সম্পাদকীয় ১...
জুজু
ক বার শৈশবের চৌহদ্দি পার হইয়া গেলে ‘জুজু’ বস্তুটি হাস্যকর ঠেকে। উহাতে যে ভয়ের কিছু নাই, আসলে যে জিনিসটাই নাই, অথচ শিশুকালে কী ভয়টাই না পাইতাম— ভাবিয়া ভারী আমোদ হয়। তবে, যে বয়সে জুজুর প্রকৃত মহিমা বুঝিয়া মানুষ মুচকি হাসে, তাহার অনেক বৎসর পরেও জুজু কিন্তু পিছু ছাড়ে না। নাম বদলাইয়া আসে, এইমাত্র। যেমন, গত মে মাস হইতে একটি জুজু গোটা দুনিয়ার বাজারে হানা দিতেছিল। তাহার নাম, ‘টেপারিং’। ২০০৮ সালে বিশ্বমন্দা আরম্ভ হইবার পর হইতেই মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে বিপুল পরিমাণ টাকা ছাড়িতেছে। তাহা ‘কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং’ নামে পরিচিত। টাকা ছাড়িবার পথ দুইটি। এক, বিভিন্ন মর্টগেজ বা বন্ধকী ঋণের উপর ভিত্তি করিয়া বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি বাজারে যে ঋণপত্র ছাড়িয়াছিল (সেই বন্ধকী ঋণগুলি পরিশোধ করিবার ব্যর্থতাতেই মন্দার সূচনা, ফলে ঋণপত্রগুলিও বাজারে মূল্যহীন), সরকার তাহা কিনিয়া লইতেছিল। দুই, সরকার বাজার হইতে সরকারি বন্ডও কিনিতেছিল। মন্দার বাজারে টাকার জোগান বজায় রাখাই এই খয়রাতির উদ্দেশ্য। কিন্তু কোনও খয়রাতিই অনন্তকাল চলিতে পারে না। অতএব, এই কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং গুটাইয়া লইতেই হইবে। সেই গুটাইবার প্রক্রিয়াটির নামই টেপারিং। ইহাই এখন আর্থিক বাজারের প্রধানতম জুজু। মে মাসে ফেড রিজার্ভের প্রধান বেন বার্নান্কে অদূর ভবিষ্যতে টেপারিং শুরু করিবার ইঙ্গিত করিতেই বাজার কাঁপিয়া উঠিয়াছিল। দুরন্ত শিশুরা জুজুর নামে যেমন কাঁপে, ঠিক সেই ভঙ্গিমায়। সমস্ত সিদ্ধান্তের পিছনে একটিই আশঙ্কা সক্রিয় ছিল: টেপারিং আরম্ভ হইলে বাজার হুড়মুড় করিয়া ধসিয়া পড়িবে।
সেপ্টেম্বরে টেপারিং আরম্ভ হয় নাই। বাজার সুস্থির হইয়াছিল। এই ডিসেম্বরে ফেড জানাইয়া দিল, টেপারিং আরম্ভ হইবে। বাজার কিন্তু সেই ধাক্কাটি দিব্য সামলাইয়া নিয়াছে। ফেড-এর ঘোষণার অব্যবহিত পরেই প্রায় সব শেয়ার বাজারের সূচকের পতন হইয়াছিল, কিন্তু তাহা সাময়িক। সূচক স্বাভাবিক হইয়াছে। ফেড টেপারিং-এর যে হার মনস্থ করিয়াছে, দৃশ্যতই বাজার তাহা পূর্বে আঁচ করিতে পারিয়াছিল, এবং তাহাকে নিজের হিসাবে ঢুকাইয়া লইয়াছিল। মার্কিন অর্থনীতি যে শ্লথ গতিতে হইলেও ফের স্বাভাবিক হইতেছে, ইহাও বাজারকে আশ্বস্ত করিয়াছে। সে দেশে সুদের হারও এখনই চড়িতেছে না। ফলে, বাজার টেপারিং-এর (প্রত্যাশিত) অভিঘাত হজম করিয়া ফেলিল। এবং, প্রমাণ করিল, ইহা নিতান্তই জুজুর ভয় ছিল— যেখানে ভয়টিই মুখ্য, তাহার কারণ নহে। ফেডারেল রিজার্ভও খানিক পরিণত হইয়াছে— জানাইয়াছে, টেপারিং-এর হার অর্থনীতির স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করিবে। ‘অস্বাভাবিক’ আর্থিক নীতি হইতে স্বাভাবিকে প্রত্যাবর্তনের ইহাই সম্ভবত শ্রেষ্ঠ পথ।
ভারতের শেয়ার বাজারও বিশ্ব-প্রবণতার সহিত সঙ্গতি রাখিয়াছে। মে এবং ডিসেম্বর, উভয় ক্ষেত্রেই। সত্য, ভারতীয় অর্থনীতিতে টেপারিং-এর প্রভাব পড়িবে। ডলার বিনিয়োগ কমিবে, এবং তাহার চাপ পড়িবে টাকার দামে। কিন্তু মে মাসে ভারত বাণিজ্য খাতে ঘাটতি লইয়া যে দিশাহারা অবস্থায় ছিল, এখন পরিস্থিতি তেমন নহে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে এই ঘাটতি মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের দুই শতাংশেরও কম। আয় বৃদ্ধির হারও কিঞ্চিৎ ইতিবাচক ইঙ্গিত করিতেছে। স্বস্তির সমাচার, কিন্তু নীতিনির্ধারকরা এই স্বস্তিতে গা ভাসাইয়া দিলে মুশকিল। এখনও ভারতের লৌহ আকরিক রফতানি ধুকিতেছে, কয়লার আমদানি ক্রমবর্ধমান। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যের দৌলতে বাণিজ্যে ভারতের যে সুবিধা ছিল, তাহা বিনষ্ট হইয়াছে। এখনই নজর না দিলে ফের বিপন্ন হইতে বেশি সময় লাগিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.