সংস্কারের অভাবে কাঠাখালি নদীতে নৌকা চলা প্রায় অসম্ভব। জোয়ারের জন্য পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা অথবা হেঁটে নদী পেরোনোই ভবিতব্য হাসনাবাদের শুলকুনি কাছারিঘাটের মানুষের। তাই দীর্ঘ দিন ধরেই নদীর উপরে একটি সেতুর দাবি ছিল এলাকার মানুষের। কিন্তু প্রশাসনের তা নিয়ে কোনও রকম কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। তাই মরিয়া হয়ে রবিবার নদীতে নেমে বিক্ষোভ দেখালেন এলাকার কয়েকশো মানুষ।
বিদ্যাধরী, ডাঁসা, ইছামতী ও কাঠাখালি—এই চারটি নদী দিয়ে ঘেরা ভবানীপুর ১, ২, কালীনগর, ছোটসেহেরা-রাধানগর—এই চারটি পঞ্চায়েতের প্রায় ৬০টি গ্রামে প্রায় এক লক্ষ মানুষের বাস। দ্বীপের এক প্রান্তে শুলকুনি ফেরিঘাট থেকে বেদেমারি, ভোলাখালি হয়ে সন্দেশখালির কালীনগর পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার রাস্তা প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা প্রকল্পের। কলেজ ও কয়েকটি স্কুল রয়েছে। |
শুলকুনি থেকে হাসনাবাদ হয়ে বসিরহাট শহরে যেতে হলে কাঠাখালি নদী পেরোতে হবে। কিন্তু দিনের বেশিরভাগ সময়ে জল না থাকায় হাঁটু অবধি কাপড় তুলে কোনও রকমে নদী পেরোতে হয় বাসিন্দাদের, যা অসুস্থ মানুষের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। সঙ্গে রয়েছে চোরাবালির বিপদ। তাই বাসিন্দারা বহু দিন ধরেই শুলকুনি কাছারিঘাট ও হাসনাবাদের কুলিয়াডাঙার মধ্যে কাঠাখালি নদীর উপরে একটি সেতুটি দাবি করে আসছেন।
বাসিন্দারা জানান, এর আগে সেতুর দাবিতে বসিরহাটের মহকুমাশাসক থেকে প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডলের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। শ্যামলবাবু এআইডিএফয়ের কাছে সেতু তৈরির জন্য অর্থ মঞ্জুর করতে বলেন। জমি জরিপেরও কাজ হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তারপর থেকে সবই চুপচাপ। বাসিন্দাদের বক্তব্য, “ভোট এলেই সব পার্টিগুলি বলতে শুরু করে ক্ষমতায় এলে সেতু করে দেবে। কিন্তু ভোট কাটলেই ...।”
এ দিন সেতুর দাবিতে নদীর দু’পারের কয়েকশো মানুষ সোচ্চার হন। মাইক বেঁধে বক্তৃতাও করেন তাঁরা। শুলকুনি গ্রামের গোবিন্দ মাইতি, মনীন্দ্রনাথ মাইতি, রণজিৎ বিশ্বাসদের কথায়, “সকলেই সুন্দরবনের উন্নয়নের কথা বলে। কিন্তু আমাদের কথা কেউ ভাবে না। শাড়ি-প্যান্ট গুটিয়ে বাচ্চাকে ঘাড়ে বসিয়ে নদী পেরোতে হয়। রাতে নদী পেরোনোর কথা শুনলে ভয় করে। নদী না পেরোতে পেরে এখানে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। ফেরিঘাটে প্রসব হয়ে গিয়েছে অনেক অন্তঃসত্ত্বার।” কাকলি মণ্ডল, কাকলি পাত্র, কমলিকা মাইতি বলেন, “লজ্জা-শরম শিকেয় তুলে এক হাঁটু কাপড় তুলে মেয়েদের নদী পেরোতে হয়। তাতেও চোখ ফোটে না প্রশাসনের।” স্থানীয় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্র মান্না বলেন, “নদীতে চোরাবালি রয়েছে। হঠাৎ করে জোয়ার আসার আশঙ্কায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকেরা। নদী পেরিয়ে স্কুলে এসে পড়ুয়াদের জামাকাপড় ভিজে যায়। স্কুলে এসে পোশাক বদলাতে হয়।” এলাকার হাজারিলাল মাইতি, রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, তীর্থেন্দু মাইতি, চন্দন পাণ্ডে বলেন, “গ্রামে ঠিক মতো স্বাস্থ্য পরিষেবা নেই। নদী পেরোতে না পেরে সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছতে পারেন না অনেকেই। ফলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়। তাই দলমত নির্বিশেষে এটা আমাদের আন্দোলন।”
এ দিন বিকেলে সুন্দরবন কাপের উদ্বোধনে এসে খাদ্যমন্ত্রী তথা হাবরার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘সন্দেশখালির জেলিয়াখালি ও হাসনাবাদের কাঠাখালি নদীর উপরে সেতু হবেই। প্রয়োজনে ঠিকাদার বদল করা হবে। এখন শুনছি, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা শুলকুনির মানুষ সেতু দাবি করেছেন। শুলকুনির সেতুর ব্যাপারে সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” মন্টুরামবাবু বলেন, “জ্যোতিপ্রিয়বাবু ফোন করেছিলেন। আমি বিষয়টি ঠিক জানি না। দফতরে গিয়ে খোঁজ নেব। আমার পূর্বতন মন্ত্রী যদি সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন, তাহলে আমি অবশ্যই সেতু তৈরি করে দেব।” |