দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় বহু প্রতীক্ষিত হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীর উপরে সেতু নিয়ে আজও অনিশ্চয়তা না কাটায় বাসিন্দা থেকে পর্যটকদের ভোগান্তি চলছেই। বাম আমলে প্রস্তাবিত ওই সেতু নির্মাণ নিয়ে বর্তমান তৃণমূল সরকার আশ্বাস দিলেও ক্ষমতায় আসার আড়াই বছর পরেও কাজ শুরু না হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই সেতু আদৌ হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী মণ্টুরাম পাখিরা বলেন, “ওই সেতু তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় অনুমোদন মিলেছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”
নামখানা ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতের মধ্যে মৌসুনি, ফ্রেজারগঞ্জ, হরিপুর, নামখানা, শিবরামপুর এই পাঁচটি পঞ্চায়েতে জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ। ওই সব এলাকার মানুষকে রোজকার প্রয়োজনে কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার আসতে হয়। সে ক্ষেত্রে প্রায় তিনশো মিটার চওড়া হাতানিয়া-দোহানিয়া নদী পার হতে ভুটভুটিই ভরসা। এ ছাড়াও ওই এলাকায় রয়েছে দু’টি থানা—নামখানা ও ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল, বিডিও অফিস, ব্লক প্রাণিসম্পদ দফতরের অফিস। দ্বারিকনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মৎস্য দফতরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। রয়েছে ৩০টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়-সহ ৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। |
বকখালিতে রয়েছে ৭০টি আবাসিক হোটেল। এর মধ্যে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর, মৎস্য দফতর এবং পর্যটন দফতরের হোটেলও রয়েছে। এই সমস্ত সরকারি দফতরের কর্মী-সহ বহু মানুষকে নিত্য জেলার নানা প্রান্ত থেকে ট্রেনে, বাসে এসে নদী পেরিয়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে হয়। বহু পর্যটক গাড়ি নিয়ে বকখালি বেড়াতে যান। সেতু না থাকায় নারায়ণপুর ঘাট থেকে ভেসেলে গাড়ি পারাপার করে ওপারে যেতে হয়। এতে বেশি খরচের পাশাপাশি প্রচুর সময়ও নষ্ট হয়। ভেসেল পারাপারের সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। পারাপারের জন্য নৌকাও চলে ওই সময়। ফলে রাত বিরেতে কারও কোনও সমস্যা বা প্রয়োজন হলে প্রচণ্ড অসুবিধায় পড়তে হয়। কোনও রোগীকে রাত ১০টার পরে কাকদ্বীপ ও ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। পাশা পাশি ধান থেকে জমির কাঁচা সবজি, মাছ বহনেও সমস্যায় পড়তে হয়।
শিয়ালদহ থেকে নামখানা পর্যন্ত ট্রেনে রাত ১০টার পরে যে সব যাত্রী এসে পোঁছন তাঁদের পারাপারের কোনও উপায় থাকে না। বাধ্য হয়ে অনেকে এ পারে রাত কাটিয়ে পরদিন ভোরে গন্তব্যে রওনা হন, নয়তো একশো থেকে দেড়শো টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে নৌকায় পারাপার করেন। অথচ দিনে যেখানে ভাড়া মাথাপিছু এক টাকা। স্থানীয় মানুষ থেকে এলাকা নিত্য কাজে আসা যাওয়া করেন এমন লোকজনের অভিযোগ, ২০০৯ সালে এলাকার সাংসদ চৌধুরীমোহন জাটুয়া ভোটের প্রচারে এসে হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীর উপরে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তারও আগে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ও একই আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও এতটুকুও কাজ এগোয়নি। তাঁদের সমস্যা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে গিয়েছে।
নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রীমন্ত কুমার মালি বলেন, “এই নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিছুদিন আগে ইঞ্জিনিয়াররা এসে মাপজোকও করে গিয়েছেন। আসা করি শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।” বকখালি হোটেল মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক স্মৃতিকণা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বর্তমানে যাতায়াতের সমস্যার কারণেই বহু পর্যটক এ পথ মাড়ান না। হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীর উপরে সেতু তৈরি হলে আরও বেশি করে পর্যটক বকখালি বেড়াতে আসবেন। ফলে এই এলাকা ছাড়াও নামখানার সার্বিক উন্নয়ন হবে।” |