অনির্বাণ রায় • শিলিগুড়ি |
থিমের পুজো, থিমের বিয়ের পর এবার থিমের বড়দিন। কেকের থিম অথবা থিমের কেক। বড়দিনের আগে আপাতত থিম-কেক নিয়ে মাতোয়ারা শিলিগুড়ি। শহরের বিধান মার্কেটের ডুয়ার্স বাস স্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকায় ঢুকলেই ক্রিমের ভুরভুর গন্ধ। কোথাও ওই গন্ধের উৎস আগামী বছরের ফুটবল বিশ্বকাপের লোগো ফুলেকো দ্যা আর্মাডিলা, কোথাও আবার বিশ্বকাপের বল ব্রাজুকা। কোথাও আবার চকোলেটের বাড়ির ভেতর থেকে আসা কোকোর গন্ধ। তবে কেদারনাথের বিপর্যয় আর সদ্য প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলার হাসির সামনে দাঁড়ালে কিছুটা বিষাদের ছোঁয়া লাগতে বাধ্য। কেকের মধ্যে রয়েছে সচেতনতার চেষ্টাও। ডুয়ার্সের অরণ্যপথে হাতি-মৃত্যু রুখতে সচেতনতায়ও বানানো হয়েছে কেক। |
কেকের থিমে ২০১৪-র বিশ্বকাপের বল। শিলিগুড়িতে। |
চকোলেটের গাঢ় উপস্থিতি আর বিষাদ-স্মৃতি নিয়েই শিলিগুড়িতে হরেক থিমে তৈরি হয়েছে বড়দিনের কেক। পাশের শহর জলপাইগুড়িতেও চলছে চকোলেট আর ভ্যানিলার তীব্র লড়াই। শহরের বাবুপাড়ার কনফেকশনারিতে চকোলেট গুরুত্ব পেলে কদমতলায় ভ্যানিলা। দোকানের সামনে আলোর মালাতেও কোথাও চকলেট কিউবের আলো, কোথাও আবার গোলাপি-সাদা আলোয় আভায় থিম ভ্যানিলা।
বিধান মাকের্টে এসে কিছুটা বিভ্রান্তই হয়ে গিয়েছিলেন আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা তথা একটি বেসরকারি সংস্থার আধিকারিক অয়ন রায়। সঙ্গে ছিল অয়নের ৪ বছরের ছেলেও। অয়নের কথায়, “বড়দিনের কেক কিনতে এসে থিম দেখেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছি। প্রথমে বিশ্বকাপের বল দেখে কিনতে চাইলাম। তারপর দেখি চকোলেটের বাড়ি। সেটাই কিনব বলে ঠিক করতেই, ছেলে আবদার করে বসল বিশ্বকাপের ম্যাসকট ওর চাই। কেক দিয়ে তৈরি ফুলেকা আর্মাডিলা দেখে আমিও তাজ্জব। সব কিনতে হবে মনে হচ্ছে।”
উৎসব মানে শুধুই মেতে ওঠা নয়, স্মরণও। এমনই জানালেন বিধান মার্কেটের একটি কনফেকশনারি তথা কেকের দোকানের অশোক বসাক। অশোকবাবুর দোকানে নেলসন ম্যান্ডেলার ছবি দিয়ে তৈরি হয়েছে কেক। তবে অশোকবাবুর কথায়, “ওই কেকের খুব চাহিদা। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওই কেক বিক্রি করব না। ম্যান্ডেলা স্মরণের জন্যই ওই কেক আমরা তৈরি করেছি।” ওই দোকানেই তৈরি হয়েছি কেদারনাথ বিপর্যয়ের চিত্র। প্রায় ২২ পাউন্ড ওজনের ওই কেকের দাম রাখা হয়েছে ৭ হাজার টাকা। কেকের মধ্য দিয়েই তৈরি হয়েছে নদী। মন্দির, ভারত সেবাশ্রমের দফতরও। |
কেক তৈরি হচ্ছে জলপাইগুড়িতে। |
কেক দিয়ে মূর্তি তৈরি করে স্মরণ করা হয়েছে পুলিশ কর্মী শৈলেন রায়েরও। চলতি বছরেই বেনিতে দড়ি বেঁধে সেবক পাহাড় পার হতে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই দোকানের অন্যতম কর্ণধার তমাল সরকার বলেন, “শৈলেনবাবুর স্মৃতিতে তৈরি ওই কতেক বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে। তা নিহত পুলিশ কর্মীর পরিবারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” স্মরণের সঙ্গে রয়েছে কেক সচেতনতাও। সম্প্রতি ডুয়ার্সে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যুর মডেল তৈরি হয়েছে কেক দিয়েই। সবুজ জঙ্গলের বুক চিরে যাওয়া রেল পথে ছিন্নভিন্ন হাতির দেহ পড়ে রয়েছে, আর রক্তাক্ত ট্রেন ছুটে চলছে। বড়দিনে উৎসবের মাঝেও বন্যপ্রাণী সচেতনতার বার্তা ওই কেকের মাধ্যমেই বাড়ির হেঁসেলেও ঢুকে পড়বেন বলে জানালেন অশোকবাবু। তার কথায়, “উৎসবেই তো সব এসে মিশেছে। তাই কেকের নানা থিম।”
|