|
|
|
|
ফুরা ইয়া খুজাকিউয়া |
আজ ‘শঙ্কর’-য়ের জন্মদিনে ‘অ্যালভারেজ’ হাজির থাকলে নির্ঘাত সোয়াহিলি ভাষায় এই
শুভেচ্ছাই জানাতেন। হ্যাপি বার্থডে। নতুন পাওয়া অভিনেতার শিরোপা আর নতুন
কেনা মার্সিডিজ এসইউভির স্টিয়ারিং-সহ দেব। পাশের সিটে ইন্দ্রনীল রায়। |
কখনও ভেবেছিলেন ‘চাঁদের পাহাড়’ না চললে কী হত? হ্যাঁ, হ্যাঁ অবশ্যই ভেবেছিলাম। সাঙ্ঘাতিক টেনশন ছিল। সাইন করার আগে বহু রাত ঘুমোতে পারিনি। নেগেটিভ থটস আসত। ভাবতাম যদি না চলে ছবিটা কী হবে?
যদি না চলত কী হত? গাড়ি ছেড়ে একটা টায়ারও কি কেউ উপহার দিত? টায়ার দিত কি না জানি না। তবে এটা জানি ছবিটা না চললে আমি পাঁচ বছর পিছিয়ে যেতাম।
পাঁচ বছর? হা হা। আরামসে পাঁচ বছর। খারাপ করলে আপনার মনে হয় আমাকে কেউ ছেড়ে দিত? বাঙালিদের এত প্রিয় চরিত্র শঙ্কর। আর সেটা যদি খারাপ করতাম একটা মারও বাইরে পড়ত না। ডেফিনেটলি পাঁচ বছর পেছিয়ে যেতাম। আবার নতুন করে শুরু করতে হত কেরিয়ার।
কাল ক’টায় গাড়ির ডেলিভারি নিলেন? ডেলিভারি নিতে নিতে প্রায় রাত দশটা বেজে গিয়েছিল।
শুনলাম আপনার বোন গিয়েছিল সঙ্গে? হ্যা।ঁ আমি চেয়েছিলাম এই গাড়ির চাবিটা ওর হাতেই প্রথম তুলে দিই। তার পর কালীঘাটে পুজো দিতে গিয়েছিলাম। |
|
আচ্ছা ৮৫ লাখ টাকার এই গাড়িটা কি ভেঙ্কটেশ ফিল্মের তরফ থেকে আপনাকে গিফ্ট করা হয়েছে? অনেকেই বলছে এটা নাকি ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের জন্য আপনার রেমুনারেশন। (হেসে) না, না। পুরোটা গিফ্ট নয়। তবে হ্যাঁ, চার মাস আগে যখন এই গাড়িটা লঞ্চ হয় আমার দেখেই ভীষণ পছন্দ হয়েছিল। এটা ঠিক, ভেঙ্কটেশ ফিল্মস ছাড়া এত দামি গাড়ি আমি কিনতে পারতাম না।
চারিদিকে তো তুমুল হইচই। কী কী পাহাড় অতিক্রম করলেন এই ছবিটার মাধ্যমে? মানুষের মনে একটা ধারণা ছিল দেব মানেই দারুণ নাচে। ‘হেব্বি’ ফাইট করে, দেখতে খুব স্ট্রাইকিং, আমাদের ছেলে কিন্তু বেচারা অভিনয়টা একদম পারে না। ‘চাঁদের পাহাড়’ করার আগে এই পাহাড়টা ছিল আমার কাছে মাউন্ট এভারেস্টের মতো। আজকে ছবিটা রিলিজ করার পর লোকে বলতে শুরু করেছে, দেব অভিনয়ও পারে। এটাই আমার কাছে সব চেয়ে ডিফিকাল্ট পাহাড় ছিল।
অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করাটাই যদি প্রথম পাহাড় হয় তা হলে দ্বিতীয় পাহাড় কী ছিল? নিজেকে ফিট রাখা এমন একটা রোলের জন্য। এই শ্যুটিংয়ে কী পরিমাণ ধকল গিয়েছে আমার শরীরের ওপর দিয়ে সেটা আমি জানি। এবং আজকে বলি, ছবির শেষের অংশটার শ্যুটিং কিন্তু প্রথম শিডিউলে হয়েছিল। তাই আফ্রিকাতে নেমেই আমাকে ওয়ার্ন আউট লুকটা নিয়ে অভিনয় করতে হয়েছিল।
একে ওই মেক আপ, তার পর আড়াই শো কিলোমিটার গাড়ি করে গিয়ে শ্যুটিং। ফিট না থাকলে সত্যি আমি পারতাম না। তা ছাড়া রক ক্লাইম্বিংয়ের যে স্টান্টস ছিল তাতে একটু ভুল হলেই আমি একশো ফুট নীচে পড়তাম। তাই ফিটনেস ঠিক রাখা ছিল সেকেন্ড পাহাড়।
চোটও তো পেয়েছিলেন শ্যুটিংয়ে? হ্যা।ঁ ঘোড়া থেকে পড়ে যাওয়াটা ফেটাল হতে পারত। ইনফ্যাক্ট বেশ কয়েক বার মরতে মরতে বেঁচেছি।
যেমন? ঘোড়া থেকে পড়াটার কথা তো জানেনই। ফুল স্পিডে দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ ঘোড়াটা দাঁড়িয়ে যায়। আমি ছিটকে সামনে গিয়ে পড়ি। যেখানে পড়েছিলাম তার ঠিক দু’ হাত দূরে একটা লোহার খুঁটি ছিল। ওটার ওপরে পড়লে ওখানেই মৃত্যু।
তার পর যে নদীতে পা ঝুলিয়ে শ্যুটিং করছিলাম সেই নদীতে ছিল প্রচুর কুমির। যে কোনও সময় অ্যাটাক করতে পারত। সুডয়ালা কেভস্-য়ের যে গুহাতে শ্যুটিং করেছিলাম সেই গুহায় একটা পাইথন ছিল। সেটা আমরা শ্যুটিংয়ের পর জেনেছি।
হাতির শ্যুটিংয়ে একটা অ্যাকসিডেন্টের ফলে ছ’টা হাতি হঠাৎ ভীষণ চিৎকার করতে থাকে। আমরা সবাই ভেবেছিলাম গেল রে! যে কোনও সময় ওরা পুরো ইউনিটকে পিষে মেরে ফেলতে পারত। আফ্রিকার এই অভিজ্ঞতাগুলো সারা জীবনেও ভুলব না।
‘চাঁদের পাহাড়’য়ের এই অভিজ্ঞতা ‘বুনো হাঁস’য়ে কতটা সহজ করল? ওটাও তো একটা রোড ফিল্ম। ওখানেও প্রচুর স্টান্টস, অনেক ধকল। হ্যাঁ, ডেফিনিটলি ‘চাঁদের পাহাড়’ আমাকে প্রস্তুত করে দিয়েছিল ‘বুনো হাঁস’য়ের জন্য। সব চেয়ে বেশি সাহায্য করেছে মানসিক ভাবে। ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের পর আর কোনও স্টান্ট আমাকে ভাবায় না। ইন ফ্যাক্ট এটাই আমার সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি। ‘চাঁদের পাহাড়’ আমাকে জীবনে সব রকম রিস্ক নিতে শিখিয়ে দিল।
নিজেকে ফিট রাখা থেকে অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দু’টো পাহাড়ের কথা তো বললেন। আর কোন শৃঙ্গ অতিক্রম করলেন? আর একটা পিক আছে। সেটা দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু এখনও অতিক্রম করা হয়নি। সেই পাহাড় হল ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের বিরাট বক্স অফিস সাফল্য। এই সাকসেসটা কিন্তু আমার জীবনটা আরও কঠিন করে দিল। পরের ছবি থেকে মানুষের অনেক এক্সপেকটেশন থাকবে আমার কাছে। আমাকে অভিনেতা হিসেবেও সব ছবিতে প্রমাণ করতে হবে নিজেকে। লাইফ আফটার ‘চাঁদের পাহাড়’ উইল বি ভেরি টাফ।
কিন্তু ‘চাঁদের পাহাড়’ তো প্রায় ক্রিসমাস গিফ্টের মতো। বেস্ট প্রোডাকশন হাউজ, কমলেশ্বরের মতো পরিচালক, বছরের সেরা সময় রিলিজ, এতগুলো হল। প্রত্যেকটা ফিল্মে তো এমন সান্টা ক্লজ পাবেন না? হ্যাঁ, জানি সেটা, খুব ভাল করে জানি। সেটাই তো বলছিলাম। ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের পর জীবনটা আরও কঠিন হয়ে গেল। অনেক দায়িত্ব বেড়ে গেল আমার ইন্ডাস্ট্রির প্রতি।
জন্মদিনে কী রেজোলিউশন নিলেন? জন্মদিনের রেজোলিউশন, অভিনয়টা আরও ইমপ্রুভ করতে হবে। ‘চাঁদের পাহাড়’ দেখতে দেখতে বুঝেছি অনেক জায়গায় আমি আরও ভাল করতে পারতাম। সেই জায়গাগুলো আমার থেকে ভাল কেউ জানে না। সেই এক্সপ্রেশনগুলো ইমপ্রুভ করা, নিজেকে অভিনেতা হিসেবে আরও ভাল ভাবে এস্টাব্লিশ করাটাই আমার রেজোলিউশন। এ ছাড়া আর একটা রেজোলিউশনও নিয়েছি।
কী সেটা? সেটা হল জন্মদিনের পরের দিন থেকেই ‘চাঁদের পাহাড়’কে নিজের সিস্টেম থেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়া।
এ বার পরের ম্যাচের জন্য তৈরি করতে হবে নিজেকে। ‘চাঁদের পাহাড়’ তো ইতিহাস, এ বার আবার সামনে দেখার পালা। পরের বছর ‘মগধীরা’ করছি রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে। সেটাও খুব টাফ রোল। এ বার সেটায় কনসেনট্রেট করতে চাই।
‘মগধীরা’তে কি রুক্মিণী মৈত্র আপনার হিরোইন? ওঁর সঙ্গে আপনার অ্যাফেয়ার বলে একটা গুজব আছে বাজারে?
আমার মনে হয় না রুক্মিণী হিরোইন। কারা যে এ সব রটায়। ছবিতে আমাদের একটা ফ্রেশ ফেস দরকার ঠিকই, কিন্তু সেটা রুক্মিণী নয়। হিরোইন ফাইনালাইজ হয়ে গেলে আপনাকে জানাব।
আচ্ছা এই যে এত দামি মার্সিডিজ এসইউভি চালাচ্ছেন, ২০১৪তে পাশের সিটে কাকে বেশি দেখা যাবে? গতকাল গাড়ি ডেলিভারির সময় বোন বসেছিল পাশের সিটে। (হেসে) বছর তো পড়ুক, ঠিক দেখতে পাবেন কে বসে পাশের সিটে। কিন্তু তার আগে তো আপনাকে নামতে হবে গাড়ি থেকে (হাসি)।
শেষ প্রশ্ন, লোকে কিন্তু বলছে আপনি অভিনয় নিয়ে এখন এতটাই সিরিয়াস যে রাইমা সেনের বাড়ির বাইরে নয়, আপনার এই সাদা গাড়ি বেশি দেখা যাবে সোহাগ সেনের বাড়ির বাইরে। হা হা হা। জোকস্ অ্যাপার্ট, না সেটা মনে হয় হবে না। কারণ ‘চাঁদের পাহাড়’ রোজ রোজ হবে না।
এটা ওয়ান্স ইন আ ব্লু মুন ফিল্ম। আমি আজকে দেব হয়েছি কমার্শিয়াল বাংলা ছবির জন্য। সেখানেই আমি আবার ফিরে যাব।
‘চাঁদের পাহাড়’ পাঁচ বছরে একটা হয়। রোজ রোজ হয় না। রোজ রবিবার হয় না। প্রত্যেক রবিবার মাংসও হয় না। আমি এ সব ব্যাপারে খুব প্র্যাকটিক্যাল। তাই আবার আমি কমার্শিয়াল ছবিতে ফিরে যাব। যখন আবার ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের মতো ছবি পাব করব। তবে অন্য ধরনের ছবির ক্ষেত্রে পিচটা কেমন হয়? বাউন্সটা কী রকম? সেটা আমি বুঝে গেলাম। তাই পরের ছবি থেকে ব্যাটিং করতে অসুবিধা হবে না। |
ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী। |
|
|
|
|
|