে রেলকে দেবে। এখানকার অতিরিক্ত জেলাশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমীক্ষা ছাড়া কিছুই হয়নি।” এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জমি অধিগ্রহণ) শান্তনু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “গত কয়েক বছরে সুন্দরবনের রেল প্রকল্পগুলির জন্য রেল কর্তৃপক্ষ কোনও প্রস্তাব দেয়নি। ১৯৯৭ সালের আগের যে সব প্রস্তাব ছিল, তা আইনগত কারণে খারিজ হয়ে গিয়েছে।”
অনুষ্ঠান-মঞ্চে ছিলেন বাসন্তীর আরএসপি বিধায়ক সুভাষ নস্কর, জয়নগরের সাংসদ এসইউসি-র তরুণ মণ্ডল, মেলার আহ্বায়ক লোকমান মোল্লা, কংগ্রেস নেতা অর্ণব রায় প্রমুখ। অধীরবাবুর ক্ষোভ, “সুভাষবাবু, তরুণবাবুরা রেলের জন্য জমির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও যাদের (রাজ্য সরকার) দেওয়ার কথা তাদের কাছ থেকে তা পাওয়া যাচ্ছে না।”
রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের জন্য জমির বদলে চাকরির যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, এ দিন ফের তার সমালোচনা করে অধীর বলেন, “রেলে চাকরি দেওয়া হয় পদ খালি হলে। আমাদের পক্ষে এখন সারা দেশে দেড় লক্ষ নিয়োগ করা সম্ভব। কিন্তু পূর্ব রেলে এত প্রকল্প ঘোষণা হয়েছে এবং তার প্রেক্ষিতে যে চাকরির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তার সংখ্যাই প্রায় এক লক্ষ। কোথা থেকে চাকরি দেওয়া যাবে?” |