কোণঠাসা অমলদের স্বস্তি দিল বুদ্ধের সভার ভিড়
য়েক মাস আগে পঞ্চায়েত ভোটে ভরাডুবি হয়েছে। তারও পরে বর্ধমান শহরের পুরভোটে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র অভিযোগে প্রার্থীই তুলে নিতে হয়েছে! সেই বর্ধমানেই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সভায় উপচে পড়ল ভিড়!
অনুমতি না-পাওয়ায় দু-দু’বার বুদ্ধবাবুর সভার মাঠ পরিবর্তন করতে হয়েছে বর্ধমান জেলা সিপিএমকে। আলমগঞ্জের হারাধনপল্লির যে মাঠে মঙ্গলবার শেষ পর্যন্ত সভা হয়েছে, সেখানে বেশি লোক ধরে না বলে মন্তব্য করেছে পুলিশ। তৃণমূল নেতৃত্বও বামেদের জনসমাবেশকে গুরুত্ব দিতে চাননি। তবু প্রত্যক্ষদর্শীদের বড় অংশের মতে, রাজ্যে পরিবর্তনের পরে বর্ধমান শহরে এত বড় সমাবেশ আগে করতে পারেনি বামফ্রন্ট। জেলারই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকাল ট্রেন, বাস এবং গাড়িতে চেপে বুদ্ধবাবুর বক্তৃতা শুনতে এসেছিলেন মানুষ।
বর্ধমানের আলমগঞ্জের জনসভায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: উদিত সিংহ।
লোকসভা ভোটের প্রস্তুতির সময়ে বামেদের পক্ষে বর্ধমানের মতো রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা জেলায় এমন সমাবেশ করতে পেরে উৎসাহিত সিপিএম নেতৃত্ব। স্বয়ং বুদ্ধবাবু বলেছেন, “যে ভাবে ওরা (তৃণমূল) পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাস চালালো, তা যদি না চালাত অন্তত বর্ধমান জেলায় আমাদের কোনও মতেই হারানো সম্ভব হত না! এর পরে ওরা ঠিক করল, বর্ধমান পুরসভার একটা ওয়ার্ডেও আমাদের জিততে দেওয়া হবে না! পাড়ায়-পাড়ায় মানুষ কথা বলতে পারছেন না। সমস্ত গুন্ডারা ঠিক করছে, কোথায় কী হবে! এই অবস্থা চলতে পারে না!” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আরও আহ্বান, “লোকসভা নির্বাচন থেকেই দেখিয়ে দিতে হবে, সন্ত্রাস করে আমাদের অগ্রগতি রুদ্ধ করা যায়না। আমরা মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাব!”
সমাবেশের বহর কী হয়েছিল, বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থেকেও তার খবর রেখেছিলেন সিপিএমের রাজ্য নেতারা। দলের পলিটব্যুরো সদস্য তথা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “মারধর করে বেশি দিন আটকে রাখা যায় না, এ তো আমরা আগেই বলেছি। বুদ্ধদা’র মতো নেতার সভার জন্য মাঠ পেতেও সমস্যা হয়েছে বর্ধমানে! শেষ পর্যন্ত যেখানে সভা হয়েছে, তার আশেপাশে ভিডিও স্ক্রিন টাঙিয়ে মানুষকে দেখানোর ব্যবস্থা করতে হয়েছে। দু’দিনের মধ্যে হুগলির চুঁচুড়া এবং বর্ধমান, আক্রমণ সত্ত্বেও বুদ্ধদা’র সভায় বিপুল সংখ্যায় মানুষ এসেছেন।” শাসক দলের আক্রমণই তাঁদের মিছিলে লোক বাড়ানোর রাস্তা খুলে দিয়েছে বলে মনে করছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মদন ঘোষের মতো বর্ধমানের নেতারাও।
যে বর্ধমানে এখন তৃণমূলের রমরমা, সেখানে বিরোধী দলের সভায় এই ভিড়কে অবশ্য কোনও গুরুত্ব দিতে নারাজ শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিস্তারিত মন্তব্য করতে না-চাইলেও প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেছেন, “বিভিন্ন জায়গা থেকে দু-পাঁচশো লোক এনে সভা করলে ভিড় তো একটু হবেই! কিন্তু তার মানে সিপিএম পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেয়েছে, এমন ভাবার কারণ নেই!” আর বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার দাবি, “যে মাঠে বুদ্ধবাবুর সভা হয়েছে, সেখানে হাজারখানেক লোক হলেই ভিড় হয়ে যায়। সভাস্থলের চারপাশ মিলিয়ে টেনেটুনে হাজার দশেকের জমায়েত হয়েছিল।”
সভার অনুমতি পাওয়া নিয়েই বামফ্রন্টের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের টানাপোড়েন চলছিল। অনুমতি দিয়েও পিছিয়ে এসেছিলেন বেসরকারি এক মাঠের মালিকও। এ সবের পাশাপাশিই পঞ্চায়েতে বিপর্যয় এবং পুরভোটে প্রার্থী প্রত্যাহার করে দলের ভিতরে-বাইরে প্রবল ভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন বর্ধমানের সিপিএম জেলা সম্পাদক অমল হালদার। দিনের শেষে তাঁর মুখে স্বস্তির হাসি। অমলবাবু বলেছেন, “দু-তিনটি কাগজ বাদে আর কেউ সভা করতে না দেওয়ার ষড়যন্ত্রের কথা লেখেনি। আজ মাঠে লোককে জায়গা দিতে পারিনি! পাশের পার্ক, পুকুরের পাড়, এমনকী জি টি রোড বাইপাসের কজওয়েতেও মানুষ দাঁড়িয়ে বুদ্ধবাবুর বক্তৃতা শুনেছেন।” সভায় লোক আনার জন্য বাসভাড়ার অগ্রিম টাকাও বাস মালিকেরা ফেরত দিয়ে গিয়েছিলেন বলে অমলবাবু জানিয়েছেন। আর এই প্রতিবন্ধকতার কথা মাথায় রেখেই বুদ্ধবাবু বলে গিয়েছেন, “এ সব বেশি দিন মানুষ মেনে নেবেন না! ১৯৭০-৭১-৭২ সাল আমরা দেখেছি!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.