বাদুড় আগলে ধর্ম পালন সন্ধ্যার
স্যার মাছ-ভাত খেয়ে যান। পেট ভরে খাওয়াব, কিন্তু ওদের ধরতে দেব না। নেহাতই একটি বাদুড় শিকারের আবদার শুনে এক পুলিশ অফিসারকে এই ভাবে বাড়ির উঠোন থেকে এক রকম তাড়াতে দেখে চমকে ছিলেন গাঁয়ের অনেকে। কিন্তু ময়নাগুড়ির দক্ষিণ মাধবডাঙা গ্রামের শর্মাপাড়ার সন্ধ্যারাণি শর্মা একরোখা। অক্ষরজ্ঞান নেই, তাতে কী! ‘প্রাণ রক্ষা পবিত্র ধর্ম’প্রকৃতিকে ভালবেসে রপ্ত করা ওই বিশ্বাসের জোরে বাড়ির পিছনে বাঁশ বাগানে বাদুড়ের সংসার আগলে রাখতে আপস নেই তাঁর। সংসারে সদস্য নেহাত কম নয়, হাজার ছাড়িয়ে যাবে। বধূর গর্ব, “ওরা সংসারে লক্ষ্মী, বাড়িতে আছে তাই সুখে আছি।”
কাঠের দোতলা বাড়ির ঠিক পিছন দিকে পানায় ভরা জলাশয়ের ও পাড়ে বিঘা খানেক জমিতে বাঁশবাগান। তার পাশে ধান খেত আর সব্জির বাগান। দিনভর ব্যস্ত স্তন্যপায়ীদের খুনসুটিতে চি-চি শব্দে মুখর গোটা এলাকা। আর তাদের নিয়ে ব্যস্ত সন্ধ্যা দেবী, স্বামী রবীন্দ্রনাথ ও ছেলে পরিতোষ শর্মা। প্রায় প্রতি দিনই স্কুল, কলেজ পড়ুয়ারা ভিড় করেন শর্মা বাড়িতে। বধূ তাঁদের বাদুরের উড়ে যাওয়া, ঘরে ফেরা, সংরক্ষণের কাহিনি বলেন। পড়ুয়ারা শোনেন ২৫ বছর আগে পথের পাশে বাঁশবাগানে কোথায় ছিল বাদুরদের সংসার। রাস্তা চওড়া করার সময় কী করে ওরা বধূর সংসারে ঢুকে পড়েছে।
বাদুড়-ঝোলা। দীপঙ্কর ঘটকের ছবি।
বাদুড়ের জন্য জলাশয়ের পাশে আম, কাঁঠাল, লিচুর মত ফল গাছ বুনেছেন তাঁরা। রয়েছে বিরাট পিটালি গাছও। পেশায় চাষি ছেলে পরিতোষ জানান, বৈশাখ মাসে প্রজননের সময় বাদুড়ের দল ওই গাছে আশ্রয় নেয়। পাতা ও ফল খায়। ছানা বড় হলে বাঁশ বাগানে ফিরে যায়। তাঁর কথায়, ফলের গাছ বাদুড়ের জন্য। ফল পাকলেও আমরা বাড়ির কেউ ও দিকে তাকাই না।”
গত অগস্টে মাসে এক ব্যবসায়ী পিটালি গাছ কিনতে আসেন শর্মা বাড়িতে। সন্ধ্যাদেবী স্পষ্ট জানিয়ে দেন লক্ষ টাকা দিলেও বাদুড়ের আস্তানা ভাঙতে দেবেন। সন্ধ্যাদেবীর এই বাদুড় প্রেমের কথা শুনে বনপাল কল্যাণ দাস তিনি বলেছেন, “ডিগ্রি নিয়ে আমাদের উপলব্ধিতে যা যা আসেনি, প্রকৃতিকে ভালবেসে তার চেয়ে বেশি জেনেছেন ওই বধূ। তাঁর কাছে অনেক কিছু শেখার আছে।” একই বক্তব্য হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন মুখপাত্র অনিমেষ বসুর। প্রশংসা তেমন ভাবে দাগ কাটে না সন্ধ্যারানির মনে। তিনি বলেন, “এটা এমন কী কাজ! মানুষ হিসেবে সবার উচিত অবলা জীবের পাশে দাঁড়ানো।”
পুলিশ আধিকারিকের মুখে তাই কবিরাজের পরামর্শ মতো হাঁপানিতে আক্রান্ত ছেলেকে সুস্থ করতে বাদুরের মাংস খাওয়ানোর কথা শুনে সন্ধ্যা দেবী নিজেকে সামলাতে পারেননি। পত্রপাঠ তাঁকে বিদেয় করে দেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.