জীবনের বড়দিন |
সবাই যা ভাবে তা হয়তো নয়। বড়দিন মানে অন্য কোনও অজানা দিন।
সেলিব্রিটিরা তাঁদের অভিজ্ঞতা জানালেন সংযুক্তা বসু-কে।
|
পর্দা ভেদ করে ছুটে আসছিল সিংহ
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় |
|
আমাদের ধারণা: ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের প্রিমিয়ারের দিনটা বড়দিন।
তাঁর কথা: বাবা-মায়ের সঙ্গে গিয়ে সাড়ে চার বছর বয়সে নিউ এম্পায়ার হলে ‘আফ্রিকান সাফারি’ দেখা। সে এক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা। আমার প্রথম সিনেমা দেখা। হলে সিনেমা দেখতে দেখতে মা-বাবাকে প্রশ্ন করছিলামআফ্রিকা কোথায়? জন্তুগুলো কি সত্যিকারের? ওরা কী করে সিনেমার ভেতর এল? আমি কি কোনও দিন আফ্রিকা যেতে পারব? পর্দা ভেদ করে সিংহের পাল ছুটে এসে যেন আমার গায়ে পড়ছিল। আর আমি ভয়ে, রোমাঞ্চে হতভম্ব হয়ে যাচ্ছিলাম। ফেরার সময়ও ওঁদের দু’জনকে ছবিটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন করছিলাম। আমার জন্তু-জানোয়ার নিয়ে উত্তেজনা আর কৌতূহল দেখে বাবা পরে অনেক বই কিনে দিয়েছিলেন। তার মধ্যে জিম করবেটের ‘ম্যানইটার অব কুমায়ুন’ও ছিল। এই ভাবেই একদিন ‘চাঁদের পাহাড়’ও হাতে এসে পড়েছিল। হয়তো ‘আফ্রিকান সাফারি’ দেখার দিনই, মনের ভেতর ‘চাঁদের পাহাড়’ খোঁজার বীজটা শেকড় ছড়াতে শুরু করেছিল। জানতেও পারিনি।
|
ঋতুদা গয়না পরিয়ে দিয়ে তাকিয়ে রইল
রাইমা সেন |
|
আমাদের ধারণা: ‘চোখের বালি’ রিলিজের দিন।
তাঁর কথা: না। রিলিজের দিন নয়। ঋতুপর্ণ ঘোষের কাছে ‘চোখের বালি’ ছবিতে আশালতা করার অফার পাওয়ার দিনটাই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড়দিন। একে ঋতুদার ছবি, তায় রবীন্দ্রনাথের লেখা, তার পরে আবার ঐশ্বর্যা রাইয়ের সঙ্গে অভিনয়! ভাবা যায়? এখনও মনে পড়ে সেই দিনটা। ঋতুদা তখন একটা পত্রিকার সম্পাদক। আমাকে নিয়ে ফটোশু্যট করতে গিয়ে মাথায় একটা গয়না পরিয়ে দিয়ে অবাক হয়ে চেয়ে রইল খানিকক্ষণ। আর তার পরেই বলে উঠল, “এই তো আমার ছবির আশালতাকে খুঁজে পেয়েছি।” এই দিনটার সঙ্গেই রয়েছে আর একটা স্মৃতি। প্রথম ‘চোখের বালি’র সেটে যাওয়া। কী বড় সেট! সেদিন বুম্বাদার (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে একটা লভ মেকিং সিন ছিল। ঋতুদা আর বুম্বাদা দৃশ্যটা আমাকে রিহার্স করে দেখাল। সেটাই হুবহু করলাম শট দেওয়ার সময়। ওয়ান টেকে ওকে। গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখা হতে এই তো সেদিন সুভাষ ঘাই বললেন, “‘চোখের বালি’ তুমহারা জীবনকা ‘শোলে’ হো গয়া।’’ আমারও তাই মনে হয়।
|
ইউ আর মাই সন, মাই সিনড্রেলা
পার্নো মিত্র |
|
আমাদের ধারণা: ‘রঞ্জনা, আমি আর আসব না’ দেখে দর্শক যেদিন প্রথম প্রশংসা করল।
তাঁর কথা: মারা যাওয়ার দশ বারো দিন আগে বাবা তখন হাসপাতালে ভর্তি।
তখনও ভাবিনি যে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে বাবা। আমাকে কাছে ডেকে বলেছিল, ‘ইউ আর মাই সন, অ্যান্ড ইউ আর মাই সিনড্রেলা।’ কথাটা শুনে আশ্চর্য একটা অনুভূতি হয়েছিল। আমি তো আসলে খুব বাবার আদুরে ছিলাম। যখন যা চেয়েছি, পেয়েছি বাবার কাছে। কিন্তু সেদিন এ কথা বলে একই সঙ্গে যেমন ছেলের আসনে বসাল বাবা, অন্য দিকে একজন দায়িত্বশীল সন্তানের স্বীকৃতিও দিয়েছিল। জীবনটা ছিল তখনও পর্যন্ত রূপকথার রাজকন্যার মতো। বাবার ওই কথায় আমি যেন বাস্তবের পৃথিবীতে পা দিলাম। বাবা চলে গেল। মা রয়েছে। তবে অসুস্থ। ছোট বোন কলেজে পড়ে। সংসারের সব দায়িত্ব এখন আমার। যখন খুব দুর্বল বা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি, মনে হয় বাস্তবের ধাক্কা আর সহ্য করতে পারছি না তখন বাবার কথাটা মনে পড়ে, ‘ইউ আর মাই সন, ইউ আর মাই সিনড্রেলা।’
ব্যস্ ভেতর থেকে একটা শক্তি পেয়ে যাই।
|
গুরুর গলায় আমার গান
রূপম ইসলাম |
|
আমাদের ধারণা: ‘মহানগর@কলকাতা’ ছবিতে ‘এই তো আমি’ গানের জন্য সেরা প্লেব্যক সিঙ্গার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার খবর এল যে দিন।
তাঁর কথা: খুব বড় একটা দিন এসেছিল সপ্তাহ দু’য়েক আগে। বাংলাদেশের গায়ক মাকসুদুল হক, যাঁর ব্যান্ড ‘ফিড ব্যাক’য়ের অনুপ্রেরণায় আমার প্রথম ব্যান্ড ‘রিদম’ গড়ে তুলেছিলাম ’৯২ সালে। সেই মাকসুদুল সম্প্রতি আমারই লেখা, সুর দেওয়া এবং গাওয়া একটা গান নিজের মতো করে গাইলেন বাংলাদেশের এক টিভি চ্যানেলে। পাশ্চাত্যে সঙ্গীতশিল্পীরা কাউকে তাঁর গানবাজনার প্রকৃত উত্তরাধিকারী মনে করলে নিজের বাদ্যযন্ত্র অনেক সময় তাঁর হাতে তুলে দেন। আর এখানে হল ঠিক তার উল্টো। মাকসুদুল আমার এক অর্থে গুরু। আমি তাঁর ভাবশিষ্য। তিনি নিজেই আমার গান কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন। এটা আমার খুব সম্মানের দিন।
|
বাইবেলের সঙ্গে প্রথম পরিচয়
হোসে র্যামিরেজ ব্যারেটো |
|
আমাদের ধারণা: জাতীয় লিগে মোহনবাগানকে প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন করার দিনটা।
তাঁর কথা: ১৯৯৯ সালের ১৫ মে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দিন। খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত বা ব্যাপটাইজড হই ওই দিন। তখন সাও পাওলোতে থাকতাম। বয়স ২১। ফুটবল নিয়মিত প্র্যাকটিস করলেও জীবন কোন দিকে যাচ্ছে বুঝে উঠতে পারিনি। ব্যাপটাইজ হওয়ার পরে মনটাই পাল্টে গেল। আগের চেয়ে অনেক ধীরস্থির, শান্ত, গোছানো,‘পজিটিভ’ হয়ে উঠলাম। এবং সব চেয়ে বড় কথা, আগের চেয়ে মানুষ হিসেবে যে উন্নত হতে শুরু করেছি তা বুঝতে পারছিলাম। আ বেটার হিউম্যান বিইং। ওই বছরই আশ্চর্য ভাবে ভারত থেকে খেলার ডাক এসেছিল। যশখ্যাতি, অর্থ যাই পেয়ে থাকি তার সূচনা হয়েছিল ব্যাপটাইজ হওয়ার বছর। এখনও কোনও ম্যাচ খেলতে গেলে সঙ্গে বাইবেল থাকে। বাইবেলের সঙ্গে আমার পরিচয়ও ব্যাপটাইজ হওয়ার দিন থেকে। |
|