সামসাবাদের নির্দল পঞ্চায়েত সদস্যেরা অবশেষে তৃণমূলে
ন্দীগ্রামের সামসাবাদের নির্দল পঞ্চায়েত সদস্যরা অবশেষে যোগ দিলেন তৃণমূলে। ফলে নির্দল পরিচালিত এই পঞ্চায়েতটিতে তো বটেই, নন্দীগ্রাম ১ ও ২ ব্লকের ১৭টি পঞ্চায়েতের সব ক’টিতে তৃণমূলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হল।
সামসাবাদের নির্দল পঞ্চায়েত সদস্যরা আগে অবশ্য তৃণমূলেই ছিলেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের কিছু দিন আগে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাঁদের। তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘ওঁরা আমাদের দলেরই কর্মী ছিলেন। আমরা মনে করি দলের স্থানীয় স্তরে কিছু বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটেছিল। ওঁরা আমাদের দলের নীতি বা ব্লক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি। স্থানীয় স্তরে আলোচনা করেই ওঁদের দলে ফেরানো হয়েছে।”
তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি নন্দীগ্রামে তৃণমূলের দুই নেতা শেখ সুফিয়ান ও আবু তাহেরের গোষ্ঠীকোন্দল বহু দিনের। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে সামসাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান হন তাহের ঘনিষ্ঠ শেখ খুশনবি। গ্রাম পঞ্চায়েত পরিচালনায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সুফিয়ান অনুগামীরা প্রচার শুরু করেন। স্থানীয় একটি হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির দখল নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষেরও ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের গোড়ায় দল বিরোধী কাজের অভিযোগে সামসাবাদ এলাকায় প্রকাশ্যে সভা করে সুফিয়ান অনুগামী স্থানীয় অতনু জানা, রহিমুল ইসলাম, শেখ ফকরুদ্দিন-সহ আট জন কর্মীকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল।
গত জুলাই মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের ওই বহিষ্কৃত কর্মীরা দলেরই বিরুদ্ধে নির্দল ও কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে লড়াইয়ে নামেন। নির্বাচনে সামসাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনের মধ্যে ৭টিতে নির্দল ও ২টিতে কংগ্রেস প্রার্থীরা জেতেন। বাকি মাত্র ৪টি আসনে জেতে তৃণমূল। এমনকী পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি আসনেও জেতেন নির্দল ও কংগ্রেস প্রার্থীরা। নির্দল প্রার্থীর কাছে হেরে যান আগের পঞ্চায়েত প্রধান শেখ খুসনবিও। নন্দীগ্রামের মতো দলের শক্ত ঘাঁটিতে তৃণমূলের প্রার্থীদের হারিয়ে নির্দলরা পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েন জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব।
নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টিতে তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ব্যতিক্রম ছিল সামসাবাদ। সামসাবাদে নির্দল ও কংগ্রেস সদস্যরা মিলে পঞ্চায়েতে দখল করেন। প্রধান হন নির্দল সদস্য অতনু জানা। তফসিলি সংরক্ষিত উপ-প্রধান পদে নির্বাচিত হন তৃণমূলের সবিতা মণ্ডল। বিরোধী দলনেতা হন তৃণমূলের অনুপ পট্টনায়েক।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস দু’য়েক আগেই সামসাবাদ পঞ্চায়েতের প্রধান অতনু জানা-সহ নির্দল ও কংগ্রেস পঞ্চায়েত সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য ব্লক নেতৃত্বের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু তাঁদের ফের দলে ফিরিয়ে নেওয়া নিয়ে প্রথমে দলের একাংশ আপত্তি জানায়। শেষমেশ দলের ব্লক কমিটিতে আলোচনার পর তাঁদের দলে ফেরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। গত সপ্তাহে দলের ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল ওই নির্দল ও কংগ্রেস পঞ্চায়েত সদস্যদের দলে যোগ দেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন। সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া পঞ্চায়েত সদস্যরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে নারাজ। অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি প্রধান অতনুবাবুর সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নির্দল সদস্য বলেন, “আমরা বরাবরই তৃণমূলের কর্মী ছিলাম। আমাদের লড়াই ছিল দলের কিছু স্থানীয় নেতার দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তাঁদের সরানোর জন্যই পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছিলাম। এলাকার জনগণ তাঁদের পরাস্ত করেছেন। তাই আমরা নির্বাচনে জেতার পরেই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক হিসেবে কাজ করতে চেয়ে দলীয় নেতৃত্বকে আবেদন করেছিলাম। দলীয় নেতৃত্ব সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন।”
সামসাবাদ ছাড়াও নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্দল ও কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জেতা মোট ৪ জন পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। মহম্মদপুরে ১৩টি আসনের মধ্যে ৭টিতে জিতে ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। ফলে এই পঞ্চায়েতে ক্ষমতার সমীকরণে পরিবর্তন হয়নি। দলের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল বলেন, “সামসাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্দল ও কংগ্রেস মিলিয়ে ৯ জন পঞ্চায়েত সদস্য দলে যোগ দিতে চেয়ে আমাদের কাছে আবেদন করেছিলেন। সবদিক বিবেচনা করেই তাঁদের দলে নেওয়া হয়েছে। আর মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’জন নির্দল ও দু’জন কংগ্রেস পঞ্চায়েত সদস্য আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.