উত্তরের চিঠি

হাফাচ্ছে উত্তরের নাটক, দায় কার?
যে শহরের ভোটার সংখ্যা ৫২ হাজার, সে শহরে চার চারটি রঙ্গমঞ্চ। যেখানে ২৫টি ওয়ার্ড নিয়ে পুরসভা, তার পাশে তৈরি হয়েছে দুটো প্রেস ক্লাব। অনেক গ্রুপ থিয়েটারের দল বা থিয়েটার গ্রুপ যে শহরে, তারা গত পাঁচ বছরে ক’টা পূর্ণাঙ্গ নাটক করেছে মনে পড়ে না শহরবাসীর। তবে এরই মধ্যে কতগুলো উৎসব হয়েছে শহরে। নাটকের বিনিময় হল। তোমার নাটক এল, এ বার আমার নাটকের যাওয়ার প্রস্তুতি। ফেয়ার, আলো, খাবার ছাড়া আর কিছু এফোর্ট করা অসম্ভব। হ্যাঁ, তাতেই রাজি পরিচালক। নিজের কাজ অন্য শহরে পৌঁছবে, সেখান থেকে দূরে। কখনও শুনিনি নাটক উৎসব করে কোনও সংস্থা লাভের মুখ দেখে। এ পাশে ও পাশে প্রত্যেক শোয়ে পরিচিত মুখগুলে বসে থাকে। সাদা চুলের ব্রতদা, মাঝবয়সী কিংশুক বা ছবি আন্টি। উৎসব শেষ হল। পত্র পত্রিকায় রিভিউ বেরোল। হুল্লোড়, আনন্দে নতুন মুখগুলো আরও বড় নাটক করার স্বপ্ন দেখা শুরু করল। অনেকে ৩০ বছর ধরে ৩০টা নাটক না করেও কী সব নাট্য-গ্র্যান্টের জন্য ওয়েব সাইট ঘাঁটতে শুরু করল। দাদা বলেছেন, একবার গ্র্যান্ট স্যাংশন হয়ে গেলে, বন্ধ হওয়ার নয়। শুধু বছরের ইউসি-গুলো দিতে হবে। স্কুলঘরে শুরু হল আলোচনা। বসল সভা। চলল বাদনুবাবাদ। কিন্তু আগামী দিনে সাড়া জাগানো প্রোডাকশন নামানো যাবে কি না এই এজেন্ডা ওই সভায় ছিল না।
ধারণা হলেও, ভুল ভাঙানোর দায়িত্ব পরিচালকের, নাট্য দলগুলোর। যে শহরে প্রেস ক্লাবে আমরা-ওরা আছে, এক ক্লাবকে দু’দুবার পুরস্কার দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। না, কোনও লজিক নেই। সমাজ যাদের অন্য রকম ভেবে নেয়, তাদের কি কোনও দায়িত্ব থাকতে নেই! বালুরঘাট কেন এখনও মন্মথ রায়, হরিমাধববাবুর পাদপ্রদীপ থেকে বের হতে পারল না।? কেন সবাই জেল, জল, দেবাংশী দিয়ে চিনবে বালুরঘাটকে? প্রত্যাঘাত করার সাহস হারিয়েছেন পরিচালক। অনেকে তো পুরস্কার না পেয়ে দল ছাড়ার ভাবনা করছে। কী চায় এই শ্রেণি? স্বীকৃতিই শেষ কথা? নইলে গ্রুপ থিয়েটার তার অর্থ হারাবে। এই প্রজন্ম এই স্টেটমেন্ট শেয়ার করছে সোশ্যাল সাইটে। অথচ মাত্র ১০ বছর আগেও বালুরঘাট শহরের ল্যান্ডস্কেপ এমন ছিল না। সবাই আমরা আমাদের নাটক নিয়েই ভাবতাম। বাঁচতাম। কিন্তু এখন সে পথে আলোর তীব্রতা দিনের পর দিন কমে আসছে। জানি নাটকের গাইড বুক হয় না। এই পারফর্মিং আর্ট শেখানো যায় না, আয়ত্ত করতে হয়।
অনেকে বলেন কলকাতা নাটকের রাজধানী। আলো, শব্দ, অভিনয় দেখে আমাদের উত্তরের ভাইবোনদের নাকি অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছে করছে। কিন্তু নিউ বর্ন বেবি তো থিয়েটার শিখে পৃথিবীর আলো দেখে না। সময়, পরিবেশ প্রশ্ন তাকে দিয়ে অভিনয়টা করিয়ে নেয়। আমাদের পরিচালকেরা সেটা শিখছেন না, তাই শেয়ার করতে পারছেন না। আমার উত্তরের ভাষা ঠোঁটে বইবার নদী তিস্তাকে এ পারে নিয়ে ব্যবসা করছেন পরিচালকেরা। আমরা পারিনি। কারণ এখনও আমরা আমাদের মাটি-শিকড় চিনতে পারিনি।
আইসিসিইউ-তে যাওয়া উত্তরের নাটককে সাধারণ বেডে নিয়ে আসার জন্য আসুন একটা অভিযানে নামি। সেখানে থাকবে না পুরস্কার, শর্টকাট। থাকবে কতগুলো খালি পা, যেগুলো মঞ্চের ধুলোকে বহু দিন পর ওড়বার সুযোগ দেবে। দেবী গর্জন, দেবাংশী, জল, বিছনসেই সময় কলকাতার নাটককে চিন্তায় ফেললেও এখনকার শোক মিছিল, ঘর-কথা, কেঁচো, পোস্ট অফিস ইন পোল্যান্ড -এর মতো সাম্প্রতিক উত্তরের নাটকগুলিও ধীরে ধীরে যে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা দুর্গ ভাঙার প্রস্তুতিসেই আওয়াজ, প্রজন্ম চত্বর থেকে যেন শুনতে পাচ্ছি।
মান্না-স্মরণ
আমার ভালবাসার রাজপ্রাসাদে, আমি যে জলসাঘরে, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা, সে আমার ছোট বোন এমন অজস্র গানে সমস্ত বাঙালি সংগীত-পিপাসুদের অনাবিল আনন্দে মনোমুগ্ধ করেছেন সদ্যপ্রয়াত সঙ্গীত সম্রাট পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কাপ্রাপ্ত মান্না দে। পঞ্চাশ থেকে আশির দশকে এই সুরসাধক ক্ল্যাসিকাল, সেমি ক্ল্যাসিকাল মৈথিলি, ভূপালি, সারঙ্গি, গুজরাটি, হিন্দি, বিশেষ করে বাংলা গানে সমস্ত বিশ্বের সঙ্গীতপ্রেমী মনকে সুর ও কণ্ঠের জাদুবলে মোহিত করেছেন। অসংখ্য চলচ্চিত্র গানের নেপথ্যকণ্ঠের সুধারসে সিক্ত করেছেন লক্ষ কোটি শ্রোতাদের। এমন শিল্পীর বিদায়বেলায় তাঁর চিকিৎসায় বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হৃদয়ালয়ে ১৬০ দিনের বিল চোকাতে তাঁর মেয়েকে বেগ পেতে হয়েছে। সরকারি তরফে সহযোগিতা পাননি। তাঁর ১২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাঁর খুড়তুতো ভাইপো। অর্থ আদায়ে বহু আবেদনের পরও বাংলার পুলিশ বিভাগ ও প্রশাসনের তরফে কেউ তাঁর মেয়েকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। তিনি অভিমান করে অনুরোধ সত্ত্বেও তাঁর মরদেহ কিছু সময়ের জন্য বাংলায় পাঠাননি। মান্না দে-র প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে, তাঁর পুষ্পমাল্য ঢাকা মুখ দেখতে বাংলায় তাঁর হাজার হাজার ভক্তানুরাগী বঞ্চিত হলেন। এতে এমন শিল্পীদের কিছু আসে যায় না। তিনি তাঁর মনমোহিত অজস্র গানে তাঁর কীর্তিকে অজেয়, অমর, অক্ষয় করে রেখে গেছেন। দীপ ছিল, শিখা ছিল, নিশি ফুরালে কেহ চায় না আমায়, মানুষ খুন করলে পরে মানুষই তার বিচার করে, আবার হবে তো দেখা, আমি যামিনী তুমি শশী হে, তুমি নিজের মুখে বললে যে দিন সবই তোমার অভিনয়...এমন হাজার হাজার গান গেয়েই তো তিনি কোটি কোটি মানুষের মনকে জয় করে নিয়েছেন। তাই মান্না দে-র মতো শিল্পগুণের ও প্রতিভাময় সাধনামণ্ডিত এবং সুমধুর কণ্ঠস্বরের ও শৈলীর শিল্পী তাঁর গানেই অমর হয়ে থাকবেন। তাই তাঁর গানেই আজ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই, এক এমন শিল্পী হারানোর অশ্রুবেদনায়।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.