বছর শেষ হয়ে এল। দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে বাঙালির বদনাম আছে। বছরের গোড়ায় যে-সব কাজ করার কথা ভাবা হয়েছিল, দেখা যাবে তার অনেকটাই এখনও করা হয়নি।
আর্থিক বছরের তিন ভাগ কেটে গেলেও কেউ কেউ হয়তো এখনও ২০১২-’১৩ সালের আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি। খোলা হয়নি ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অনেক টাকাই অলস ভাবে সামান্য সুদে পড়ে আছে সেভিংস অ্যাকাউন্টে। বাজার উঠলে শেয়ার এবং মিউচুয়াল ইউনিট বিক্রির কথা ভাবা হয়েছিল। বাজার বেশ কয়েক বার ওঠা সত্ত্বেও আলসেমির কারণে বিক্রি করা হয়ে ওঠেনি। কোনও কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে দাখিল করা হয়নি কে ওয়াই সি সংক্রান্ত কাগজপত্র। সংগ্রহ করা হয়নি নতুন সি টি এস চেক বই। নমিনেশন নথিবদ্ধ করা হয়নি অনেক ক্ষেত্রেই। করব করব করে উইল তৈরি করেননি অনেকেই। কর সাশ্রয়ের লক্ষ্যে লগ্নি করার কাজ এখনও বাকি। নতুন বছরের গোড়ায় হয়তো আবার শপথ নেওয়া হবে ফেলে রাখা কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার। পাশাপাশি, প্রতিজ্ঞা করতে হবে, যাতে সেই শপথের মর্যাদা থাকে। সপ্তাহে একটি করে জমে থাকা কাজ সারার ব্যবস্থা করলে দেখা যাবে মাস দুয়েকের মধ্যেই আপনার সব শপথ বাস্তবে পরিণত হয়েছে এবং মানসিক দিক থেকে আপনি বেশ ফুরফুরে বোধ করছেন।
অবশেষে মূল্যবৃদ্ধি-সূচক নির্ভর জাতীয় সঞ্চয়পত্র (ইনফ্লেশন ইনডেক্সড) ন্যাশনাল সেভিংস সিকিউরিটিজ (কিউমুলেটিভ) ইস্যুর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই লগ্নিপত্রে লগ্নি করে মূল্যবৃদ্ধির কারণে টাকার যে-মূল্যক্ষয় হয়, তা থেকে সঞ্চয়কে রক্ষা করা যাবে বলে জানানো হয়েছে। খুচরো পণ্যমূল্য যে-হারে বাড়বে, তার তুলনায় বেশি সুদ পাওয়া যাবে এই প্রকল্পে। যে-প্রকল্পটি এখন ইস্যু করা হচ্ছে, তাতে নিয়মিত সুদ বণ্টন করা হবে না। সুদ ষাণ্মাসিক ভিত্তিতে জমতে থাকবে আসলের সঙ্গে। প্রকল্পটির অন্য বৈশিষ্ট্যগুলি একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
• ন্যূনতম লগ্নি ৫০০০ টাকা
• সর্বাধিক লগ্নি বছরে ৫ লক্ষ টাকা, মেয়াদ ১০ বছর
• সুদের হার: স্থির সুদ ১.৫ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হবে খুচরো বাজারের মূল্য সূচক (কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স)-এর ভিত্তিতে হিসাব করা মূল্যবৃদ্ধির হার। অর্থাৎ চড়া বাজারে সুদও থাকবে বাজার দরের মতোই উঁচু। শর্তসাপেক্ষে প্রবীণ নাগরিকেরা কেনার ১ বছর পরে এই লগ্নিপত্র ভাঙাতে পারবেন। অন্যেরা পারবেন ৩ বছর পরে। অনাবাসী ভারতীয়-সহ এক বা একাধিক ব্যক্তিকে নমিনি হিসেবে মনোনীত করা যাবে।
• এই লগ্নিপত্র জামিন রেখে ঋণ নেওয়া যাবে।
• ব্যক্তিগত লগ্নিকারী, অবিভক্ত হিন্দু পরিবার, দাতব্য সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি প্রকল্পে লগ্নি করতে পারবে।
• ইস্যু খুলছে আজ ২৩ ডিসেম্বর, চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রয়োজনে আগেও বন্ধ করা হতে পারে এই ইস্যু। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ইস্যু হবে এই লগ্নিপত্র।
ব্যাঙ্কগুলি হল: স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং তার সহযোগী বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক এবং স্টকহোল্ডিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া।
সুদের হার আকর্ষণীয় হওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি-সূচক লগ্নিপত্র প্রথম দিন থেকেই ভাল জনপ্রিয়তা অর্জন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে ইস্যুর আকার কত বড়, তা জানানো হয়নি। প্রথমটি ক্রমপুঞ্জিত হলেও পরে নিয়মিত আয়যুক্ত মূল্য সূচক বন্ড ইস্যু করার সম্ভাবনা আছে। ছোট লগ্নিকারীদের কাছে দীর্ঘ মেয়াদে এটি একটি ভাল বিনিয়োগের জায়গা হয়ে উঠতে পারে।
গত সপ্তাহের দ্বিতীয়ার্ধে বড় আকারের উত্থান-পতন দেখা গিয়েছে শেয়ার বাজারে। প্রবল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রঘুরাম রাজন সুদ বৃদ্ধির পথে না-হাঁটায় বুধবার উল্লসিত হয়ে ওঠে শেয়ার এবং বন্ডের বাজার। পর পর কয়েক দিন পতনের পর বুধবার সেনসেক্স বাড়ে ২৪৮ পয়েন্ট। পর দিনই ভাটা পড়ে এই উচ্ছ্বাসে। জানুয়ারি থেকে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের বাজার থেকে বন্ড কেনা কমানোর সিদ্ধান্তে সাময়িক ভাবে মুষড়ে পড়ে ভারতীয় বাজার। বৃহস্পতিবার সেনসেক্স নামে ১৫১ পয়েন্ট। শুক্রবার সেনসেক্স ফের ৩৭১ পয়েন্ট বেড়ে আবার পেরিয়ে যায় ২১,০০০। নিফ্টি স্পর্শ করে ৬,২৭৪ অঙ্ক। বাজার ওঠে মূলত রিল্যায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারকে ভর করে।
তবে মার্কিন সরকার ত্রাণ কমাতে শুরু করলেও এখনই ভারতে ডলার প্রবাহ ততটা কমবে বলে মনে হচ্ছে না। জানুয়ারিতে প্রকাশিত হবে তৃতীয় ত্রৈমাসিক কোম্পানি ফলাফল। তা মোটের উপর ভাল হলে নতুন বছরে বাজার ভালই থাকবে আশা করা যায়। |