মেয়েদের স্কুল গড়ছেন স্বনির্ভর সদস্যেরা
শটা মুরগির খাবারের জন্য মাসে কত খরচ? কিংবা ব্যাঙ্কের ঋণ শোধের জন্য মাসে মাসে কত টাকা দিতে হবে? এমনই নানা হিসেব কষতে গিয়ে নাজেহাল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা। অনেকের যে অক্ষরজ্ঞানটুকুও নেই। বাড়ির পুরুষরাও খেতে-খামারের কাজে বাইরে থাকেন। সমস্যায় পড়েই নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝেছিলেন পুরুলিয়ার মানবাজার ১ ব্লকের চাঁদড়া পায়রাচালি পঞ্চায়েতের ৩৪টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পাঁচশো সদস্যা। আড়াই বছর ধরে মন্ত্রী, আমলার কাছে তদ্বির করে তাঁরা সেই স্কুলের অনুমোদন আদায় করেছেন। আজ রবিবার, সেই ‘পায়রাচালি আদিবাসী জুনিয়ার গালর্স হাইস্কুলে’র শিলান্যাস হচ্ছে।
জেলার বিধায়ক তথা স্বনির্ভর গোষ্ঠী দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “শুধু আর্থিক ভাবে স্বনির্ভরতাই নয়, গোষ্ঠীর সদস্যারা মেয়েদের শিক্ষার বিকাশে যে উদ্যোগী হয়েছেন তা দৃষ্টান্ত। ওঁরা আমার কাছেও স্কুলের দাবি জানিয়েছিলেন। ওই স্কুল যাতে দ্রুত চালু হয়, সে জন্য সবরকম সহযোগিতা করব।” জেলা স্কুল পরিদর্শক রাধারানি মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্য শিক্ষা দফতর ওই স্কুলে আপাতত পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ানোর অনুমতি দিয়েছে। মানবাজার ১ বিডিও সায়ক দেব বলেন, “স্কুলের জন্য জমি মিলে গিয়েছে। সেখানেই শিলান্যাস হচ্ছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, মানবাজার ১ ব্লকে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ হলেও মহিলা সাক্ষরতার হার মাত্র ৩৬ শতাংশ (পুরুলিয়া জেলায় মেয়েদের শিক্ষার হার ৩৭ শতাংশ)। মানবাজার ১ ব্লকে মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশ তফসিলি সম্প্রদায়ের। চাঁদড়া পায়রাচালি পঞ্চায়েতের শ্রীরামঘুটু গ্রামের ‘সিধুকানু মহিলা সমিতি’-র দলনেত্রী বেলমণি টুডু, পায়রাচালির বীণাপাণি মিশ্র, রেখা দাসদের অভিজ্ঞতা, “লেখাপড়া শিখতে পারিনি বলে স্বনির্ভর দল চালাতে গিয়ে গোষ্ঠীর হিসাব রাখা, ঋণের টাকা বিলি-আদায় সব কাজে পুরুষদের সাহায্য ছাড়া আমরা এগোতে পারছি না।” মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা নীলিমা মান্ডি বলেন, “এই এলাকায় কো-এড স্কুলে মেয়েদের পড়ানোর মানসিকতা অনেকের নেই। ব্লকের একমাত্র মেয়েদের হাইস্কুল ৯ কিলোমিটার দূরে মানবাজার সদরে। কিন্তু অত দূরে মেয়েদের পড়তে পাঠানোর ঝুঁকি কে নেবে? আবার আমাদের মেয়েদের লেখাপড়া না শেখাতে পারলে ওরাও ভবিষ্যতে নানা সমস্যায় পড়বে। তাই এখানেই আমরা মেয়েদের স্কুল খোলার জন্য উদ্যোগী হই।” ওঁদের সঙ্গে স্কুলের দাবিতে জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিস থেকে বিকাশ ভবনে যাতায়াত শুরু করেন পায়রাচালি গ্রামের সমাজকর্মী শৈলেন মিশ্র। এই ব্লকের ৩৪টি গোষ্ঠীর প্রায় পাঁচশো সদস্যা ২০১১ সালের জুন মাসে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরে গণদরখাস্ত পাঠান। শ্রীরামঘুটু গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা তথা চাঁদড়া পায়রাচালি পঞ্চায়েতের প্রধান সুচিত্রা মুর্মু, বনকাটি গ্রামের গান্ধারী মাহাতোরা বলেন, “স্কুলের জন্য অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করেছি। এখন সেই স্কুল হচ্ছে দেখে অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি।” মানবাজারের বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু বলেন, “ওই মহিলারা স্কুলের জন্য কম চেষ্টা করেননি। তাঁদের পরিশ্রম সার্থক হল দেখে ভাল লাগছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.