|
|
|
|
আদিবাসী মেয়ে, চতুষ্কোণ, চিরঞ্জিত |
সৃজিত মুখোপাধ্যায়-এর পরের ছবিতে তিনি। দু’মাস পরেই প্রকাশিত হতে চলেছে
রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি ও স্বরচিত কবিতা। চিরঞ্জিত-এর মুখোমুখি সংযুক্তা বসু। |
মূলধারার ‘নিউ এজ’ ছবিতে এ বার আসতে চলেছেন চিরঞ্জিত।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘চতুষ্কোণ’ অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেলেও যে চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব অঞ্জন দত্ত অভিমানে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, সেই চরিত্রেই অভিনয় করার কথা হচ্ছে চিরঞ্জিতের।
চিরঞ্জিত জানালেন, সৃজিতই তাঁকে ফোনে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। চিত্রনাট্য শুনে চিরঞ্জিতের ভাল লাগে এবং রাজিও হয়ে যান। শুধু তাই নয়, যে-পরিচালকের চরিত্রে তিনি অভিনয় করতে পারেন, তার মুখে ভারী দাড়ি থাকবে বলে চিরঞ্জিত দাড়িও রাখতে আরম্ভ করেছেন। “তবে এখনও কোনও সইসাবুদ হয়নি। তাই কথা যে পুরোপুরি পাকা এটাও কিন্তু বলছি না,” জানালেন চিরঞ্জিত।
অঞ্জন দত্তের ‘চতুষ্কোণ’ না করার ফলে, চিরঞ্জিত যে বাংলা মশলা ছবির আঙিনা থেকে হালের মননশীল বাণিজ্যিক ছবির বৃহত্তর বৃত্তে চলে আসতে পারেন, এটা কেমন লাগছে? চিরঞ্জিতের মতে অঞ্জন দত্ত এই রোল করলে খুবই মানাত। তাই তাঁর সরে যাওয়ার অবকাশে তিনি ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেছেন এমনটা নয়। বললেন, “অঞ্জনদা বড় অভিনেতা। কোনও দিনই কারও ‘পেরিফেরি’তে ঢোকার চেষ্টা করিনি। এখনও তাই। হ্যাঁ, এটা ঠিকই যদি ‘চতুষ্কোণ’য়ে কাজ করি শেষ পর্যন্ত, তা হলে বলব বাংলা ছবির এই সুসময়ের শরিক হলাম। এত দিন ‘চিরঞ্জিত’ হয়ে সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি ছবিতে কাজ করে প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি। আমার আর এক নাম ‘দীপক’। সে এক সময় যেমন কাজ করার স্বপ্ন দেখত, সেই স্বপ্নকে ছুঁতেও পারল। এখন দেখা যাক কী হয়!”
বারাসতের বিধায়ক পদে ব্যস্ত রাজনৈতিক জীবন, জনসভা, উন্নয়নের কাজ, প্রস্থে প্রস্থে সারা দিনে মিটিং, বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের উদ্যোগ, এ সব সামলেও চিরঞ্জিত চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সৃজনশীল প্রয়াস। ‘বস’ ছবিতে জিতের সঙ্গে, কিংবা ‘বিন্দাস’ ছবিতে দেবের সঙ্গে অভিনয় বা বিভিন্ন জলসায় গিয়ে গান গাওয়া আর পুরনো ছবির জনপ্রিয় সংলাপ বলার বাইরে হেঁটে আজকের চিরঞ্জিত তাঁর সৃষ্টির জগতে অন্তর্মুখী। শুধু অভিনয় নিয়েই থাকতে চান না।
ফিরছেন তাঁর স্বরচিত কবিতা আর রবীন্দ্রসঙ্গীতে।
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হতে চলেছে তাঁর প্রথম স্বরচিত কবিতা ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি। সিডির নাম ঠিক না হলেও রেকর্ডিংয়ের কাজ চলছে।
রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রথম তাঁর আড় ভেঙেছিলেন অবশ্য প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। যখন নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে চিরঞ্জিতকে দিয়ে তিনি কাজী নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি রেকর্ডিং করান। সেই সময় থেকেই চিরঞ্জিতের মধ্যে সিডি বের করার একটা ইচ্ছে দানা বাঁধতে থাকে। কলেজ জীবনে কবিতা লিখতেন লিটল ম্যাগাজিনে। আবার শুরু হল নতুন করে কবিতা লেখা। লিখতে গিয়ে কবিতায় আনলেন শৈশবের অমল স্মৃতি, আনলেন আজকের বাজার সংস্কৃতির জমানায় বিক্রি হয়ে যাওয়া মানুষ, প্রোমোটাররাজ, আনলেন অভিনেতা জীবনের অভিজ্ঞতা, আর অবশ্যই প্রেম। |
|
চিরঞ্জিতের আঁকা আদিবাসী মেয়ে। |
দেখা হতে, চিরঞ্জিৎ সিডিতে থাকবে এমন কয়েকটি স্বরচিত কবিতার অংশও শোনালেন... “চোখ ফেরাতেই শূন্য সিটে
হন্যে হয়ে ফেরা
কোথায় গেল? কোথায় গেল?
রাতজাগানী?”
কখনও নিজের অভিনেতা জীবনকে তির্যক সমালোচনা করে লিখেছেন
“পাল্টে যদি যেত পাশা
হতাম যদি গ্রাম্য চাষা
সাঙ্গ হতো ফসল বোনা
দু’হাত ভরে ফলত সোনা
দেশের মুখে অন্ন দিতে নাইকো অবসর
জীবন নাটক, আসল নায়ক
তৃপ্ত নটবর।”
‘মাটির বুকের মাঝে’, ‘শুধু তোমার বাণী’, ‘যে ধ্রুবপদ দিয়েছ বাঁধি’, ‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে’র মতো গান দরাজ গলায় শোনা যাবে চিরঞ্জিতের এই সংকলনে। কবিতা আর গানের পাশাপাশি চলেছে নানা মাধ্যমে তাঁর ছবি আঁকাও। কিছু কিছু ছবিতে নতুন টেকনিকে দিয়েছেন থ্রিডি এফেক্ট।
বাড়ির দেওয়াল জুড়ে তাঁর নিজেরই আঁকা ছবি। রাজনৈতিক জীবন তাঁকে বড় পর্দার তারকা গ্ল্যামার ছেড়ে মানুষের কাছাকাছি আসার সুযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। “এত মানুষের সঙ্গে মেলামেশা, কত রকম জীবন চার দিকে। সব দেখতে দেখতে এ সব কথা লিখে যেতে ইচ্ছে করে। ছবিতে, কবিতায় প্রতিনিয়ত ধরতে চাইছি সেই জীবনকে, মানুষকে,” এই কথা বলে আইফোন খুলে দেখালেন তাঁর আঁকা এক আদিবাসী মেয়ের ছবি।
দূরে সবুজ গাছের সারি। যেন জঙ্গলমহলের কোনও মেয়ে। তার হাত থেকে উড়ে যাচ্ছে শান্তির সাদা পায়রা। মুখে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। |
|
|
|
|
|