বাড়ির চেম্বারে বন্ধ্যাকরণ করানোর সময় এক মহিলার মৃত্যুর অভিযোগে চিকিৎসককে গ্রেফতার করছে পুলিশ। পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া থানার হীরাকুন গ্রামে শনিবার রাতের ঘটনা। চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যু হয়েছে বলে মৃতার পরিবারের অভিযোগে পুলিশ রবিবার সকালে অভিযুক্ত চিকিৎসক অরূপ সরকারকে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ (এ) ধারায় অবহেলার কারণে মৃত্যুর মামলা হয়। এ দিন রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়।
এসডিপিও (রঘুনাথপুর) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মৃতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে চিকিৎসককে গ্রেফতার করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই অস্ত্রোপচারের বৈধতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃত্যুর কারণ জানতে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “প্রয়োজনে বন্ধ্যাকরণ করাটা জরুরি। কিন্তু তা বৈধ জায়গা থেকে বিধিবদ্ধ নিয়ম মেনে সাবধানতা অবলম্বন করে করা উচিত।” চিকিৎসক অরূপ সরকার বলেন, “বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হীরাকুন গ্রামের বধূ তিন সন্তানের মা অনিতা রানা (৩২) বন্ধ্যাকরণ করাতে স্বামী প্রহ্লাদ রানার সঙ্গে শনিবার বিকেলে ওই চিকিৎসকের বাড়িতে যান। পেশায় কাঠমিস্ত্রী প্রহ্লাদবাবুর অভিযোগ, “বাড়ির চেম্বারে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করানোর সময়েই স্ত্রীর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকের গাফিলতিতেই যে মৃত্যু, তা স্পষ্ট।” ওই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেহ আটকে রেখে চিকিৎসকের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন গ্রামবাসী। অনেক রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে। পরে পুলিশ গিয়ে চিকিৎসককে আটক করে ও দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। রবিবার সকালে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়।
ওই চিকিৎসক জামিন পেলেও বাড়ির চেম্বারে অস্ত্রোপচার করার বৈধতা রয়েছে কি না তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। এসডিপিও বলেন, “ওই জায়গায় অস্ত্রোপচারের বৈধতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” বাসিন্দাদের দাবি, বর্তমানে অরূপবাবু আসানসোলের বাসিন্দা হলেও পৈতৃকবাড়ি হীরাকুন গ্রামে তিনি আগেও কিছু মহিলার বন্ধ্যাকরণ করেছেন। মৃতার স্বামীর দাবি, “আগেও গ্রামের কয়েকজনের মহিলার বন্ধ্যাকরণ করেছেন ওই চিকিৎসক। তাই স্ত্রী-র বন্ধ্যাকরণ করাতে তাঁর কাছে গিয়েছিলাম।”
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য বলেন, “উপযুক্ত চিকিৎসার পরিকাঠামো না থাকলে ‘ক্লিনিক্যাল এসটাবলিস্টমেন্ট লাইসেন্স’ দেওয়া হয় না। তাই কোনও চিকিৎসকের বাড়িতে বন্ধ্যাকরণ করানো সম্পূর্নভাবে অবৈধ।.এ বিষয়ে পুলিশ বা মেডিক্যাল কাউন্সিল জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে রিপোর্ট চাইলে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।” |