ওভারি ক্যানসার রোধে আশা দিচ্ছে কলকাতা
লনায়কের গোত্র জানা ছিল। জানা ছিল না তার ঠিকুজি-কুলুজি।
এ বার সেই রহস্যও উন্মোচিত করা গিয়েছে বলে দাবি করলেন কলকাতারই কিছু বিজ্ঞানী।
ফলে ডিম্বাশয়ের (ওভারিয়ান) ক্যানসারের বিরুদ্ধে চিকিৎসা-বিজ্ঞানের লড়াইটা আরও সুসংবদ্ধ হওয়ার আশা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণায় ইতিমধ্যে প্রমাণিত যে, এক জাতীয় প্রোটিনই নিরীহ কোনও টিউমারকে প্রাণঘাতী করে তুলতে পারে। কিন্তু কী সেই প্রোটিন, তার পরিচয় এ যাবৎ মেলেনি। এখন কলকাতার এক দল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের জন্য দায়ী এমনই এক ‘দুষ্টু’ প্রোটিনকে তাঁরা চিহ্নিত করতে পেরেছেন। মহিলাদের শরীরে এফজিএফ-১৬ নামে ওই প্রোটিনের উপস্থিতির আঁচ আগাম কী ভাবে মিলতে পারে, তা নিয়ে ওঁরা পরবর্তী ধাপের গবেষণাও শুরু করে দিয়েছেন। তাঁদের আশা, এতে সাফল্য মিললে ডিম্বাশয়ে ক্যানসারের আগ্রাসনে অনেকটা রাশ পরানো যাবে।
মার্কিন বিজ্ঞান সংস্থা ‘আমেরিকান সোসাইটি ফর বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিক্যুলার বায়োলজি’-র পত্রিকা ‘দ্য জার্নাল অফ বায়োলজিক্যাল কেমিস্ট্রি’-তে প্রকাশিত হয়েছে কলকাতার বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি। গবেষকদলের সদস্যেরা হলেন এসএসকেএমের এন্ডোক্রিনোলজি-র ডাক্তার সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, উত্তরা চট্টোপাধ্যায় ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি’র বিজ্ঞানী শিবশঙ্কর রায় ও মৈত্রী বসু।
গবেষণার দাবি
রোগের পিছনে এফজিএফ-১৬ প্রোটিন
কী ভূমিকা ডিম্বাশয়ে ক্যানসার ছড়ানোর প্রবণতা বাড়ায়
এ বার লক্ষ্য গোড়ায় রোগ ধরতে রক্তে এফজিএফ-১৬ পরিমাপ
এখন নির্ণয়ের পথ সিএ-১২৫ রক্তপরীক্ষা, ইউএসজি, সিটি স্ক্যান
তাতে সমস্যা দেরিতে ধরা পড়ে। তখন কার্যত কিছু করার থাকে না
চিকিৎসা-বিজ্ঞানে এই গবেষণার তাৎপর্য কতটা? সতীনাথবাবু বলেন, “এফজিএফ-১৬ প্রোটিন কী ভাবে সাধারণ টিউমারকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারে পরিণত করে, আমরা দেখিয়েছি। ওভারির টিউমারের মধ্যেই প্রোটিনটা পাওয়া যায়। তা বেশি পরিমাণে তৈরি হলে টিউমার দ্রুত ছড়াতে থাকে।” শিবশঙ্করবাবু জানাচ্ছেন, “এফজিএফ-১৬ তো বটেই, তাকে নানা ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে যে সব বিষয় (ফ্যাক্টর), সেগুলোকেও আমরা চিহ্নিত করেছি। ফলে ওভারিয়ান ক্যানসারের উৎস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।”
সতীনাথবাবুদের দাবি, তাঁরা মানুষের ডিম্বাশয়ের কোষ সংগ্রহ করেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। যার সুবাদে গবেষণার ফল সম্পর্কে সংশয়ের অবকাশ নেই। এবং এ বার তাঁদের লক্ষ্য, ডিম্বাশয়ে ক্যানসার বাসা বাঁধার ‘ঝুঁকি’ নির্ধারণের উপায় আবিষ্কার। “আমরা চাইছি রক্তে ওই গ্রোথ ফ্যাক্টরের মাত্রা পরিমাপের পথ বার করতে। সম্ভব হলে মারণ রোগটি প্রতিরোধের পথে অনেকটা এগোনো যাবে।” জানাচ্ছেন শিবশঙ্করবাবু।
বস্তুত ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের সময়টাই যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষজ্ঞেরা বারবার তা জানিয়েছেন। স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে কি না জানতে বিআরসিএ-১ ও বিআরসিএ-২ পরীক্ষা রয়েছে। জিনের ওই পরীক্ষার মাধ্যমে বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসারের, অল্প কিছু ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের সম্ভাবনার আভাস মিলতে পারে। প্রসঙ্গত, হলিউডের তারকা অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এর মাধ্যমেই তাঁর স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির কথা জেনে ম্যাসেকটমির সিদ্ধান্ত নেন। তবে চিকিৎসকদের বক্তব্য, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার নির্ণয়ে এটা খুব কার্যকর নয়। আবার সিএ-১২৫ রক্ত পরীক্ষায় ওভারিতে ক্যানসারের উপস্থিতি মালুম হয় ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে রোগ যথেষ্ট ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ইতিমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে, ২০২০ নাগাদ এ দেশে ক্যানসার মহামারির চেহারা নেবে। তখন প্রতি পরিবারে অন্তত এক জন ক্যানসার-রোগীর হদিস মিলতে পারে। মহিলাদের মধ্যে জরায়ু-মুখ (সার্ভিক্যাল) ও স্তন ক্যানসারের হার সর্বাধিক। তাল মিলিয়ে দাপট বাড়াচ্ছে ডিম্বাশয়ের ক্যানসার, যার চিকিৎসার মূল সমস্যাই হল, এটা টের পাওয়া যায় অনেক দেরিতে। ডেরা বাঁধার বহু পরে ‘নিঃশব্দ ঘাতক’টির অস্তিত্ব জানান দেয় শরীর। বলিউড অভিনেত্রী মণীষা কৈরালাও ঘনিষ্ট মহলে জানিয়েছিলেন, এমন একটা রোগ যে দেহে ছড়িয়েছে, সেটা তিনি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি!
ডাক্তারেরাও বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ-ই হয়। অসহায়তার সুর তাঁদের কণ্ঠে। “হামেশা দেখা যায়, পেটে জল জমে যাওয়ার পরে ক্যানসার ধরা পড়ল।” আক্ষেপ করছেন স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর। ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “ওভারিয়ান ক্যানসারের চিকিৎসা করতে গিয়ে গোড়াতেই আমরা যেটা বুঝতে পারি, তা হল, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। খুব হতাশ লাগে।” ক্যানসার সার্জন গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রথম অবস্থায় ওভারিয়ান ক্যানসার ধরার ব্যবস্থা নেই। উপসর্গগুলোও সব সময়ে স্পষ্ট নয়। পেট ফুলে যাওয়া, পেটে জল জমা, তলপেটে ব্যথা, খিদে না-হওয়া, অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা মেনোপজের পরেও রক্তপাত হলে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে হয়তো ধরা পড়ল। কিংবা অন্য কারণে আলট্রাসোনোগ্রাফি করাতে গিয়ে দেখা গেল, ওভারিতে টিউমার!”
তাই কলকাতার গবেষণা-সংবাদে ওঁরাও আশান্বিত। “প্রোটিনটির উপস্থিতি আগেভাগে জানা গেলে বহু মহিলা সাক্ষাৎ মৃত্যু এড়াতে পারবেন।” বলছেন সুবীরবাবু। গৌতমবাবুর মন্তব্য, “এই ক্যানসারের উৎস জানা গেলে তা চিকিৎসাতেও নতুন দিশা দেখাতে পারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.