বিবেক দেবরায়ের লেখা ‘(শুধু ইন্ডিয়া নয়, ভারতও উন্নয়ন চায়’, ১২-১২) অন্যান্য খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদের রচনার মতোই চিন্তাশীলতা এবং মননের পরিচয় বহন করে। আবার, বহু অর্থনীতিবিদের পথ অনুসরণ করেই, উন্নয়ন নিয়ে অনেক কথা বলা হলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এবং অবশ্যই দেশীয়) যে প্রকৃত উন্নয়নের এক মস্ত বড় এবং সবচেয়ে বড় হাতিয়ার, এ কথাটা এখানেও অনুপস্থিত।
সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদের কাছে এ প্রসঙ্গ তুলতে তিনি স্বীকার করলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপারটা তিনি একেবারেই বোঝেন না। আর এক প্রখ্যাতের কাছে এ বিষয়ে আলোচনা করে ভারতীয় বিজ্ঞান গবেষণার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে তাঁরও স্বীকারোক্তি— এ ব্যাপারগুলো বিশদে জানার তাঁর কোনও দিন সুযোগ হয়নি। এই দুই স্বীকারোক্তি তাঁদের সততার প্রকাশ, কৃতিত্বের নয়। ব্যাপারটা বুঝতে বা জানতে আইনস্টাইন হওয়ার দরকার হয় না।
কেবল অর্থনীতিবিদদের উপর দোষারোপ করাটা অন্যায়। ভারতের বিজ্ঞানীকুলও গবেষণাপত্র প্রকাশ করায় যতটা মনোযোগী, সামগ্রিক ভাবে ভারতীয় বিজ্ঞানের মান নিয়ে তাঁদের অনেকেই ততটা মাথা ঘামান না। |
এ কথা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাই না যে, কর্মরত অবস্থায় ও অবসরের পর প্রাপ্তিযোগ বৃদ্ধি পাওয়াতেই বিজ্ঞানীদের এই জেগে ঘুমিয়ে থাকা। তাঁদের গবেষণাকে খাটো করে দেখার কোনও মানসিকতা পত্রলেখকের নেই। তবে পরিসংখ্যান বলছে, গবেষণাপত্রের সংখ্যা যত স্ফীত, মান তার ধারেকাছে পৌঁছতে পারছে না।
অধ্যাপক সি এন রাও (মুষ্টিমেয় কিছু বিজ্ঞানীর এক জন) বরাবরই এ ব্যাপারে সরব। কেবল সাম্প্রতিক কালে নয়, গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষ ভাগে ভারতের জাতীয় আয়ের শতকরা ভাগ হিসাবে গবেষণা খাতে বরাদ্দ কমে যাওয়ায় তিনি সরব হয়েছিলেন এক প্রবন্ধ মারফত। যার শিরোনাম: সেভিং ইন্ডিয়ান সায়েন্স। এ প্রবন্ধ তখন কিছুটা ঝড় তুলেছিল।
এই ২০১৩ সালে প্রকাশিত কনসালটেন্সি কোম্পানি ম্যাকিনসে সম্পাদিত এক বই রিইমাজিনিং ইন্ডিয়া হাতে এল। ভারতের ভাবমূর্তির পুনর্গঠনে উঠেপড়ে লেগেছেন এমন ৬৩ জন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের প্রবন্ধ এতে রয়েছে। বেশ বড় অংশ বিদেশি। এই পুনর্গঠনে ভারতীয় বিজ্ঞান গবেষণার যে কোনও অবদান থাকতে পারে সে কথা কোনও প্রবন্ধে পাওয়া গেল না। ‘ব্যবসা ও প্রযুক্তি’ বলে একটা পৃথক অংশ আছে (১৬টা প্রবন্ধ), সেখানেও এই ব্যাপারটা গুরুত্ব পায়নি। দু-এক জন উদ্ভাবনের কথা বলেছেন। সে উদ্ভাবনে মূল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান কে সরবরাহ করবে, সে ব্যাপারে নীরব থেকেছেন।
অর্থনীতিবিদদের কাছে আমার আবেদন, উন্নয়নের আলোচনায় দেশীয় গবেষণার বিষয়টা অন্তত এক বার উচ্চারণ করুন। আপনাদের কথা হয়তো সরকার বা বিদ্বজ্জনের কানে পৌঁছয়। শোনেন কি না জানি না।
সুব্রত ঘোষ। কলকাতা-৬৮
|
তথাগত রায় (‘অপ্রিয় সত্য’, সম্পাদক সমীপেষু, ৫-১২) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের ‘ভণ্ড’ বলতেও দ্বিধা করেননি। ইতিহাস থেকে ‘প্রমাণ’ দিতে গিয়ে তাঁর বক্তব্য: নেহরু হ্যারো আর কেমব্রিজ থেকে পড়াশোনা করে যা বুঝতে পারেননি, সেটা বিবেকানন্দ খুব সহজেই বুঝেছিলেন, ‘হিন্দু, রাজনীতি, সমাজসংস্কার ও অন্যান্য যাহা কিছু সবই ধর্মের ভিতর দিয়া ছাড়া বুঝিতে পারে না’।
যদি বিষয়ের একটু গভীরে গিয়ে দেখি, তা হলে দেখতে পাব, ঊনবিংশ শতাব্দীতে জাতি এবং রাষ্ট্র— এই দুটো নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে বিবেকানন্দর মতবাদই একমাত্র ছিল না, বিবেকানন্দ রাষ্ট্র বিষয়ে হেগেল-এর প্রভাবে সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রবল সমালোচনার সম্মুখীন করেন। হেগেল থেকে উনি একটা জিনিসের তাৎপর্য বোঝেন যে, প্রতিটি রাষ্ট্রই একটি মূলগত বৈশিষ্ট্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্যটি ধর্ম। বিবেকানন্দের প্রচেষ্টার দুটি দিক ছিল। প্রথমত, প্রাচীন উপনিষদকে তৎকালীন পরিপ্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক করে তোলা এবং দ্বিতীয়ত নতুন জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠা করা। তথাগতবাবু যে জিনিসটি এড়িয়ে গেছেন, তা হল, বিবেকানন্দ কখনওই রাজনীতির পরিসরে আসেননি এবং রাজনীতির প্রসঙ্গে তাঁকে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রেক্ষিতে আনা অনুচিত।
সেই সময় বিবেকানন্দ ছাড়াও বঙ্কিমচন্দ্র, বিপিনচন্দ্র পাল, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রবীন্দ্রনাথ প্রমুখের বক্তব্যও এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথ রাষ্ট্রকে প্রধান ভূমিকা না দিয়ে সমাজ নিয়ে ইতিহাস রচনার চেষ্টা করেন।
সূচনা পর্বে কংগ্রেসের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ভারতের বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি, ভাষা, ধর্ম, প্রাদেশিকতা ইত্যাদি ব্যাপারে আলোচনা নিষিদ্ধ ছিল। তা সত্ত্বেও আমরা দেখি, ১৯০৬ সালে মুসলিম লিগ কংগ্রেসের বাইরে থেকে নিজেদের সত্তা জাহির করে। তাদের মতে, ভারতে পশ্চিমি লোকতন্ত্র চলতে পারে না। কারণ, এ দেশে স্থায়ী সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী আছে। সেই পরিস্থিতিতে তথাগতবাবু নেহরুর ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে ‘বিকৃত এবং ভণ্ডামি’ বলে সরলীকরণ করেছেন। কারণ, নেহরুর অনুসৃত পথই ভারতকে এক রাখা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ। যে কোনও জিনিসেই ভাল-মন্দ কিংবা তর্কের অবকাশ থেকে যায়। কিন্তু তা বলে প্রধান বিষয়টিকে ত্যাগ করা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়। দিল্লি-১১০০১৯
|
ডুয়ার্সের জঙ্গলে সাত-সাতটি হাতির মৃত্যু এবং ‘গণহত্যা’ শীর্ষক সম্পাদকীয় (১৫-১১) প্রসঙ্গে বলি, ২০০৪ সাল থেকে এই পর্যন্ত ওই অঞ্চলে প্রায় ৫০টির বেশি হাতির মৃত্যু হল মানুষের ভুলে।
বিশ্বের বহু দেশেই গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যে রেলপথ বা সড়কপথ থাকে, তা থেকে বন্যপ্রাণীদের বাঁচাবার জন্য ওয়াইল্ড ক্যান্টিলিভার ব্রিজ আছে। সড়ক বা রেলপথের ধারে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বন্যপ্রাণীদের দুঘর্র্টনার হাত থেকে বাঁচাতে ওই ব্রিজ ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয়। আমাদের এখানে বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তার জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা করা যায় না কি?
রতন চক্রবর্তী। উত্তর হাবড়া,
উত্তর চব্বিশ পরগনা |