ঘরে ঢুকে ছাত্রীকে খুন করে যুবকের আত্মহত্যার চেষ্টা
প্রাক্তন ‘প্রেমিকা’কে তারই বাড়িতে ঢুকে গুলি করে, একই পিস্তল থেকে নিজেরও মাথার পাশে গুলি চালিয়ে দিল এক তরুণ। শনিবার পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ির স্কুলপাড়ার ঘটনা। মারাত্মক জখম অবস্থায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হয়ে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান গৌড় মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মৌসুমী মিশ্র (১৯)। জখম তরুণটিকেও কলকাতায় পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ রাউন্ড তাজা কার্তুজ-সহ একটি দেশি পিস্তল ও তিন রাউন্ড খালি কার্তুজের খোল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মালদহের এসপি কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “ওই তরুণ-তরুণীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তার প্রমাণ মিলেছে। মেয়েটি ছেলেটিকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। তাই ১৯ বছরের ওই তরুণ মেয়েটিকে গুলি করার পরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে আমাদের ধারণা। তবে ছেলেটি কী ভাবে দেশি পিস্তল (৭ এমএম) ও তাজা গুলি পেল, তা দেখা হচ্ছে।”
মৌসুমী মিশ্র, মৌসুমীর মা জুলি ও বাবা মদন মিশ্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৌসুমীর বাবা মদন মিশ্র ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশে জওয়ান পদে কর্মরত থাকায় দীর্ঘদিন মালদহের বাইরে ছিলেন। সেই সময় মৌসুমীর মা জুলিদেবী ছেলে শুভমকে নিয়ে পুরাতন মালদহের স্কুলপাড়ার বাড়িতে থাকতেন। কালিয়াচকের বাঙিটোলায় মামারবাড়িতে থেকে বাঙিটোলা হাইস্কুলে পড়াশুনো করতেন মৌসুমী।
সেখানেই তাঁর সঙ্গে ওই তরুণের বন্ধুত্ব হয়। বছর তিনেক আগে অবসরের পরে মদনবাবু মালদহে চলে আসেন। এ বছর বাঙিটোলা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে মৌসুমী গৌড় মহাবিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। মালদহের বাড়ি থেকেই তিনি কলেজে যাতায়াত করতেন। তরুণটি অবশ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতে পারেননি।
পুলিশ সূত্রের খবর, স্কুলপাড়ার বাড়িতে আসার পর থেকেই মৌসুমী এবং ওই তরুণের মধ্যে ‘দূরত্ব’ বাড়ে। সম্প্রতি মৌসুমীর পরিজনেরা ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর বিয়ে ঠিক করেন। জুলিদেবীর অভিযোগ, “বিয়ে ঠিক হয়েছে জানার পরই ছেলেটি কলেজ যাওয়ার পথে মেয়েকে বিরক্ত করত। কলেজের পথে ছেলেটা হামলা করতে পারে এই ভয়ে প্রায় এক মাস মেয়ে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল।”
হামলার পরে তখনও বেঁচে মৌসুমী মিশ্র। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বাঙিটোলা থেকে একাই মালদহে আসে ওই যুবক। এরপর সে মঙ্গলবাড়ির স্কুলপাড়ায় জি কে হাইস্কুলের পাশে মৌসুমীর বাড়িতে চড়াও হয়। বাড়ির একতলায় তখন মৌসুমীর বাবা ও মা সব্জি কাটছিলেন। কলিংবেল শুনে জুলিদেবী দরজা খুলতেই ওই যুবক ঘরে ঢুকে পড়ে।
মদনবাবুর দাবি, কোমর থেকে পিস্তল বের করে তাঁর মাথায় ঠেকিয়ে বলে, “মৌসুমীর সঙ্গে দু’মিনিট কথা বলব। মৌসুমীর সঙ্গে কথা বলতে না দিলে সবাইকে গুলি করে দেব।”
তা শুনে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মৌসুমী বলেন, “বাবা-মা, ওকে বাধা দিও না। ও কী বলতে চাইছে আমি শুনি। না হলে ও তোমাদের মেরে ফেলবে।” মৌসুমীর ভাই অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র শুভম বলে, “দিদির মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ও দোতলায় একটা ঘরে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। দু’মিনিটের মধ্যেই পর পর তিনটি গুলির শব্দ শুনি। ছুটে গিয়ে দেখি, দরজা বন্ধ। ভিতর থেকে গোঙানির শব্দ আসছে।”
মৌসুমীর পরিজনদের চিত্‌কারে পড়শিরা ছুটে আসেন। দরজা ভাঙতে দেখা যায়, মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় মৌসুমী ও ওই তরুণ পড়ে রয়েছেন। একটি গুলি বিঁধেছে দেওয়ালে। ঘরের মেঝেতে পিস্তল পড়ে রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, পিস্তলের গুলি মৌসুমীর মাথার বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। নিজের মাথার ডান দিকে গুলি করেন ওই তরুণ। বাঁ দিক দিয়ে সেই গুলি বেরিয়ে গিয়েছে।
জুলিদেবীর আক্ষেপ, “আমার মেয়ে ওই ছেলেটির সঙ্গে বন্ধু হিসেবে মিশত। মেয়েকে কলেজ পাঠানো বন্ধ করেও রক্ষা করতে পারলাম না।”
অভিযুক্ত যুবকের বাবা সাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা, বিদ্যুত্‌ বণ্টন সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তিনি বলেন, “ছেলে ছোটবেলা থেকে ওই মেয়েটিকে ভালবাসত। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতে না পারার পর থেকে ছেলে বাড়িতেই ছিল। মেয়েটি অন্যকে বিয়ে করতে রাজি হওয়ায় ও খেপে যায়। মেয়েটি যদি ওকে বিয়ে করতে রাজি হলে হয়তো এ ঘটনা ঘটত না!”

ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.