আলোচনায় বসা নিয়ে গড়িমসিতেই নির্বাচনের ট্রেন ফেল। আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগেই বিনা লড়াইয়ে ৩০০টির মধ্যে ১৩২টি আসন পেয়ে গিয়েছে শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগ। বিরোধীশূন্য নির্বাচনে বাকি আসনগুলিও অনায়াসে জিতে আওয়ামি-জোটের সরকার গঠন এখন নেহাতই সময়ের অপেক্ষা। এই পরিস্থিতিতে তিন দফা হরতাল ও পাঁচ দফা অবরোধের শেষে অপ্রত্যাশিত নরম সুর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার গলায়। ‘একতরফা’ নির্বাচন থেকে সরে এসে তাঁদের সঙ্গে আবার আলোচনায় বসার জন্য তিনি আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে। এমন কথাও বলেছেন, “সমঝোতার পথে আসুন। সমঝোতা করলে কেউ ছোট হয়ে যায় না।” বিএনপি এবং তার শরিক জামাতে ইসলামির ডাকা পঞ্চম দফার ৮৩ ঘণ্টার যে অবরোধ আজ সন্ধ্যা ছ’টায় শেষ হয়েছে, জনজীবনে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্ন হামলায় গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে, কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে এ বার তাতে আর কোনও ধার ছিল না। অবরোধ শেষের ৪৫ মিনিট পরেই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন খালেদা জিয়া, এত ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দীর্ঘদিন যাঁকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। ফলে কৌতূহল ছিল তীব্র। কী বলেন তিনি, কোন নতুন আন্দোলনের পথরেখা দেন।
কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে বেনজির ঠান্ডা সুর শোনা গেল খালেদার গলায়। নির্বাচনকে একতরফা বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, হাসিনা সকলকে ভোটের সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৫৪টি আসনে একের বেশি প্রার্থী না থাকায় সেখানকার মানুষ আর ভোট দেওয়ার সুযোগই পাচ্ছেন না। বাকি আসনগুলোতেও মানুষের বাছাইয়ের সুযোগ সীমিত। খালেদা বলেন, “সুতরাং ডেমোক্র্যাসি ইজ ডেড।”
তাঁদের বয়কটের ফলেই যে নির্বাচনের এই হাল, কার্যত তা মেনে নেন খালেদা। যুক্তি দিয়ে বলেন, “আমরা বরাবর আলোচনা চেয়ে এসেছি। কিন্তু সরকার তা এড়িয়ে গিয়ে কালক্ষেপ করেছে। ফলে সমঝোতা করা যায়নি। আমরাও ভোটে যাতে পারিনি।” কিন্তু হাসিনা যে ফাঁকা মাঠে সরকার গড়ে ফেলবেন, হরতাল অবরোধ করেও তা ঠেকানো যাবে না, এটা হয়তো একেবারেই তাঁর হিসেবের বাইরে ছিল। তাই এ দিন তিনি ফের আলোচনা শুরুর কথা বলেন, সমঝোতার কথাও বলেন। দেড় মাস ধরে হরতাল-অবরোধের পরে একেবারে কোনও কর্মসূচি ঘোষণা না-করলে দলের কর্মীদের কাছে যে ভুল বার্তা যাবে, এটা বুঝেই আজ তিনি ২৯ তারিখ ‘ঢাকা চলো’-র ডাক দিয়েছেন। এই অভিযানের নাম দিয়েছেন ‘মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসি’। সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এর পরেও সরকার আলোচনায় না-এলে কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে।
কাদের মোল্লার ফাঁসির পরে ইসলামাবাদ নিন্দাপ্রস্তাব নেওয়ায় গোটা বাংলাদেশ জুড়েই পাকিস্তান-বিরোধিতার ঝড় উঠেছিল। পাক হাই-কমিশনারকে ডেকে তার কড়া প্রতিবাদও জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু জামাতের জোটসঙ্গী বিএনপি-র নেতৃত্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে অস্বীকার করে একে হাসিনা সরকারের দুর্বলতা বলে বর্ণনা করে। এত দিন পরে খালেদা সেই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “পাকিস্তান যা করেছে তা নিশ্চয়ই ঠিক করেনি। কিন্তু বিষয়টি কূটনৈতিক ভাবে সমাধান না করে অযথা রাজনীতি করছে সরকার।”
এ দিনই ঢাকায় বিশাল নির্বাচনী সভা করেছে আওয়ামি লিগ ও তার শরিকরা। মন্ত্রী ও প্রবীণ আওয়ামি লিগ নেতা মহম্মদ নাসিম বলেন, পাঁচ বছর ধরে সংসদ বর্জন করে কোনও আলোচনায় কখনও অংশ নেয়নি বিএনপি। তার পরে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার ডাকও ফিরিয়ে দিয়ে তারা কালক্ষেপ করেছে। সরকারকে প্যাঁচে ফেলার জন্য নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের পরও কোনও সাড়াশব্দ দেয়নি। এখন তারাই প্রশ্ন করেছে, একতরফা নির্বাচন কেন হচ্ছে? নাসিম বলেন, আমরা একতরফা নির্বাচন চাইনি। কিন্তু বিরোধী পক্ষ মাঠে না-নামলে নির্বাচন তো একতরফাই হবে। সরকারকে এ জন্য দোষারোপ করে লাভ কী? |