সম্পাদক সমীপেষু...
‘সম্ভবত’ নয়
তানসেন সৃষ্ট ধ্রুপদ গানের গায়কি বা শৈলীর পরম্পরা প্রসঙ্গে বঙ্গদেশের প্রথিতযশা সংগীতগুণী রাধিকা গোস্বামীর গায়কির কথা জানাতে গিয়ে (‘শ্রুতিধর রবীন্দ্রনাথ’, সম্পাদক সমীপেষু, স্বপন সোম, ১৭-১০) অবিভক্ত বঙ্গের গৌরীপুরের জমিদার বংশের অপর সংগীতজ্ঞ বীরেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী লিখেছেন, ‘কেননা তিনি (রবীন্দ্রনাথ) গাইলেন তানসেনের পুত্রবংশের বন্দেজী মীড় বহুল একটি নিখুঁত উচ্চাঙ্গের ধ্রুপদ।...সম্ভবত রাধিকা গোস্বামীজি এই রীতিতেই গাইতেন।’ সম্ভবত নয়, নিশ্চিত ভাবেই গোঁসাইজি গ্বারহার বা গওরহার শৈলীর ধ্রুপদীয়া ছিলেন। তানসেনের পুত্রবংশীয় অষ্টমতম অধস্তন হায়দর খাঁর শিষ্য ছিলেন বেতিয়ার মহারাজা আনন্দকিশোর ও নওলকিশোর। এঁদের শিষ্য বক্তাওরজি। এই ধ্রুপদীয়ার কাছেই তালিম পান গুরুপ্রসাদ ও শিবনারায়ণ মিশ্র ভ্রাতৃদ্বয়। ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ‘বাংলাদেশে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশে ধ্রুপদ গান বেতিয়ার দান। মহারাজা নওলকিশোর ও ভাই আনন্দকিশোর উৎকৃষ্ট রচয়িতা ছিলেন। রাধিকাবাবুর গুরু শিবনারায়ণ ও গুরুপ্রসাদ মিশ্র কাশীর লোক হলেও এঁরা দুই ভাই বেতিয়া থেকে কলকাতায় আসেন।’ অনেকে আনন্দকিশোর-নওলকিশোরকে বেতিয়া ঘরানা হিসেবে চিহ্নিত করতে চান। বলা প্রয়োজন, বেতিয়ার মহারাজাদ্বয় ধ্রুপদ গায়নে কোনও নতুন গায়কি বা স্টাইল তৈরি করেননি।
করেছেন উৎকৃষ্ট মানের বহু ধ্রুপদ রচনা, যেগুলিতে তাঁদের ইষ্টদেবী বিন্ধ্যেশ্বরীর নাম স্মরণ করা হয়েছে।
শ্রদ্ধাস্পদ বীরেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর দ্বিতীয় মন্তব্য, ‘এই জাতীয় ধ্রপদকে আমরা গৌড়হর বাণীর ধ্রুপদ বলে থাকি।’ সংগীতি শব্দকোষের দ্বিতীয় খণ্ডে বিমল রায় ‘বাণী’ শব্দের অর্থে লিখেছেন: বর্ণ, শব্দ, ভাষা, গানের পদ, তালের বোল বা বর্ণ, বাস্করণ, বাচস্করণ। আসলে, ধ্রুপদে গায়কির সাংগীতিক পরিভাষা হওয়া উচিত ‘বাণ’, বাণী নয়। বৈদিক যুগের ধনুরাকৃতি বীণা বা শততন্ত্রযুক্ত বীণাকে ‘বাণ’ বলা হত। গবেষক শ্রীরায় জানিয়েছেন, “বাণের সাধারণ সংখ্যা হচ্ছে চার: ১) গ্বারহার ২) ডাগুর ৩) খণ্ডার ও ৪) নৌহার। কিন্তু এরা ছাড়া আর একটি বাণও আছে, যার নাম ৫) গৌড়ার, এটি ‘গৌড়ী গীতি’-র ভারী গমকের বিশেষত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
অতএব নিঃসন্দেহে রাধিকাপ্রসাদজির ধ্রুপদ শৈলী বা গায়কি ছিল গ্বারহারবাণ যুক্ত। মকরন্দ পাঁড়ে বা তানসেন তাঁর জন্মভূমি গ্বালিয়রের নামানুসারেই প্রথম বাণের নামকরণ করেন গ্বারহার। তাঁর রচিত একটি চৌতাল ধ্রুপদে তানসেন গ্বারহারকে রাজা, খণ্ডারকে ফৌজদার, ডাগুরকে দেওয়ান এবং নৌহারকে বখ্শী অর্থাৎ নগরপাল বা গ্রামরক্ষকের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
ভরসা পাচ্ছি না
‘ওরা কিন্তু সব দিব্যি রয়েছে’ (সম্পাদক সমীপেষু, ২৬-১১)? ভরসা পাচ্ছি না। আশপাশে আগে প্রচুর কাক, শালিক, চড়ুই ও বাবুই দেখতে পেতাম। এখন সারা পাড়াতে ওরা নেই বললেই চলে। আমাদের বাড়ি ও তার লাগোয়া অঞ্চলে মোটামুটি গাছগাছালি আছে। আগে বাড়ির বাগানে প্রায় রোজ দশ-বারোটা কাক, শালিক, একটা মাছরাঙা, দুটো টিয়া, একটা বেনেবৌ। একটা ডাহুক, কোকিল, কুবো, কাঠঠোকরা, বুলবুল, ফিঙে, অনেক চড়ুই, বাবুই ও টুনটুনিরা আসত। তারা আজকাল আসে না। বাড়ির উচ্ছিষ্ট ও গাছে পাকা পেয়ারা পড়েই থাকে। কয়েকটা বিড়াল আর একটা কুকুর মাঝে মধ্যে আসে। আরও অনেক বাড়িতেই পাখিরা আর আসছে না।
আমাদের শিক্ষালয়ে অনেক চড়ুই, শালিক আর কাক টিফিনবেলায় ছেলেদের থেকে টিফিন ভাগ পেত। তারা কেউ আসে না। এমনকী মিড ডে মিলের উচ্ছিষ্ট খেতে একটা কাকও আসে না। সারা বারাসত জুড়েই কাক নেই বললেই চলে। বারাসত লাগোয়া মোচপ্যোলে এখনও কয়েকটা তালগাছ আছে। সেখানে কয়েকটা বাবুই-বাসা শোভা দিচ্ছে। ওই গ্রামেও অন্যান্য পাখির সংখ্যা অদ্ভুত ভাবে কমে গেছে।
বাস্তুচ্যুত মানুষ যেমন বসতবাড়ি ছড়ে ফুটপাতবাসী হয়, ঠিক তেমনই বাস্তুচ্যুত পশুপাখিরা পিছু হঠতে হঠতে বাসভূমি ছেড়ে দূরদূরান্তে চলে যাচ্ছে। ভাল থাকি কী ভাবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.