ষাঁড়ের গুঁতোয় অতিষ্ঠ গ্রাম
ত কয়েক দিন ধরে তিন ষাঁড়ের তাণ্ডবে প্রাণ ওষ্ঠাগত বাদুড়িয়ার চাতরা পঞ্চায়েতের ঘোষপুর গ্রামের মানুষের। ইতিমধ্যেই জখম হয়েছেন বেশ কয়েক জন। এক জনের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে বলে গ্রামের মানুষের দাবি।
সমস্যার হাল খুঁজতে পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়েছেন গ্রামবাসীরা। প্রধান ঠাকুরদাস মল্লিকের বক্তব্য, “তিনটি ষাঁড়ের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে প্রায় প্রতি দিনই কেউ না কেউ জখম হচ্ছে। যখন তখন ষণ্ড-বাহিনী লোকের জমিতে ঢুকে ফসল তছনছ করছে। ধীরেন সরকার নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা ষাঁড়ের গুঁতো খেয়ে মারাও গিয়েছেন। কয়েক জন হাত-পা ভেঙে জখম হয়েছেন।”
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।
প্রধান জানান, বন দফতরকে খবর দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই। কারণ, ষাঁড় বন্যপ্রাণী নয়। পরে বিডিওকেও জানানো হয় বিষয়টি। বাদুড়িয়ার বিডিও তারক মণ্ডল জানান, খবর তাঁর কানে এসেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কী সেই ব্যবস্থা? বিডিও জানান, এ ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ দফতরের এক কর্মী জানান, তাঁদের এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু করণীয় নেই। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু পুলিশই বা কী ভাবে ষাঁড়কে কব্জা করবে? তার উত্তর নেই কারও কাছে। ষাঁড় ধরে এনে খোঁয়াড়ে দেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কিন্তু কী ভাবে, কাকে দিয়ে তা করানো যাবে, তা নিয়ে কর্তারা কোনও সমাধান সূত্র দেখাতে পারেননি। প্রশাসনের এক কর্তা মাথা চুলকে বললেন, “ষাঁড় তিনটেকে কোনও মতে পাকড়াও করে যদি তিন জায়গায় ছেড়ে আসা হয়, তা হলে হয় তো ওরা দল পাকিয়ে এমন তাণ্ডব আর চালাতে পারবে না। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টি কে বাঁধবে, সেটাই এখন দাঁড়িয়েছে লাখ টাকার প্রশ্নে।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত কয়েক মাস আগে দু’টি সাদা এবং একটি কালো ষাঁড় বাইরে থেকে এসে ঘোষপুর এলাকার সর্দারপাড়ায় আস্তানা গেড়েছে। প্রথম দিকে শান্তশিষ্ট স্বভাবেরই ছিল তারা। এলাকার লোকজন কলাটা-মুলোটা খেতেও দিচ্ছিলেন। কিন্তু চারবেলা তরিজুতে ঘাটতি পড়তে থাকে অচিরেই। ছেলেছোকরাদের উৎপাত তো ছিলই। সব মিলিয়ে ষাঁড়েদের মাথা গরম হতে শুরু করে কিছু দিন আগে থেকে। কোথাও হেঁসেলে ঢুকে হাঁড়ি উল্টে ভাত খেতে শুরু করে। কোথাও আবার ফসলের খেতে ঢুকে তাণ্ডব চালায় তারা। গোয়ালে ঢুকেও গরুদের উত্যক্ত করা শুরু করেছে তারা। সাহসী দু’চার জন যাঁরা রুখে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিলেন, তাঁরা শিং উঁচিয়ে তেড়ে আসার সামনে বিশেষ ট্যাঁ-ফোঁ করতে পারেননি। উল্টে ছুটে পালাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে হাত-পা ভাঙছে লোকের। গ্রামের মানুষ জানালেন, ধীরেন সরকারের সর্ষে খেতের মধ্যে ঢুকে হুজ্জুত করছিল ষাঁড়ের দল। তিনি বাধা দিতে গেলে কালো রঙের ষাঁড়টি গুঁতো মারে ধীরেনবাবুকে। পেটে শিং ঢুকে মারা যান তিনি।
গ্রামের মানুষ বলে চলেন তাঁদের ভয়ঙ্কর সব অভিজ্ঞতার কথা।
গত রবিবার সকালে দেবী স্বর্ণকারের মটরশুটি খেতে ঢুকে পড়ে তিন দস্যি। সেখানে নিজেদের মধ্যে গুঁতোগুতি বাধিয়ে বসে। ফসল লণ্ডভণ্ড হতে দেখে স্থির থাকতে পারেননি দেবীবাবু। বাঁশ উঁচিয়ে তাড়াতে গেলে তেড়ে এসে এক জন পেটে শিং ঢুকিয়ে দেয়। ১৪টি সেলাই পড়েছে তাঁর। শনিবার কালীপদ সর্দারের পথ আটকে দাঁড়ায় তিন ষাঁড়। পাশ কাটিয়ে যেতে গেলে গুঁতিয়ে তাঁর পা ভেঙে দেয় একটি ষাঁড়। বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, ঢিল মেরে, বাঁশ-লাঠি নিয়ে তাড়াতে গেলে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ষাঁড়ের পাল।
কমল সরকার, বরেন সর্দার, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এলাকার মানুষজন জানালেন, ফসল খেত তছনছ করছে ষাঁড়েরা। গোয়ালে গরু থাকলে সেখানেও ‘টার্গেট’ করছে। ভয়ে রাস্তাঘাটে বেরোতে পারছেন না অনেকে। একা কোনও শিশুকে রাস্তায় ছাড়তে সাহস পাচ্ছেন না অভিভাবকেরা। দেবু সদার্র জানালেন, ধারকর্জ করে ১৫ কাঠা জমিতে মটরসুটি চাষ করেছিলেন। ষাঁড়ের উৎপাতে সব শেষ। দশ কাঠা জমিতে বরবটি চাষ নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন সর্দারপাড়ার বাসিন্দা ধনঞ্জয় সর্দার। ক্ষতিপূরণের দাবিও উঠছে নানা মহল থেকে। প্রধান জানান, এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ দরবার করেনি। যদি আবেদন আসে, সাধ্যমতো ব্যবস্থা নেবে পঞ্চায়েত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.