কাঁটা বহু, তবু আম আদমির কথা মেনেই মসনদে আপ

২৩ ডিসেম্বর
শেষ হল দু’সপ্তাহের টানাপোড়েন। দিল্লির তখ্তে অবশেষে আম আদমিই!
আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার গড়বেন কি না, তা নিয়ে জল্পনার অন্ত ছিল না এত দিন। আপ-এর উপরে ক্রমশ চাপ বাড়ছিল দিল্লিবাসীর। মানুষের মনোভাব যাচাই করতে বিভিন্ন ভাবে মত নিয়েছেন কেজরিওয়ালরা। তাতেও দেখা গিয়েছে, দিল্লিবাসীর ৭৪ শতাংশ চাইছে, তাঁদের শহরে হোক ‘আপ কি সরকার’। শেষ পর্যন্ত সেই ইচ্ছেই মেনে নিলেন কেজরিওয়াল। আজ দুপুরে লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জঙ্গের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত জানান তিনি। আপ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্ভবত ২৬ ডিসেম্বর রামলীলা ময়দানে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন কেজরিওয়াল। সঙ্গে তাঁর মন্ত্রিসভা।
‘গুরু’ অণ্ণা হজারের সঙ্গে মতভেদে রাজনৈতিক দল গঠন। আর তার ঠিক এক বছরের মধ্যে জনতার রায়ে ক্ষমতার অলিন্দে তিনি। এর আগে আইএএস হিসেবে সেই ক্ষমতা দেখেছেন তিনি। তবে রাজনৈতিক নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এ বারে তা দেখবেন উল্টো দিক থেকে। কেজরিওয়ালের এই ধূমকেতুর মতো উত্থানকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেকেই বলছেন, শূন্য থেকে উঠে আসা এক জন আম আদমিরই জয় এটা।
লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাছে সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে
বেরিয়ে আসছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ছবি: রয়টার্স।
কেজরিওয়ালের সামনে এখন দু’টি পরীক্ষা। প্রথমত, যে ১৮ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে গিয়েছিলেন তাঁরা, তা রক্ষা করা। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসকে সামলানো। এবং কেজরিওয়াল এটাও জানেন, দু’টি বিষয় একে অন্যের সঙ্গে ঘোরতর সম্পর্কিত। কারণ, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারলে নেমে আসতে পারে সমর্থন প্রত্যাহারের খাঁড়া। উল্টো দিক থেকে দেখলে, প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণ দেখিয়ে কংগ্রেস সমর্থন তুলে নিতে পারে। এবং সেটা যে কোনও সময়েই। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের কথাতেই তা এ দিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আপ-ই যে সরকার গড়ছে, কেজরিওয়ালের এই ঘোষণার পরই শীলা অভিনন্দন জানান তাঁদের। এ-ও বলেন, “কোনও সমর্থনই নিঃশর্ত নয়। আপ-র কাজের মূল্যায়নের উপরই তা নির্ভর করছে।”
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে কেজরিওয়াল দাবি করেছিলেন, সরকার গড়লে আগের কংগ্রেস সরকার এবং বিজেপি শাসিত দিল্লি পুরসভার একাধিক দুর্নীতির তদন্ত করবেন। এখন কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়লেও তিনি যে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসবেন না, তা গত কালই স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেজরিওয়াল। তাতে যে কংগ্রেস সমর্থন তুলে নেওয়ার ভয় দেখাতে পারে, তা-ও ভাল করেই জানেন তিনি। কী ভাবে সেই ভয়ের মোকাবিলা করবেন? আজ আপ প্রধান বললেন, “কংগ্রেস সমর্থন তুলে নিলে ফের ভোটে চলে যাব।” একই কথা জানিয়েছেন আর এক আপ নেতা প্রশান্ত ভূষণও। বলা হচ্ছে, এই কথা বলে কংগ্রেসকে পাল্টা চাপে রাখতে চাইছে আপ। কারণ খুব স্পষ্ট, কংগ্রেস এই মুহূর্তে ফের বিধানসভা নির্বাচনে যেতে রাজি নয়। তাদের আশঙ্কা, সে ক্ষেত্রে সবেধন নীলমণি আটটি আসনও হারাতে হবে।
প্রতিশ্রুতি অবশ্য আরও রয়েছে কেজরিওয়ালদের। যেমন, বিদ্যুৎ মাসুল অর্ধেক করে দেওয়া বা নিখরচায় পরিবার পিছু দৈনিক সাতশো লিটার জলের ব্যবস্থা। কংগ্রেসের একাংশের বক্তব্য, এ সব করা প্রায় অসম্ভব কাজ। কেজরিওয়াল যদি করে দেখাতে পারেন, তা হলে কিছু বলার নেই। কিন্তু না করতে পারলে? শীলার বক্তব্য, সুশাসন দিতে না পারলে সমর্থন প্রত্যাহার করা হতেই পারে।
এই খাঁড়া মাথায় নিয়েই সরকার গড়তে চলেছেন কেজরিওয়াল, যিনি অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করা সত্ত্বেও প্রথমে সরকার গড়ার লড়াইয়ে থাকবেন না বলেই ঠিক করেছিলেন। কিন্তু বিজেপির পিছিয়ে আসা ও কংগ্রেসের আপ-কে নিঃশর্ত সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্তে বেকায়দায় পড়ে যান অরবিন্দ। বুঝতে পারেন, এই পরিস্থিতিতে সরকার না গড়লে অপবাদ লেগে যাবে তাঁর গায়ে যে, তিনি পালিয়ে যাচ্ছেন। তাই গণভোটের মাধ্যমে কিছুটা সময় কেনার পরিকল্পনা নেন তিনি। গত দশ দিন ধরে এসএমএস, চিঠি, ইন্টারনেট, জনসভা করে দিল্লিবাসীর রায় সংগ্রহে নামে আপ। আজ ছিল সেই সময়সীমার শেষ দিন।
সমস্ত ভোটাভুটির ফলাফল নিয়ে আজ সকালে গাজিয়াবাদের কৌশাম্বী এলাকার দলীয় দফতরে বৈঠকে বসে দলের রাজনীতি বিষয়ক কমিটি। সরকার গঠনের স্বপ্নে বিভোর জনগণের ভিড় তত ক্ষণে জমা হতে শুরু করেছে কৌশাম্বীর কুড়ি ফুটের গলিতে। গত তিন দিনের মতো আজও দিল্লির সকাল ছিল ঘন কুয়াশায় মোড়া। তাকে উপেক্ষা করেই বাড়ছিল ভিড়।
গত দশ দিনের গণভোটে বেশির ভাগ মানুষ কেজরিওয়ালকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চেয়েছেন। আজ পাঁচশো মিটার দূরের বাড়ি থেকে তিনি যখন দলীয় দফতরে ঢুকছেন, চায়ের দোকানিও তীব্র আকুতি জানালেন তাঁকে, “দয়া করে সরকার গড়ুন। স্বচ্ছ ইমানদার সরকার।” গোটা দিল্লিবাসীর রায় যেন ফুটে উঠল তাঁর গলায়। এর পর দলীয় নেতৃত্বের এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে পটপরগঞ্জের বিধায়ক মণীষ সিসোদিয়া ভোটের ফল ঘোষণা করে বলেন, “অধিকাংশ মানুষ সরকার গঠনের পক্ষেই রায় দিয়েছে।” উদ্গ্রীব জনতা তখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে ব্যগ্র। এর পরেই মণীষের হাত থেকে মাইক নিয়ে কেজরিওয়াল জানিয়ে দেন, “দিল্লিতে আপ সরকার গড়ছে। শপথগ্রহণ হবে যন্তরমন্তর বা রামলীলা ময়দানে।” পরে তিনি জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী হলেও জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা নেবেন না তিনি।
এর পরে দলবল নিয়ে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জঙ্গের সঙ্গে দেখা করতে যান কেজরিওয়াল। সেখানে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত জানানোর পর সোজা চলে আসেন কনস্টিটিউশন ক্লাবে। দলের ২৮ জন বিধায়কের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠ দেন কেজরিওয়াল। দলের এক বিধায়কের কথায়, “কংগ্রেস ও বিজেপি আমাদের ভুল ধরার জন্য ওঁৎ পেতে রয়েছে। তাই শাসক শিবিরে বসে আমাদের কী করা উচিত আর কী করা অনুচিত, তা কেজরিওয়াল স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আমরা তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি কোনও বেচাল করব না। কেউ অন্যথা করলে তাঁকে বহিষ্কার করা হবে।”
কেজরিওয়াল নিজেও বুঝতে পারছেন, সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যত তিনি বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছেন। এক দিকে সমর্থক কংগ্রেস তো আছেই, অন্য দিকে রয়েছে বিধানসভায় বৃহত্তম দল বিজেপিও। কংগ্রেসের সমর্থনে সরকার গড়ার ঘোষণা করতেই বিজেপি নেতা হর্ষবর্ধন বলেন, “কেজরিওয়ালের সিদ্ধান্ত দিল্লিবাসীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। তিনি বলেছিলেন, দুই বড় দলের কারও সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়বেন না।”
এই দুই বড় দলের বিরোধিতা করেই উত্থান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। সুতরাং সমালোচনা আসবেই, বুঝে গিয়েছেন আপ প্রধান। তাই আজ নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তাঁর বক্তব্য, “আমি কংগ্রেসের কাছে ইস্যুভিত্তিক সমর্থন চেয়েছি। এটা সম্পূর্ণ নীতির প্রশ্ন।”
দিল্লি এখন তাকিয়ে একটা প্রশ্নেরই দিকে এই দুই প্রতাপশালী বিরোধীকে (যাদের মধ্যে এক জন আবার এই মুহূর্তে সমর্থকও) সামলে কতটা সুশাসন দিতে পারবেন আম আদমি কেজরিওয়াল?

দিনভর দিল্লি
সকাল ১০টা ১০ কৌশাম্বীর দলীয় দফতরে সাত মিনিটেই সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত আপ-এর।
১১টা ২০ সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সিদ্ধান্ত ঘোষণা কেজরিওয়ালের।
১১টা ৩৪ আপকে অভিনন্দন। তবে শীলা দীক্ষিত বললেন, সমর্থন কিন্তু শর্তাধীন।
১১টা ৩৮ দিল্লিবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা আপ-এর, বললেন বিজেপির হর্ষবর্ধন।
দুপুর ১২টা ৫৫ লেফটেন্যান্ট গভর্নরের বাড়ি পৌঁছে সরকার গড়ার দাবি কেজরিওয়ালের।
১টা ৩৮ কনস্টিটিউশন ক্লাবে দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে দিলেন গণতন্ত্রের পাঠ।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.