জন্মের আগেই তার মা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন অনেক দূরে। হয়তো অন্য কোনও জগতে। কিন্তু তার জন্য রেখে গিয়েছেন অনেক স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন নিজের প্রিয় বান্ধবী আর স্বামীর উপর। তাঁদের চোখ দিয়েই তার মাকে চিনে নেবে ছোট্ট মেয়েটি।
শারীরিক জটিলতার কারণে গর্ভে সন্তান ধারণ করতে পারবে না রিয়া। বন্ধুর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে হাত বাড়ালেন সিয়া। ছোট্ট বেলার বন্ধুকে নিজের গর্ভ ভাড়া দিলেন। অনেক বাধা-বিঘ্ন পার হয়ে শেষ পর্যন্ত রিয়ার মেয়ের জন্ম দিলেন সিয়া। ২০০১ সালে সুস্মিতা-তব্বু অভিনীত ফিলহাল ছবিটা যখন মুক্তি পেয়েছিল তখনও সারোগেসি বা গর্ভ ধারণের বিষয়টা তেমন প্রচলিত ছিল না।
এর পর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। এত বছর পরে অনেকটা ফিলহালের মতোই ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন ছোট্টবেলার দুই বান্ধবী লরা আর কারা। এ বার ঘটনাস্থল আমেরিকার আইওয়া।
ক্যানসারে আক্রান্ত বান্ধবীর সন্তান নিজের গর্ভে ধারণ করেছিলেন কারা। কিন্তু সেই সন্তানের জন্ম দেখে যেতে পারেননি লরা। তাঁর মৃত্যুর চার মাস পরে এই নভেম্বরে এক সুস্থ মেয়ের জন্ম দিলেন কারা। নাম ক্যারেলিন ইওহো। এখন বাবা নেটের কোলে চেপে দিব্যি সময় কাটছে ক্যারেলিনের। |
সময়টা ২০০৮। জিম ইনস্ট্রাক্টর বছর তিরিশের লরা ইওহো এক দিন হঠাৎই অজ্ঞান হয়ে যান। চিকিৎসকেরা জানান লরা মস্তিষ্কের ক্যানসারে আক্রান্ত। তার কয়েক দিন আগেই লরার সঙ্গে ওই জিমেই কর্মরত নেট-এর এনগেজমেন্ট হয়েছিল। সব কিছু জানা সত্ত্বেও লরা আর নেট বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ের পর পরই শুরু হয় লরার ক্যানসারের চিকিৎসা। প্রথম থেকেই লরা চাইতেন তিনি মা হবেন। তাই নিজের ডিম্বাণু সংরক্ষিত করে রাখেন। এ দিকে যত সময় যাচ্ছিল লরার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। ছোট্টবেলার বান্ধবীর এই অবস্থা দেখে আর বসে থাকতে পারেননি কারা স্টেটসন। তাঁর নিজের দু’টি সন্তান আছে। কিন্তু লরার শেষ ইচ্ছে পূর্ণ করতে গর্ভ ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কৃত্রিম উপায়ে লরার সংরক্ষিত ডিম্বাণু আর নেটের শুক্রাণু নিয়ে গবেষণাগারে ভ্রূণের জন্ম দেন চিকিসকেরা। সেই ভ্রূণ কারার গর্ভে স্থাপন করা হয়।
নিজের সন্তানকে এক বার দেখে যাবে বলে প্রাণপণে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছিলেন লরা। এক বার অস্ত্রোপচার করে লরার মস্তিষ্কের টিউমারটা বাদ দেওয়া পর্যন্ত হয়। কিন্তু ফের ফিরে আসে টিউমার। শেষে হার মানলেন লরা। ২৩ জুলাই লরার মৃত্যু হয়। তার চার মাস পরে ২৬ নভেম্বর এক সুস্থ মেয়ের জন্ম দেন কারা। লরা আর নেটের মেয়ে ক্যারেলিন।
এই খবর জানাজানি হতেই ড্যানিয়েল ফিনে নামে এক সাংবাদিক ছোট্ট ক্যারেলিনের উদ্দেশে খোলা চিঠি লেখেন সংবাদপত্রে। “তুমি এখন খুব ছোট্ট। আমার লেখা চিঠির মানে বুঝবে না। কিন্তু বড় হয়ে যখন এই চিঠি পড়বে বুঝবে এই পৃথিবীটা এখনও কত ভাল জিনিস আর ভালবাসায় পূর্ণ” চিঠিটার শুরু এ ভাবেই। |
নেটের বাবা রবার্ট পেশায় চিকিৎসক। তাঁর কথায়, “সবাই ছোটবেলায় তার বাবাকে দেখেই অনুপ্রাণিত হয়। আর আমি হই আমার ছেলেকে দেখে। ওর ভালবাসা দেখে।” আর নেটের কথায়, “জানেন অনেক চেষ্টা করেছিল লরা। একটি বার নিজের সন্তানকে দেখতে। এখন ক্যারেলিনকে ছুঁয়ে, ওর হাসি দেখে আমি লরাকে অনুভব করি। আর কাঁদতে পারি না। মনে হয় বউ তো এটাই চেয়েছিল। আমাকে খুশি দেখতে।”
ক্যারেলিনের জন্মের পর প্রথম কিছু দিন কারার বাড়িতেই ছিলেন নেট। কী ভাবে ওকে সামলাবে সেটা জানাতে। এখন ক্যারেলিনকে দুধ খাইয়ে, ঘুম পাড়িয়ে, আর সময় মতো ন্যাপি বদলে সময় কাটছে নেটের। মাঝে মধ্যেই ক্যারেলিনকে নিয়ে জিমে চলে যান নেট। যেখানে প্রথম লরার সঙ্গে দেখা। প্রথম প্রেম। লরার সঙ্গে বিভিন্ন খুশির মুহূর্তের ছবি নিয়ে একটা বড় অ্যালবামও তৈরি করেছেন নেট। তাঁর আশা এগুলো দেখে আর মায়ের গল্প শুনেই এক দিন নিশ্চয়ই মাকে চিনবে ক্যারেলিন। |